জৈব-অণু
ইংরেজি :
biomolecule।
জীবদেহগঠনে
যে সকল অণু প্রত্যক্ষভাবে পাওয়া যায়, তাদেরকে বলা হয় জৈব-অণু (biomolecule।
এসকল অণুতে ২৫টিরও বেশি
মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়। এর ভিতরে ছয়টি
মৌলিক পদার্থকে
জৈব-অণুর সাধারণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা। এ সকল মৌলিক পদার্থের ইংরেজি বানানের
আদ্যাক্ষর নিয়ে যে শব্দসংক্ষেপ করা হয়েছে- তা হলো
CHNOPS (carbon, hydrogen, nitrogen, oxygen,
phosphorus, and sulfur)।
ধারণা করা হয়
হেডিন কালের
শেষভাগে
পৃথিবীর আদিম মহাসমুদ্রে এসে যে সকল যৌগিক বা যৌগমূলক পদার্থের
সৃষ্টি হয়েছিল, তার সবগুলো
জীবজগতের আদি উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। মূলত সে সময়ে জীবদেহগঠনের সহায়ক যে সকল
অণু
তৈরি হয়েছিল, তাদেরকেই বলা হয় জৈব-অণু (biomolecule)।
জৈব-অণুর সবচেয়ে সরল জৈবযৌগ তৈরি হয় হাইড্রোজেন ও কার্বন দিয়ে। জৈবযৌগের প্রাথমিক সদস্য হলো মিথেন। জৈব-অণুর ক্ষেত্রে নানা ধরনের হাইড্রোকার্বনের কার্যকরীমূলক পাওয়া যায়। কোন জৈবঅণুর সাথে যুক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন গুণাগুণ ধারণ করে। জৈবঅণুর ক্ষেত্রে মোট ছয়টি কার্যকরীমূলক বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং সালফাইট-এর সাথে কার্বন-এর বন্ধন সৃষ্টির বিবেচনায় একে ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো-
অক্সিজেন ও কার্বন বন্ধন: এই শ্রেণির কার্যকরীমূলকের ভিত্তি হলো অক্সিজেন ও কার্বন-এর বন্ধন। কার্বনের সাথে অক্সিজেনের বন্ধন তিন ভাবে হতে পারে। এই বিচারে এই শ্রেণির কার্যকরীমূলককে তিনভাগে ভাগ করা হয়।
কার্বোনিল (Carbonyl): এই শ্রেণির কার্যকরীমূলক এককভাবে অক্সিজেনের সাথে মিলিত হয়। এক্ষেত্রে অক্সিজেন দুটি বাহু কারবনের দুটি বাহুকে অধিকার। রসায়নবিজ্ঞানে এর প্রতীক ব্যবহার করা হয় C=O।
হাইড্রোক্সিল (Hydroxyl): এই শ্রেণির কার্যকরীমূলকে অক্সিজেনের সাথে থাকে হাইড্রোজেন। মূলত একটি অক্সিজেন ও একটি হাইড্রোজেন মিলিত হয়ে −OH মূলক সৃষ্টি করে। এই মূলকই কার্বনের সাথে মিলিত হয়ে জৈবযৌগের সৃষ্টি করে।
এক্ষেত্রে
কার্বোক্সিল (Carboxyl): এই শ্রেণির কার্যকরীমূলকে থাকে কার্বন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন। এতে একই কার্বনের সাথে কার্বনিল ও হাইড্রোক্সিল যুক্ত হয়। এর সাধারণ সংকেত HO−C=O। সাধারণভাবে এই সংকেত প্রকাশ করা হয় (-COOH) হিসেবে।
নাইট্রোজেন ও কার্বন বন্ধন: এই শ্রেণির কার্যকরীমূলকে থাকে কার্বন ও নাইট্রোজেনের সাথে মিলিত হয়। এই শ্রেণির কার্যকরীমূলক নানা ধরনের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে -NH2 মূলকটি α কার্বনের সাথে যুক্ত হওয়ার সূত্রে যে জৈবঅণু সৃষ্টি করে, কার্যকরী মূলকের বিচারে তাকে বলা হয় এ্যামিনো (Amino)।
সালফার ও কার্বন বন্ধন: এই শ্রেণির কার্যকরীমূলক তৈরি হয় সালফার বা গন্ধকের সাথে কার্বনের বন্ধনে। গন্ধকের যোজ্যতা ২ বা ৬। এই মূলকের সাধারণ সংকেত -SH। এর সালফার কার্বনের সাথে যুক্ত হয়ে জৈবঅণু তৈরি করে। জৈবঅণুর বিচারে এই কার্যকরীমূলকের সাধারণ পরিচয় দেওয়া হয় সালফ্হাইড্রিল (Sulfhydryl) নামে।
ফসফরাস ও কার্বন বন্ধন: এই শ্রেণির কার্যকরীমূলক তৈরি হয় কার্বনের সাথে ফসফরাসের বন্ধনে। ফসফেটের যোজ্যতা ৫। অক্সিজেনের সাথে ফসফরাসের বন্ধনে তৈরি হয় ফসফেট (PO43−)। এই ফসফেটের ফসফরাসের সাথে কার্বনের সংযোগ ঘটে।
হাইড্রোজেনের সাথে ফসফেটের সম্মিলনে সৃষ্টি হয় ফসফরিক এ্যাসিড (H3PO4 )। এই এ্যাসিড থেকে একটি হাইড্রোজেনের বিচ্যুতি ঘটলে তা (H2PO4− ) আয়োনিত অবস্থায় পৌঁছায়। এই অবস্থায় পুনরায় আয়োনিত হলে, এর অবস্থা হয়- (HPO42− )। পর্যাক্রমিক ধারায় এই যৌগটি থেকে ফসফেট (PO43−) তৈরি হয়েছে। এই শ্রেণির কার্যকরীমূলক দেখা যায় ডিএনএ, আরএনএ এবং কিছু লিপিড-এ।