গুপ্তলিপি
বানান বিশ্লেষণ: গু+উ+প্+ত্+অ+ল্+ই+প্+ই
উচ্চারণ:
gup.t̪o.li.pi (গুপ্.তো.লি.পি)
শব্দ-উৎস: সংস্কৃত কুষাণ> বাংলা গুপ্ত+ সংস্কৃত গুপ্ত>বাংলা লিপি
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: গুপ্ত নামক লিপি/ কর্মধারয় সমাস
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { লিখন পদ্ধতি | রচনা | লিখিত যোগাযোগ | যোগাযোগ | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা | }

প্রাচীন ভারতের লিপি বিশেষ। ১০০-৩০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে ব্রাহ্মীলিপির ক্রমবিবর্তনে সৃষ্টি হয়েছিল কুষাণলিপি। দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন ও উত্তর আর্যাবর্তে কুষাণ সাম্রাজ্য পতনের পর খ্রিষ্টীয় তৃতীয় ও চতুর্থ শতকে গুপ্তবংশীয় রাজারা ভারতে একটি বিশাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শ্রীগুপ্ত (২৪০-২৮০ খ্রিষ্টাব্দ) -কে এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিবেচনা করা হয়।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের আমলে (২৪০ থেকে ৫১০ খ্রিষ্টাব্দ) পূর্বভারতে কুষাণলিপির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে । এই যুগে প্রাকৃত ভাষার পরিবর্তে সংস্কৃত রাষ্ট্রভাষায় পরিণত হয়। এর ফলে সংস্কৃত ভাষার চর্চা বৃদ্ধি পায়। এই সময় থেকে প্রস্তরলিপির অবসান ঘটে। নতুন প্রযুক্তিতে তাম্রলিপির প্রচলন হয়। তামার পাত হাল্কা এবং বহনযোগ্য বলে, এই লিখন পদ্ধতির ফলে গ্রন্থ এবং গ্রন্থাগারের সূচনা ঘটায়। এছাড়া ভুর্জপত্র ও তালপত্রে লেখার সূচনাও এই সময় ঘটে। ফলে আগের আমলের পাথরে গায়ে লেখার কারণে যে রূপ লিপিশৈলী ছিল, এই যুগে লেখার মাধ্যমের কারণে বেশ পরিবর্তিত হয়েছিল।
ফলে
৪০০ থেকে ৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে ভারতবর্ষের গুপ্তবংশীয় রাজাদের রাজত্বকালে, সারা উত্তর ভারতে কুষাণলিপি বিবর্তিত হয়ে যে রূপ পায় তাকেই গুপ্তলিপি বলা হয়। মূলত গুপ্তলিপিটি হলো একটি কল্পিত নাম। গুপ্তরাজাদের আমলে সংস্কৃত ভাষার গ্রন্থাদি এই লিপিতে লেখা হতো। এর নমুনা পাওয়া গেছে মধ্য ভারত এবং মধ্য প্রদেশের বিভিন্ন পাত্রের গায়ে।

 

মূল গুপ্তলিপিতে ছিল ৫টি স্বরবর্ণ এবং ৩২টি ব্যাঞ্জনবর্ণ। এই লিপি লেখা হতো বাম থেকে ডান দিকে। এই মূল লিপি থেকে মোট চারটি লিপি তৈরি হয়েছিল। এই ভাগগুলো হলো  পূর্বাঞ্চলীয়, পশ্চিমাঞ্চলীয়, দক্ষিণাঞ্চলীয় ও মধ্যাঞ্চলীয়। গুপ্তলিপির পরিবর্তন যা ঘটেছিল তা কিছু রেখার হেরফের মাত্র। যেমন গুপ্তবংশীয় রাজা সমুদ্রগুপ্তের সময় এলাহাবাদ অঞ্চলে এই লিপির যে নমুনা পাওয়া গেছে, তাতে হ্রস্ব ইকারের দুটি বিন্দুর আগে একটি রেখা ছিল। দক্ষিণ রীতিতে এই রেখা কিছুটা বক্রতা লাভ করেছিল। নিচে ব্রাহ্মীলিপি থেকে কুষাণলিপি হয়ে গুপ্তলিপির উত্তরণের পর্যায়ক্রমিক কিছু নমুনার দেখানো হলো।
 

  

 


সূত্র :