রুরু
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {ঋষি |  হিন্দু পৌরাণিক সত্তা | ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা | পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিক সত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | কর্মক্ষমতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন  | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে ঋষি বিশেষ।


প্রমিতির ঔরসে
ঘৃতাচী নামক অপ্সরার গর্ভে রুরু জন্মগ্রহণ করেন। রুরু রাজা হওয়ার পর বিশ্বাবসুর কন্যা প্রমদ্বরাকে বিবাহ করেন। রুরু ঔরসে প্রমদ্বরার গর্ভে শুনক নামক এক পুত্রের জন্ম হয়।

উল্লেখ্য গন্ধর্বরাজ বিশ্বাবসুর সাথে অপ্সরা মেনকা মিলনের ফলে প্রমদ্বরার জন্ম হয়। জন্মকালেই মেনকা কন্যাকে নির্জনস্থানে পরিত্যাগ করে চলে যান। এরপর স্থূলকেশ নামক এক ঋষি এই কন্যাকে নিজের আশ্রমে প্রতিপালন করেন। একবার রুরু প্রমদ্বরাকে দেখে মুগ্ধ হন এবং তাঁকে বিবাহ করার জন্য আকুল হয়ে পড়েন। এরপর তিনি তাঁর বন্ধুদের মাধ্যমে এই পছন্দের কথা পিতা প্রমিতির কাছে উত্থাপন করেন। এরপর প্রমিতি এবং স্থূলকেশ এই বিবাহে সম্মতি জানান।

কিন্তু এই বিবাহের সামান্য কয়েক দিন আগে, প্রমদ্বরা তাঁর সখীদের সাথে খেলা করার সময় একটি সাপ তাঁকে দংশন করে। ফলে প্রমদ্বরা অচিরেই হতচেতন হয়ে পড়েন। এরপর রুরু প্রমদ্বরার জন্য বনে গিয়ে বিলাপ করতে থাকেন। দেবতারা রুরুর এই বিলাপ শুনে একজন দেবদূতকে তাঁর কাছে পাঠান। দূত রুরুকে গিয়ে বলেন যে, প্রমদ্বরার আয়ু শেষ হয়ে গেছে। সেই কারণে রুরু যদি নিজের জীবনের অর্ধেক প্রমদ্বরাকে দান করেন, তবেই সে জীবিত হয়ে উঠবে। এরপর ইনি দেবদূতের সাথে যমের কাছে যান এবং নিজের অর্ধেক-জীবন প্রমদ্বরাকে দান করেন। এরপর রুরু প্রমদ্বরার বিবাহ হয়।

এরপর তিনি সর্প বংশ ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা করেন। এবং নির্বিচারে সর্প হত্যা শুরু করেন। একদিন তিনি এক গভীর বনে এক ডুণ্ডুভ জাতির একটি জরাজীর্ণ সাপ দেখে হত্যা করার উদ্যোগ নেন। ডুণ্ডুভ সকাতরে রুরুকে বলেন যে, বিনা কারণে রুরু তাঁকে হত্যা করছেন কেন। উত্তরে রুরু তাঁর ক্রোধের কারণ ডুণ্ডুভকে বলেন।

 

এবার ডুণ্ডুভ নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন যে, তিনি সহস্রপাদ নামক ঋষি। তাঁর বন্ধু খগমের অভিশাপে সাপে পরিণত হয়েছেন। পরে বন্ধুর কাছে এই অভিশাপ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করতে থাকলে, বন্ধু তাঁকে বলেন যে- প্রমিতির পুত্র রুরুর দেখা পেলেই তিনি শাপমুক্ত হবেন। এরপরে ডুণ্ডুভি অভিশাপ মুক্ত হয়ে নিজস্বরূপ লাভ করেন। এরপর তিনি জনমেজয় কর্তৃক সর্পনিধন যজ্ঞের বিষয় ব্রাহ্মণদের কাছে জেনে নেওয়ার কথা বলে অদৃশ্য হয়ে যান। পরে গৃহে ফিরে তাঁর পিতা প্রমিতির কাছে বসে রুরু এই বিষয়ে অবগত হন।
    [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। অষ্টম-নবম অধ্যায়।]