নন্দনতত্ত্ব
ইংরেজি :
Aesthetics,
esthetics।
এই শব্দটি উৎস গ্রিক। গ্রিক
αἰσθητικός (aisthetikos),
এর অর্থ হলো আমি অনুভব করি)। এই শব্দটি
প্রথম জার্মান ভাষায় গৃহীত হয়েছিল
Æsthetik
বানানে। ১৭৩৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জার্মান দার্শনিক
Alexander Gottlieb Baumgarten
সৌন্দর্যবিদ্যার জন্য এই শব্দ ব্যবহার করেন। আধুনিক জার্মান বানান
Ästhetik।
একইভাবে ফরাসি শব্দ esthétique
গৃহীত হয়েছিল গ্রিক থেকে। ইংরেজি
ভাষায় এই শব্দটি এসেছে জার্মান শব্দ থেকে।
বাংলা ভাষায় এই শব্দটি গৃহীত হয়েছে সংস্কৃত সমাসবদ্ধ পদ থেকে (নন্দন বিষয়ক
তত্ত্ব/কর্মধারয় সমাস)। সংস্কৃত ক্রিয়ামূল
√নন্দ
এর ভাবগত অর্থ হলো―
আনন্দ পাওয়া, আনন্দ দান করা।
এর সাথে
অন্ (ল্যুট)
প্রত্যয় যুক্ত হয় নন্দন শব্দ
তৈরি হয়েছে।
√নন্দ্
(
আনন্দ
পাওয়া, আনন্দ দান করা) +অন্
(ল্যুট)=
নন্দন
নন্দন শব্দের আরও একটি
রূপতাত্ত্বিক রূপ রয়েছে। এই শব্দটি উৎপন্ন হয় ণিজন্ত
√নন্দি
ক্রিয়ামূল থেকে। এর সাথে ইন
(ইনি) প্রত্যয় যুক্ত হয়েও নন্দন শব্দ তৈরি হয়।
√নন্দি
+ইন
(ইনি)=নন্দন
এই বিচারে নন্দন শব্দের অর্থ দাঁড়ায় যে থেকে আনন্দ পাওয়া যায় বা যার দ্বারা আনন্দ দেওয়া যায়, তাই নন্দন। যেহেতু আনন্দের উৎস সৌন্দর্য তাই নন্দন শব্দের অন্য অর্থ হলো―সৌন্দর্য প্রদায়ক। এটি বিশেষ্য পদ।
অন্য অর্থে শব্দটি বিশেষণ। এই অর্থ হলো― আনন্দদায়িকা, হর্ষক। এই বিচারে নন্দনতত্ত্বের আভিধানিক অর্থ হলো- আনন্দপ্রদায়ক তত্ত্ব। কিন্তু দর্শনবিদ্যার একটি বিশেষ শাখা হিসেবে নন্দনতত্ত্ব ব্যাপক অর্থ প্রদান করে। এই শব্দটি নামবাচক বিশেষ্য। সত্তাতত্ত্ব অনুসারে এই শব্দের শ্রেণিকরণ করা হয় নিচের বিধি অনুসারে।
বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | দর্শন | মানবিক বিজ্ঞান | জ্ঞান-শাখা | জ্ঞানস্বক্ষেত্র | প্রজ্ঞা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত সত্তা | সত্তা |}
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অতিন্দ্রীয় অনুভূতিসমূহের সৌন্দর্যবিষয়ক তত্ত্বই হলো নন্দনতত্ত্ব। প্রকৃষ্ট অর্থে এই তত্ত্ব মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপাদানগুলো মানুষের মস্তিষ্কে যে প্রভাব সৃষ্টি করে, তার দ্বারা মস্তিষ্কের ভিতরে কী ধরনের অনুভূতির জন্ম নেয় এবং তা কী ভাবে মানুষের আবেগকে প্রভাবিত করে, সে সবই নন্দনতত্ত্বে আলোচ্য বিষয়।
নন্দন তত্ত্বের শুরুতেই কতকগুলো জিজ্ঞাসাটি উঠে আসে তা হলো―
এই দুটি প্রশ্নের গোড়াতে আছে আমি এবং যে 'আমি' নামক সত্তা দেহকে অবলম্বন করে আছে, তার অস্তিত্ব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসার জন্য মানুষের দেহাভ্যন্তরে 'আমি' নামক সত্ত্বা খোঁজার জন্য মানুষের দেহগত বৈশিষ্ট্যকে উপলদ্ধি করার প্রয়োজন। মূলত যা কিছু সুন্দর বা অসুন্দর তা উপলব্ধি কর 'আমি'।