জলপাই গোত্রের
Jasminum
গণের একটি ফুল এবং
এর গাছ। ভারতবর্ষ, ইউরেশিয়া,অস্ট্রেলেশিয়া এবং ওশেনিয়ার মতো উষ্ণ অঞ্চলে
এই গাছ জন্মে।জুঁই বহুবর্ষজীবী শক্ত লতার গাছ। মূলত সুগন্ধি ফুলের জন্য এই গাছের চাষ করা হয়। এই গাছের উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এবং বেলী ফুলের তুলনায় পাপড়ি সংখ্যা খুবই কম।
এই গাছের পাতা সবুজ। পাতা একক বা তিন-পত্রিক, শীর্ষ পত্রিকা বড়, পত্রিকা ডিম্বাকৃতির। আকারে ছোট ফুলগুলো সাধারণত ২.৫ সেমি হয়ে থাকে। প্রজাতি ভেদে এর রঙ সাদা
বা হলদে হয়ে থাকে। দলনল দেড় সেন্টিমিটার লম্বা।এটি মূলত শীতকালে বিশেষে করে মাঘ মাসে ফোটে, তাই সংস্কৃত ভাষায় একে মাঘ মল্লিকা বলা হয়। এর ফলের রঙ পাকা জামের মতো।
জুঁই ফুলের উপকারিতা
জুঁই ফুল দিয়ে চা বানিয়ে খেলে ঘুম খুব ভালো হয়। চীন ও জাপানে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বানানো জুঁই চায়ের বেশ কদর রয়েছে।
চর্মরোগে যদি নিয়মিত ফুলের রস করে দিনে দুই বার ক্ষত স্থানে লাগালে চর্ম রোগ দ্রুত সেরে যায়।
ক্যান্সারের চিকিৎসা অ্যারোমাথেরাপি ক্রিম, লোশন, পারফিউম, সাবান এবং পানীয়তে সুগন্ধি হিসেবে জুই ফুল ব্যবহৃত হয়।
জুঁই ফুলের চাষ
প্রায় সব ধরনের মাটিতে জুঁই ফুলের চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত বেলে দোআঁশ মাটিতে জুঁই ফুল গাছ ভালো জন্মে।
জুঁই ফুলের চাষের জমি বা টব আগাছামুক্ত করে, মাটিতে গোবর সার ভালো ভাবে মিশিয়ে নিলে এই ফুলের চাষ ভালো হয়।
এই গাছ রোপণের এক মাস আগে গর্তগুলো ৩০ সেমি আকারে প্রস্তুত করে সূর্যের আলোতে রাখতে হবে।
প্রতিটি গর্ত বা টবের মাটি তৈরির সময় ১০ কেজি গোবর সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
জুন-নভেম্বর পর্যন্ত জুঁই ফুলের চারা রোপনের আদর্শ সময়।
জুঁই ফুল গাছের গোড়ায় পানি যাতে জমতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
অতিরিক্ত সূর্যের আলো এই ফুল গাছের জন্য বিপজ্জনক; সারাদিনে ঘণ্টাখানেক রোদই যথেষ্ট।
টবে যদি এই গাছ বসানো হয়, তবে তা জানালার পাশে রাখলে ভালো হয়।
এছাড়া শীতকালে ঠাণ্ডা হাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় এই গাছকে।
শীতকালে সাধারণত ফুল ফোটে কম। তবে এই সময় গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
জুঁই ফুল ফোটলে প্রচুর পানি দিতে হয়; সেই সময় এই গাছের গোড়া ভিজে রাখতে পারলেই ভাল।
সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা
জুঁই ফুলের চাষ জমি বা টব তৈরির সময় প্রতি গাছের জন্য, নাইট্রোজেন ৬০ গ্রাম,
পটাশিয়াম ১২০ গ্রাম,
এবং ফসফরাস ১২০ গ্রাম সারের মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
এই সার গুলো ২ বারে প্রয়োগ করতে হবে। অতিরিক্ত জৈব সার হিসাবে, নিমের খোল, সরিষার খোল ইত্যাদি প্রয়োগ করা উত্তম। এছাড়া ফুলের ফলন বাড়াতে জিঙ্ক ০.২৫% এবং ম্যাগনেসিয়াম ০.৫% হরে স্প্রে করলে
ভালো হয়।
জুঁই ক্ষেতে বা টবে নিয়মিত আগাছা পরিস্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই ফুল গাছের যথাযথ বৃদ্ধি এবং ভালো ফলনের জন্য প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
জুঁই ফুলে শিকড় পচা রোগের লক্ষণগুলি হল বাদামি বর্ণের ফুসকুড়ি পাতার নিচের পৃষ্ঠে দেখা যায় এবং কখনও কখনও
কাণ্ড এবং ফুলেও দেখা যেতে পারে।
শিকড়ের পচা রোগ থেকে নিরাময় পাওয়ার জন্য কপার অক্সিক্লোরাইড ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
লাল মাকড়সা পোকার আক্রমণে জুঁই ফুল গাছের পাতার উপরের পৃষ্ঠের বিচিত্র বর্ণালি প্রদর্শন করে। পাতাগুলি তাদের রঙ হারাতে শুরু করে এবং অবশেষে ঝরে পড়ে।
এই পোকার আক্রমণে থেকে মুক্তি পেতে সালফার ৫০% ডাব্লিউপি ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।
ফুল সংগ্রহ
জুঁই ফুলের চারা রোপণের ১০০-১২০ দিনের মধ্যে ফুল ফোটে। এই ফুল চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, গাছের বয়স যত বাড়বে ততই জুঁই ফুলের উৎপাদন বেশি হবে।