রাঙ্গুনিয়া
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের সদর জেলা- চট্টগ্রাম জেলা  অন্তর্গত একটি উপজেলা।

রাঙ্গুনিয়া নামের উৎপত্তি নিয়ে নানা মতবাদ আছে। যেমন-

ভৌগোলিক অবস্থান: ২২°১৮'- ২২°৩৭' উত্তর অক্ষাংশ ৯১°৫৮'-৯২°০৪' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩২ কিলোমিটার। এ উপজেলার দক্ষিণে পটিয়া উপজেলা, চন্দনাইশ উপজেলা ও বান্দরবান  জেলার বান্দরবান সদর উপজেলা, পশ্চিমে বোয়ালখালী উপজেলা ও রাউজান উপজেলা, উত্তরে রাঙ্গামাটি  জেলার কাউখালি,উপজেলা ও পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই  ও রাজস্থল উপজেলা অবস্থিত।

আয়তন: ৩৪৭.৭২ বর্গকিলোমিটার।

নদনদী ও খাল বিল: এই উপজেলার প্রধান নদী
কর্ণফুলি ইছামতি  এ ছাড়া এই জেলায় রয়েছে বহু পাহাড়ি খাল।

জনসংখ্যা ও জাতি সত্তা:  ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লক্ষ ৪০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ১,৩৯,০২৮ জন এবং মহিলা ২,০০,৯৭২ জন। এ উপজেলার জনসংখ্যার মধ্যে ৭৮% মুসলিম, ১৫% হিন্দু, ৬% বৌদ্ধ এবং ১% খ্রিস্টান রয়েছে। এ উপজেলায় বিভিন্ন উপজাতি বিশেষতঃ চাকমা, মারমা গোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে, তারাও মূলত বৌদ্ধ ধর্মানুসারী। ভোটারের সংখ্যা ২,৪০,৭১৫ জন। তার মধ্যে পুরুষ ১,২৪,২৬৩ জন ও মহিলা ১,১৬,৪৫২ জন।

যোগাযোগ: রাঙ্গুনিয়া উপজেলার প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক পথ। তবে নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে এ উপজেলার যোগাযোগের প্রধান দুইটি সড়কের মধ্যে কাপ্তাই সড়ক। এই পথটি  চট্টগ্রাম শহর থেকে উপজেলার পোমরা ইউনিয়ন, পৌরসভা, মরিয়মনগর ইউনিয়ন, চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়ন ও হোছনাবাদ ইউনিয়ন অতিক্রম করে কাপ্তাই পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। অন্য পথটি হলো রাঙ্গামাটি সড়ক। এই সড়কটি এই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়ন ও ইসলামপুর ইউনিয়ন অতিক্রম করে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় কাপ্তাই সড়কের দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার। উপজেলার অন্যতম প্রধান সড়কগুলো হল রোয়াজারহাট-রাণীরহাট সংযোগ সড়ক, মরিয়মনগর-রাণীরহাট সংযোগ সড়ক, গোডাউন-পদুয়া সড়ক, গোডাউন-বোয়ালখালী সংযোগ সড়ক। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়ক রয়েছে। কাপ্তাই ও রাঙ্গামাটি সড়কে সব ধরণের যানবাহন চলাচল করে। অন্যান্য সড়কসমূহের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম সিএনজি চালিত অটোরিক্সা।

শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় স্বাক্ষরতার হার ৭০.৭৫%। এ উপজেলায় ১টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ১টি কামিল মাদ্রাসা, ৬টি ডিগ্রী কলেজ, ৫টি ফাজিল মাদ্রাসা, ১টি আলিম মাদ্রাসা, ২টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ (বালিকা), ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯টি দাখিল মাদ্রাসা (১টি বালিকা সহ), ৪টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি কওমী মাদ্রাসা, ১৯টি অন্যান্য মাদ্রাসা ও ৫২টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে।

কৃষি: প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, তুলা, আদা, হলুদ, মরিচ, শাকসবজি, গম, সরিষা।
ফল: আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জাম, পেয়ারা, আনারস, পেঁপে।
 
প্রশাসন:  বর্তমানে এই উপজেলাটিতে রয়েছে ১টি পৌরসভা এবং ১৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। এগুলো হলো- রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা ও রাজানগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, মরিয়মনগর, পারুয়া, পোমরা, বেতাগী, সরফভাটা, শিলক, পদুয়া, চন্দ্রঘোনা কদমতলী, কোদালা, ইসলামপুর, দক্ষিণ রাজানগর ও লালানগর।

ইতিহাস: ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চাকমা রাজন্যবর্গের শাসনাধীন ছিল। এই রাজন্যবর্গের ভিতরে ছিলেন- শুকদেব রায়, শেরদৌলত খাঁ, জানবক্স খাঁ, টব্বর খাঁ, জব্বর খাঁ, ধরম বক্স খাঁ, রাণী কালীন্দি, হরিশচন্দ্র রায় প্রমুখ। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে চাকমা রাজা হরিশচন্দ্র রাজধানী রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর থেকে রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তরিত করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশে চলে আসে। পাকিস্তান শাসনামলে এই অঞ্চল চট্টগ্রাম জেলার অংশ ছিল। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি পটিয়া এবং রাউজান থানার কিছু অংশ নিয়ে রাঙ্গুনিয়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশের স্বাধীন যুদ্ধের সময়, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত, এই উপজেলাতেও  ব্যাপক গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এই উপজেলার রাণীরহাট, রোয়াজারহাট ও রাঙ্গুনিয়ায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে রাঙ্গুনিয়াকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

নির্বাচনী আসন: ২৮৪ চট্টগ্রাম-৭।


তথ্যসূত্রঃ