শূন্য
বানান বিশ্লেষণ: শ্+ঊ+ন্+য্+অ
উচ্চারণ:
ʃun.no [শুন্‌.নো]
শব্দ-উৎস: সংস্কৃত শূন্য> বাংলা শূন্য
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: সু =শু (অতিশয়) ঊন=শূন+ য (যৎ)
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা  {মনুষ্য-সৃষ্ট | এককঅংশ | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা | }
অর্থ: কোনো বস্তুকে ধারণ করতে পারে, এমন ধারকে ওই বস্তু নেই। কোনো কিছুর অভাব, রিক্তদশা, অবর্তমান, ফাঁকা, খালি ইত্যাদি অর্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শূন্য হয়। তবে তা ০- শূন্য প্রতীকে ব্যবহার করা পরিবর্তে বর্ণমালায় লিখিত হয়ে থাকে। এই শব্দটি বিশেষ্য বা বিশেষণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন শূন্যহাত, শূন্যস্থান, জনশূন্য ইত্যাদি। 
সমার্থক শব্দাবলি: শূন্য, খালি, ফাঁকা।
উদাহরণ:
১. মানি ব্যাগ শূন্য (টাকা নাই অর্থে)
২. শূন্য কলসি (পানি নাই অর্থে। গুপ্ত সম্পদের বিচারে স্বর্ণমূদ্রা)
৩. পরীক্ষায় বসে দেখি মাথা শুন্য (স্মৃতিবিভ্রাট অর্থে)
৪. শূন্যগর্ভ প্রবন্ধ (সার বস্তু নাই এই অর্থে)
৫. শূন্যদৃষ্টিতে চেয়ে আছে (মনোযোগহীন দৃষ্টিপাত অর্থে)
বিপরীতার্থক শব্দ: ২. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {অঙ্ক | পূর্ণ সংখ্যা| সংখ্যা | সুনির্দিষ্ট পরিমাণ | মৌলিক পরিমাপ | মাপ | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা | }

অর্থ: গণিত শাস্ত্রে রিক্ত অর্থে একটি মান বিশেষ। এটি গণিতে ব্যবহৃত একটি পূর্ণঅঙ্কবাচক চিহ্ন হিসেবে। আধুনিক গণিতে যে ০-মান দশমিক গণিতের সৃষ্টি করেছে- তা ভারতবর্ষে বিকশিত হয়েছিল আর্যভট্ট ( ৪৭৬-৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ ) শূন্যমান বলতে 'খ' ধ্বনি ব্যবহার করেছিলেন। এই বিচারে মহাকাশীয় গোলক বা মণ্ডলকে নাম দেওয়া হয়েছিল খ-মণ্ডল। পরবর্তী সময়ে বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্ত এবং প্রথম ভাস্করের রচনায় শূন্যের বিষয়টি আরও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল বিভিন্ন গাণিতিক ব্যাখ্যার সূত্রে। একসময় এর সঙ্কে হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে বিন্দু। এক্ষেত্রে একটু মোটাসোটা বিন্দু ব্যবহার করা হতো। কালোক্রমে এর বিন্দুর ভিতরে শূন্যতা সৃষ্টি করে শূন্য চিহ্নের সৃষ্টি হয়েছিল।

ভারতীয় শূন্য নামক গাণিতিক চিহ্ন এবং ধারণা প্রথম গ্রহণ করে আরবীয় বিজ্ঞানীরা। পরে তা স্পেন হয়ে ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বে ছাড়িয়ে পড়ে।  নিচে কতিপয় উল্লেখযোগ্য লিখন পদ্ধতিতে শূন্যের জন্য নির্ধারিত চিহ্ন দেখানো হলো-

আরবি  চীন দেবনাগরী থাই বাংলা রোমান
٠ 〇,零 0

বাংলা শূন্য চিহ্নটি ভারতীয় আদ্য বিন্দুচিহ্নর রূপান্তর থেকে গৃহীত হয়েছে।

সংখ্যাতত্ত্বে এর অবস্থা ১ মানের পূর্ববর্তী পূর্ণ অঙ্কমান। ধনাত্মক ১ এর পরে ঋণাত্মক যে অঙ্কমান শুরু হয়, তার পূর্বে ০-এর অবস্থান। এই বিচারে ০ হলো- অ-ধনাত্মক ও অঋণাত্মক অঙ্ক। যেমন
                            -১  ০  +১

০-এর কোন ভগ্নাংশ হয় না। বীজগণিতে এর সাথে যে কোন রাশির যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করলে- ০-এর অবস্থান অনুসারে যে ফলাফলগুলি পাওয়া। তা হলো

n=যে কোন মান হিসাবে
০ +n=n  n+০=n 
০ -n=-n  n-০=n 
´n=০ n´০=০। এই বিচারে-  ০, ০, ০ ইত্যাদি =০
/n=০ n/০= অনির্দেশিত।
n=১  
 

দ্বি-আঙ্কিক পদ্ধতির দুটি অঙ্কের একটি ০, অপরটি ১। এর মূল অবস্থান এককের ঘর কিন্তু মানশূন্য। কিন্তু যে কোন অঙ্কের ডানে এই চিহ্ন বসলে তা ভিন্ন ভিন্ন মান প্রদান করে। যেমন

দ্বি-আঙ্কিক পদ্ধতি : ১০ = অষ্টক =২, দশমিক ২, ষোড়শাঙ্কিক=২
অষ্টক ১০= দশমিক=৯, ষোড়শাঙ্কিক=৯
দশমিক=১০, ষোড়শাঙ্কিক=১৭
মূলত গণনার ক্রমধারায় প্রতিটি অঙ্কের সাথে ১ যোগ করলে পরবর্তী অঙ্ক পাওয়া যায়। গণপদ্ধতির প্রকৃত অনুসারে অঙ্কমান ফুরিয়ে গেলে, নূতন সমন্বয় হয়ে আদ্য অঙ্ক হতে। যেমন- দশমিক পদ্ধতিতে অঙ্কের বিন্যাস হবে নিম্নরূপ-

০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ৯। এর পরে এই পদ্ধতিতে নূতন কোনো অঙ্ক যুক্ত করা যাবে না এবং সেই কারণেই এই পদ্ধতিতে আর কোনো প্রতীকও নেই। এই ক্ষেত্রে- ৯ এর পরে 'দশ' লিখার জন্য প্রথম আনা হয় '১'-কে কারণ আদ্য '০'-এর কোনো অর্থ নেই। এর পরে- আদ্য অঙ্ক '০'-কে বসান হয়। এবং দশমিক পদ্ধতির প্রথম সংখ্যা ১০ তৈরি হয়।
পদ: বিশেষণ
অর্থ: কোনো বস্তু নেই এমন দ্বারা বিশেষিত শব্দ, যা শব্দের পরে বসে অন্য শব্দকে নাই অর্থে বিশেষিত করে।
সমার্থক শব্দাবলি: বিহীন, রহিত, হীন।
উদাহরণ: কপর্দকশূন্য, জনশূন্য।
বিপরীতার্থক শব্দ:
সূত্র: