- পৌরাণিক মহাকাব্যিক ধারা
ধারণা করা হয়ে খ্রিষ্টাপূর্ব ৫০০ অব্দের ভিতরে রচিত হয়েছিল লোককাহিনি ও
পৌরাণিক উপাখ্যানের সমন্বয়ে মহাকাব্য 'রামায়ণ'। রামায়ণের যুগে সামগানের প্রচলন
ছিল।
কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডের ২৮তম সর্গের ৫৪তম শ্লোকে সামগানের উল্লেখ পাওয়া যায়।
উত্তরকাণ্ডের ১৬তম সর্গের ৩৩-৩৪তম শ্লোকে অনার্য (রাক্ষস) মহাদেবের স্তুতি
করেছেন সামগানের দ্বারা। বাল্মীকি রামায়ণের আদিকাণ্ডের চতুর্থ সর্গে উল্লেখ আছে,
বাল্মীকি রামের দুই পুত্র কুশী ও লবকে রাম-সীতার চরিত্রসহ রাবণ-বধ নামক কাব্য
শেখান। কুশীলব এই কাব্য পাঠ করা ও গান হিসেবে পরিবেশন করার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে রামায়ণের এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে- এই পাঠ ও গান মধুর, দ্রুত, মধ্য ও
বিলম্বিতরূপে ত্রিবিধ-প্রমাণ-সংযুক্ত ষড়্জ ও মধ্যম প্রভৃতি সপ্তস্বর-সংযুক্ত,
বীণালয় বিশুদ্ধ এবং শৃঙ্গার, করুণ, হাস্য, রৌদ্র, ভয়ানক ও বীর প্রভৃতি
সমুদয়-রসসংযুক্ত। স্থান ও মূর্চ্ছনাভিজ্ঞ, গান্ধর্ব্ববিদ্যাভিজ্ঞ কুশী ও লব তাহা
গাহিতে লাগিলেন। সুন্দরকাণ্ডের প্রথম সর্গে ১৭০তম অধ্যায়ে রয়েছে- হনুমান সীতাকে
রাবণের নিকট থেকে এনে রামের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আকাশপথে যাত্রা করেন। এই
যাত্রাপথের বর্ণনায় পাওয়া যায় -'গীতনিপুণ গন্ধর্বগণে সমাবৃত..'।
এই অংশ থেকে ধারণা করা যায়- রামায়ণের যুগে গান্ধর্বগানের প্রচলন ছিল। কুশী ও লব ছিলেন চারণ গায়ক। আর্য-অনার্য গানের
প্রভাব তাদের গানে ছিল বলে অনুমান করা যায়। এই দুই সঙ্গীতশিল্পী গান শেখার পর,
গুরু বাল্মীকির আদেশে এঁরা সুর ও ছন্দে রামায়ণের কাহিনি পরিবেশন করতেন- লোকসুরে।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রধান উপকরণ রাগের উৎপত্তি তখনো হয় নি।
মূলত ভারতবর্ষের আর্য-অনার্যপল্লীর গানের সংমিশ্রণে
গড়ে উঠেছিল লৌকিক গান। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এ সকল গানের কোনো সুনির্দিষ্ট রূপ
ছিল না। কিন্তু শাস্ত্রীয়ভাবে এই গানগুলোকে বিধিবদ্ধ করতে গিয়ে প্রাচীন
সঙ্গীতাচার্যরা কিছু বিধি তৈরি করেছিলেন। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল সপ্তস্বর
ভিত্তিক তিনটি গ্রাম ,
মূর্চ্ছনা। এ সকল গানের ভাব নির্দেশিত হয়েছিল
রসের দ্বারা। এর মধ্য দিয়েই গান্ধর্বরীতিতে
সৃষ্টি হয়েছিল নানা ধরনের লৌকিক গান।
রাময়ণে যুগে প্রচলিত বেশকিছু বাদ্যযন্ত্রের নাম পাওয়া যায়। আদিকাণ্ডের পঞ্চম
স্বর্গের ১৮তম শ্লোকে রয়েছে- দুন্ধুভি, মৃদঙ্গ, বীণা ও পণব।
বৌদ্ধ ধর্ম ও
জাতকের যুগ
গৌতমবুদ্ধের (জন্ম: ৫৬৭-৫৬৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ, মৃত্যু
৪৮৭-৪৮৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ধর্মীয় দর্শনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা
ধর্মীয় মতবাদ, সনাতন ধর্মেকে ভিন্নতর দর্শনের সন্ধান দিয়েছিল। সেই
সূত্রে ভারতীয় সঙ্গীতের ভাবগত বিষয়ের নতুনত্বের সৃষ্টি হয়েছিল।
গৌতমবুদ্ধের পূর্বজীবনের
কাহিনিগুলো রচিত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে। প্রায় ৫০০টি জাতকের
মধ্যে ১৫টি জাতকে গান সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। এই জাতকগুলো হলো- নৃত্য,
ভেরীবাদক, বিশ্বম্ভর, কুশ, অসদৃশ্য, সর্বদ্রষ্ট, গুপ্তিল, ভদ্রঘট, বীণাস্থূণা,
চুল্লু-প্রলোভন, ক্ষান্তিবাদি, কাকবতী, শঙ্খ, মৎস, বিদুরপণ্ডিত। এসকল জাতকে
সঙ্গীতে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না। গুপ্তিল জাতকে উত্তম ও মধ্যম মূর্ছনার
নাম পাওয়া যায়। এ সকল গ্রন্থে কোনো রাগের নাম পাওয়া যায় না।
মূলত বৌদ্ধ ধর্মের দ্রুত বিকাশে, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল।
গান্ধর্বরা ছিল মূলত বৈদিক ধর্মে দীক্ষিত। এঁরা সঙ্গীতকে গ্রহণ করেছিল
ধর্মাচরণের অনুষঙ্গ হিসেবে। বৌদ্ধ ধর্ম সঙ্গীত-চর্চা নিষিদ্ধ ছিল না। এঁদের
ধর্মগুরুরা গানের মধ্য দিয়ে ভক্তি প্রকাশের চেয়ে ধ্যন ও জ্ঞানের চর্চার মধ্য
দিয়ে নির্বাণ লাভের চেষ্টায় নিমগ্ন হয়ে পড়েছিল।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত গান্ধার এবং গান্ধর্ব সাহিত্য-সঙ্গীত পর্ব
বহিরাগতদের আক্রমণে
গান্ধর রাজ্যের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বার বার বিঘ্নিত হয়েছে। এই অঞ্চল মূলত পারশ্যের রাজাদের কাছে একটি লোভনীয় অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল।
এছাড়া অন্যান্য জাতিদের ভারত আক্রমণের প্রাথমিক অঞ্চল হিসেবেও গান্ধার রাজ্যকে
প্রাথমিক আক্রমণের আঘাত সহ্য করতে হয়েছে। বৈদিক যুগোত্তর কালের প্রথম দিকে এই
অঞ্চল আক্রমণের শিকার হয়েছিল- পারশ্যের রাজাদের দ্বারা। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০-৪৬৫
অব্দের ভিতরে পারশ্যে রাজারা এই অঞ্চলে অনেকগুলো সামরিক অভিযান পরিচালনা করে।
ঐতিহাসিক প্লিনির মতে খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০-৫৩০ অব্দের ভিতরে পারশ্য সম্রাট কাইরাস
ভারতে কয়েকবার আক্রমণ করেন এবং কপিশা নগরী দখল করতে সমর্থ হন। আরিয়ান নামক অপর
একজন ঐতিহাসিকের মতে- কাইরাস কাবুল ও সিন্ধু নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল দখল করে নেন
এবং এই অঞ্চল থেকে কর আদায় করতেন। কাইরাসের তৃতীয় উত্তরসূরী সম্রাট প্রথম
দারায়ুস খ্রিষ্টপূর্ব ৫২২ অব্দ থেকে ৪৮৬ অব্দের ভিতরে গান্ধার, সিন্ধু-উপত্যাকা
এবং পাঞ্জাব দখল করেন। এরপর জারেক্সিস খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮৬ অব্দ পর্যন্ত এই
অঞ্চলের উপরে আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হন। এই সময় এই অঞ্চলের অন্যান্য এলাকার
সাথে তক্ষশিলাও পারশিকদের অধিকারে ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০৫ অব্দের দিকে চৈনিক
পরিব্রাজক ফা-হিয়েন তক্ষশীলা পরিদর্শন করেন এবং এই স্থানকে অত্যন্ত পবিত্র
এলাকা হিসাবে উল্লেখ করেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে
আলেকজান্ডার সিন্ধু নদ পার হয়ে তক্ষশিলায় প্রবেশ করেন। এই সময় তক্ষশিলার
রাজা অম্ভি
আলেকজান্ডারের কাছে বশ্যতা স্বীকার করে তক্ষশিলায় অভ্যর্থনা করেন। এরপর
অভিসার জাতির নেতাও আলেকজান্ডারের কাছে বশ্যতা স্বীকার করে। এরপর আলেকজান্ডার
তক্ষশিলা থেকে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে ঝিলম নদী পার হয়ে পুরুর রাজ্য আক্রমণ
করেছিলেন।
আলেকজান্ডারের ভারত ত্যাগের আগে ঝিলম ও বিপাশা নদীর মধ্যাভাগের অঞ্চল
পুরুকে এবং সিন্ধু ঝিলম নদীর মধ্যভাগের অঞ্চল অম্ভির কাছে ছেড়ে দেন। এরপর
চন্দ্রগুপ্তের গুরু এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কৌটিল্যের (চাণক্য)
পৃষ্ঠপোষকতায় তক্ষশিলায় রাজত্বের পত্তন করেন
চন্দ্রগুপ্ত। কালক্রমে
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য বিশাল রাজত্বের অধিকারী হন।
চন্দ্রগুপ্ত তাঁর পুত্র
বিন্দুসারে কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর, তক্ষশীলাবাসী রাজশক্তির
অত্যাচরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
বিন্দুসারে নির্দেশে তাঁর যুবরাজ
অশোক
তক্ষশীলার বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৩ অব্দের দিকে
অশোক
রাজত্ব লাভ করেন। তখন মৌর্য রাজাদের রাজধানী ছিল পাটালীপুত্র। কিন্তু তক্ষশিলা
বৌদ্ধ সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।
খ্রিষ্টাপূর্ব ১৮৫ অব্দের দিকে শেষ মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করেন তাঁর
সেনাপতি পুষ্যমিত্র। এই সময় মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথের আত্মীয় যজ্ঞসেন বিদর্ভের
স্বাধীন রাজা হিসাবে ঘোষণা দেন। পুষ্যমিত্রের সাথে যজ্ঞসেনের বাহিনীর সাথে
যুদ্ধ হলে, যজ্ঞসেন পরাজিত হন। পরে যজ্ঞসেনের দুই আত্মীয়ের ভিতর বিদর্ভরাজ্যকে
ভাগ করে দেওয়া হয়। পুষ্যামিত্রের রাজত্বকালে গ্রিকরা তাঁর রাজ্য আক্রমণ করলে,
গ্রিকরা পরাজিত হয়। পুষ্যামিত্র বৌদ্ধধর্ম-বিদ্বেষী ছিলেন। ফলে তাঁর সময়
তক্ষশীলা গুরুত্ব হারাতে থাকে। অনেকে মনে করেন এই সময় তক্ষশীলারা বৌদ্ধ-স্থাপনা
ধ্বংস করা হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৯ অব্দে পুষ্যামিত্র পরলোক গমন করার পর, তাঁর
পুত্র অগ্নিমিত্র বিদিশার ক্ষমতা দখল করেন এবং বিদর্ভরাজকে পরাজিত করেন।
অগ্নিমিত্রের পর পর এদের উত্তরপুরুষরা রাজত্বের সমৃদ্ধিকে বজায় রাখতে ব্যর্থ
হন। এই বংশের শেষ সম্রাট সুমিত, মুলাদেব নামক এক আততায়ীর হাতে নিহত হন। এরপর এই
অঞ্চলে শুঙ্গবংশের রাজত্ব শুরু হয়। এই রাজবংশের রাজত্বকালে গ্রিকরা তক্ষশীল দখল
করে নেয়। এরপর শকদের কাছে গ্রিকরা ক্ষমতা হারায় এবং তক্ষশিলা শকদের অধীনে চলে
যায়। এপর শকদের উৎখাত করে ভারতে আধিপত্য বিস্তার করে কুষাণ রাজবংশ। কুষাণদের
রাজ্য বিস্তারের সময় তক্ষশীলা ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তী সময় কুষাণ রাজবংশের
শাসনমলেই তক্ষশিলা আবার তার পুরানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে থাকে। কালক্রমে তক্ষশীলা
বৌদ্ধদের বিহার ও শিক্ষাকেন্দ্রে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে। বৌদ্ধ রাজশক্তি দুর্বল হয়ে
পড়লে, হিন্দু রাজারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তশালী হয়ে উঠে।
বৌদ্ধধর্ম-বিদ্বেষী রাজাদের দ্বারা তক্ষশীলা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া
পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-ছাত্র হীন কাঠামোতে পরিণত
হয়। এবং তক্ষশীলা জন-পরিত্যাক্ত নগরীতে পরিণত হয়।
আনুমানিক ৩০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রচিত মার্কেণ্ডেয় পুরাণের
ত্রয়োদশ অধ্যায়ে অশ্বতর এবং তার ভাই কম্বলকে দেব সরস্বতী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাঠ
দানের বিষয়টি জানা যায়। এ্ই পুরাণে মতে, সরস্বতী- উভয় ভাইকে দান করেছিলেন
সপ্তস্বর, সপ্তগ্রাম, সপ্তবর্গ, সপ্তগীত ও সপ্তমূর্চ্ছনা। এছাড়া শিখিয়েছিলেন
চার প্রকার পদ, তিন প্রকার তাল, তিন প্রকার লয়, তিন প্রকার যতি এবং চারপ্রকার তোদ্য।
একই সাথে শিখেয়েছিলেন স্বর-ব্যঞ্জন সম্বন্ধ এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য
সঙ্গীত-বিষয়ক উপকরণ। এই গ্রন্থে এর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক কোনো নির্দেশনা নেই। এ
সকল বিষয়ের তাত্ত্বিক বর্ণনা পাওয়া যায় পাওয়া যায়- সেকালের 'শিক্ষা' নামক গ্রন্থাদিতে থেকে।
[মার্কেণ্ড পুরাণ। ত্রয়োদশ অধ্যায়। মূল ও বঙ্গানুবাদসহ। মহেশচন্দ্র পাল। ১৮১২
শকাব্দখ পৃষ্ঠা ৬৩।]
শিক্ষা গ্রন্থসমূহ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়- মার্কেণ্ডয় পুরাণের সাথে বিষয়গত
পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষাকারেরা ২১টি মূর্ছনার
কথা বলেছেন- অন্যদিকে মার্কেণ্ডয় পুরাণে সাতটি মূর্ছনার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে
সপ্তপ্রকার গীতের কথা এই পুরাণে পাওয়া গেলেও 'শিক্ষা'গুলোতে এর উল্লেখ নেই।
শিক্ষায় সঙ্গীত
বৈদিক মন্ত্রের স্বর বিন্যাস এবং ছন্দ-নিয়ামক শাস্ত্রের
সাধারণ শিক্ষা। ৩০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে সঙ্গীতবিষয়ক যে 'শিক্ষা'র পরিচয় পাওয়া যায়,
সেগুলো হলো-
পাণিনীয় শিক্ষা,
যাজ্ঞবল্ক্য
শিক্ষা,
মাণ্ডুকী শিক্ষা
ও
নারদীয় শিক্ষা।
এসকল গ্রন্থ থেকে সঙ্গীতবিষয়ক যে তথ্য পাওয়া যায়, তা হলো-
- সাতটি স্বর, ৩টি গ্রাম, ২১টি মূর্চ্ছনা, ৫১টি তান সৃষ্টি হয়েছিল। ষড়্জ,
মধ্যম ও গান্ধার নামক গ্রামের ভিতর, গান্ধার গ্রাম বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।।
- ৭টি গ্রাম রাগের উৎপত্তি হয়েছিল। একে রাগ বলা হলেও এগুলো ছিল গ্রাম। এগুলোর
নাম ছিল- ষড়জগ্রাম, পঞ্চম, কৈশিক, কৈশিক মধ্যম, মধ্যমগ্রাম, সারিত ও ষাড়ব।
- নারদীয় শিক্ষায় ২২টি শ্রুতির পরিবর্তে ৫টি শ্রুতির নাম পাওয়া যায়। এগুলো
হলো- দীপ্তা, আয়তা, করুণা, মৃদু ও মধ্য।
- যদিও বৈদিকযুগে বহু ধরনের বীণার নাম পাওয়া যায়, কিন্তু নারদীয় শিক্ষা'য়
মাত্র দুটি বীণার নাম পাওয়া যায়। বীণা দুটি হলো- দারবীবীণা ও গাত্রবীণা।
পাণিনি ও
পাণিনীয় শিক্ষা
প্রখ্যাত সংস্কৃত ব্যাকরণ রচয়িতা। পাণিনির জন্মকাল সম্পর্কে মতভেদ আছে। এই সকল মতভেদ অনুসারে ধরা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০-৪০০ অব্দের মধ্যে পাণিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
পণি বা পাণিন্ একটি গোত্র নাম। সংস্কৃত
সাহিত্যে পণি নামে একটি গোষ্ঠীর নাম পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, তিনি ফিনিসীয়
জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা একসময় ভারত মহাসাগরের উপকূলে বসতি স্থাপন করেছিল। এদেরকে পণি,
ফিনিকিয়, পিউনিক ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হতো। পাণিনির পিতা ছিলেন ফিনিকিয় বা পণি
গোষ্ঠীর মানুষ। তাঁর পিতার নাম ছিল শলঙ্ক
এই কারণে অনেক সময় তাঁকে শলাঙ্কি বলা হয়। পাণিনির মা ইলেন দক্ষ জাতির কন্যা।
অনেকের মতে পাণিনির মায়ের নাম ছিল দাক্ষী। এই সূত্রে অনেকে ক্ষেত্রে তাঁকে
দাক্ষীপুত্র বা দাক্ষেয় নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। পাণিনি পারিবারিক সূত্রে
বেদোত্তর সনাতন পৌরাণিক ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। মূলত তিনি ছিলেন
অহিগলমালার (শিব) উপাসক। সেইজন্য তাঁকে আহিক বলা হয়েছে।
তাঁর শিক্ষকের নাম ছিল উপবৎস।
তাঁর রচিত ব্যাকরণের নাম-
অষ্টাধ্যায়ী। কথিত আছে, মহাদেবের ঢাকের শব্দে চৌদ্দটি ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই
ধ্বনি অনুসারে তিনি শব্দসূত্র তৈরি করেন। একে বলা হয়েছে শিবসূত্রজাল অথবা মাহেশ্বর
সূত্র। মূলত এই সূত্রগুলি পাণিনির ব্যাকরণের চাবিকাঠি। শিবসূত্রের প্রত্যেকটির নাম
সংজ্ঞা বা সংজ্ঞাসূত্র। এই ১৪টি শিবসূত্র হলো-
১. অ ই উ ণ্
২. ঋ ৯ ক্
৩. এ ও ঙ্
৪. ঐ ঔ চ্
৫. হ য ৱ র ট্
৬. ল ণ্
৭. ঞ্ ম ঙ্ ণ ন ম্ |
৮. ঝ ভ ঞ
৯. ঘ ঢ ধ ষ্
১০. জ ব গ ড দ শ্
১১. খ র্ফ ছ ঠ থ চ ট ত ৱ্
১২. ক প য্
১৩. শ ষ স র্
১৪. হ ল্ । |
মনে রাখার সুবিধার জন্য পাণিনি
এই সূত্রগুলোকে আরও সংক্ষিপ্ত করে নাম দিয়েছিলেন প্রত্যাহার (সংক্ষেপিত) সূত্র।
এক্ষেত্রে প্রতিটি সূত্রের প্রথম ও শেষ বর্ণ যুক্ত করে সংক্ষিপ্ত বা প্রত্যাহার
সূত্র হয়েছিল।
প্রত্যহার সূত্র তৈরির বিধি
১. শিবসূত্রের বিচারে প্রত্যাহার সূত্র তৈরি হয়েছে।
২. প্রতিটি প্রত্যাহারের নামকরণ করা হয়েছে শিবসূত্রের প্রথম ও শেষ বর্ণ দ্বারা।
যেমন -
প্রথম শিবসূত্রটি হলো-
অ ই উ ণ্ এক্ষেত্রে
প্রত্যাহরটির নাম হবে অণ্।
৩. ব্যবহারিক ক্ষেত্রে শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটি ইৎ হবে, অর্থাৎ অগ্রাহ্য হবে। যেমন প্রথম
চারটি শিবসূত্র হলো-
১. অ
ই উ ণ্
২. ঋ ৯ ক্
৩. এ ও ঙ্
৪. ঐ ঔ চ্ এই চারটি শিবসূত্রের মিলিত সূত্র প্রত্যাহর হবে অচ্ । এর শেষ বর্ণ
চ্ বাদ দিলে পাওয়া যাবে।
অ ই উ ণ্ ঋ ৯ এ ও ঐ ঔ। এই বর্ণগুলোই হবে সংস্কৃত ভাষার স্বরধ্বনি। অর্থাৎ অচ্
প্রত্যাহর সূত্র দ্বারা স্বরধ্বনির সংখ্যা পাওয়া গেল। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে এই সূত্রে
দীর্ঘ, হ্রস্ব, প্লুত স্বরধ্বনির উল্লেখ নাই। একই ভাবে ৫ম শিবসূত্র থেকে ১৪শ
শিবসূত্র থেকে পাওয়া যায় প্রত্যাহার সূত্র হল্। এর অর্থ হলো সমস্ত
ব্যঞ্জনবর্ণ। পাণিনি ব্যাকরণে প্রত্যাহার সূত্র মোট ৪৩টি। তাঁর সমগ্র রচনাটি আটটি
অধ্যায়ে বিভাজিত এই সূত্রে এই গ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে- অষ্টাধ্যয়ী। এই
ব্যাকরণের অন্যতম ভাষ্যকার ছিলেন পতঞ্জলি ।
বৈদিক মন্ত্রের স্বর বিন্যাস এবং ছন্দ-নিয়ামক শাস্ত্রের
সাধারণ শিক্ষা। এরূপ একটি শিক্ষা গ্রন্থ হলো পাণিনীয় শিক্ষা। পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী
গ্রন্থে পাওয়া যায় স্বরের উৎপত্তি বিষয়ক একটি উপাখ্যান। এই উপাখ্যান থেকে জানা যায়
যে, নৃত্ত শেষে ১৪ বার ঢাকে আঘাত করেছিলেন। এর ফলে বর্ণের উৎপত্তি হয়েছিল। ১৪বারের
আঘাতে সৃষ্ট হয়েছিল ১৪টি সূত্র। এই সূত্রগুলো মহেশ্বর সূত্র (শিবসূত্রের) উৎপত্তি
ঘটেছিল। পাণিনীয় শিক্ষায় বর্ণ-উৎপত্তির এই পৌরাণিক কাহিনি ছাড়া পাওয়া যায়- উদাত্ত,
অনুদাত্ত ও স্বরিত নামক তিনটি স্বরস্থানের নাম। শিক্ষাকার একে 'স্বরস্ত্রয়' নামে
অভিহিত করেছেন। স্বরের সময়জ্ঞাপক মাত্রামান তথা সময় জ্ঞাপক মান হিসেবে উল্লেখ
করেছেন- হ্রস্ব (১ মাত্রা), দীর্ঘ (২ মাত্রা) ও প্লুত (৩ মাত্রা)। এছাড়া লয় হিসেবে
উল্লেখ করেছেন দ্রুত, মধ্য ও বিলম্বিত।
পাণিনীয় শিক্ষায় বলা হয়েছে 'স্বরস্ত্রয়' থেকে সাত স্বরের উৎপত্তি ঘটেছিল। বৈদিক
শাস্ত্রীয় স্বরের নামের পরিবর্তে লৌকিক নাম ব্যবহার করেছেন। এই গ্রন্থ মতে-
উদাত্তে নিষাদগান্ধারাবানুদাত্তঋষভধৈবতৌ
স্বরিতঃ প্রভবা হোতো ষড়্জমধ্যমপঞ্চমাঃ॥
উদাত্ত থেকে - নিষাদ ও গান্ধার, অনুদাত্ত থেকে ঋষভ ও ধৈবত এবং স্বরিত থেকে
ষড়্জ, মধ্যম ও পঞ্চমের উৎপত্তি হয়েছে। স্বরের উৎপত্তি স্থান হিসেবে ৮টি
অধিষ্ঠানের উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো- উরঃ, কণ্ঠ, শির, জিহ্বামূল, দন্ত,
নাসিকা, ওষ্ঠ ও তালু। এছাড়া স্বরে উৎস হিসেবে পশুপাখির কণ্ঠস্বরের উল্লেখ
করেছেন।
যাজ্ঞবল্ক্য শিক্ষা
এই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন- যাজ্ঞবল্ক্য নামক একজন ঋষি। এটি যজুর্বেদীয় শাখার
শিক্ষা। তিনজন যাজ্ঞবল্ক্যের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন- সংহিতাকার যাজ্ঞবল্ক্য,
মহাভারতের যাজ্ঞবল্ক্য এবং শিক্ষাকার যাজ্ঞবল্ক্য। মহাভারত লিখিত হয়েছিল-
খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের ভিতরে। তাই মহাভারতের যাজ্ঞবল্ক্য সর্বপ্রাচীন। অধ্যাপক
জলি এবং ডাঃ কানের বিচারে সংহিতাকার যাজ্ঞবল্ক্য ছিলেন ১০০ থেকে ৩০০ খ্রিষ্টাব্দের
মধ্যে। শিক্ষাকার যাজ্ঞবল্ক্য ছিলেন সংহিতাকার যাজ্ঞবল্ক্যের সমসাময়িক বা কিছু পরের
মানুষ।
ইতিহাসের নিরিখে বলা হয়ে থাকে- খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে উত্তর
ভারতে কুষাণ রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল। এই রাজ্যের প্রথম রাজা কুজুল-কদ্ফিসেস নিজ
গোত্রের বিভিন্ন শাখাকে একত্রিত করে- ওয়াং বা রাজা উপাধি গ্রহণ করেন। পরে নিজের
সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করে হিন্দুকুশের দক্ষিণ দিকে অভিযান চালিয়ে পহ্লবদের পরাজিত
করে কিপিন এবং কাবুল দখল করে নেন। এরোর ব্যাক্ট্রিয়া দখলে পারস্য সীমান্ত থেকে
সিন্ধু ও ঝিলম নদী পর্যন্ত রাজত্ব বিস্তার করেন। ধারণা করা হয়- তিনি ১৫ থেকে ৬৫
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করতে সক্ষম হন। ইতিহাসে তিনি প্রথম কদ্ফিস নামে পরিচিত।
এরপর এই রাজ্যের রাজা প্রথম কদ্ফিসের পুত্র দ্বিতীয় কদফিস। ৭৮ খ্রিষ্টাব্দে কণিষ্ক
কুষাণ রাজ্যের রাজা হন এবং সিংহাসন লাভের পর তিনি নূতন সৌরবর্ষ শকাব্দ প্রচলন করেন।
কুষাণ রাজবংশের শেষ সম্রাট দ্বিতীয় বাসুদেব ২৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
এই সময়ের ভিতরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পাণিনীর ব্যাকরণের ভাষ্যকার পতঞ্জলি,
শিক্ষাকার যাজ্ঞবল্ক্য এবং সংহিতাকার
যাজ্ঞবল্ক্য। এছাড়া গান্ধর্ব গানের সঙ্গীতবিশারদ নারদও এই সময়ের
ভিতরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ক্রমবিবরণের ধারায়-
যাজ্ঞবল্ক্য শিক্ষা ও নারদীয় শিক্ষা বিশেষ স্থান করে আছে।
যাজ্ঞবল্ক্য শিক্ষায় সঙ্গীত
যাজ্ঞ্যবল্ক্য শিক্ষায় তিনটি বৈদিক স্বর- উদাত্ত, অনুদাত্ত ও স্বরিত নামে পাওয়া
যায়। তবে এই স্বরগুলোর স্থান, বর্ণ, দেবতা, জাতি, ঋষি ও ছন্দের বিচারে পরিচয় দেওয়া
হয়েছে।
| স্বর |
স্থান |
বর্ণ |
দেবতা |
জাতি |
ঋষি |
ছন্দ |
| উদাত্ত |
উচ্চ |
শুক্ল |
অগ্নি |
ব্রাহ্মণ |
ভরদ্বাজ |
গায়ত্রী |
| অনুদাত্ত |
নীচ |
লোহিত |
সোম (তেজঃ) |
ক্ষত্রিয় |
গৌতম |
ত্রৈষ্টুভ |
| স্বরিত |
মধ্যম |
কৃষ্ণ |
সবিতা |
বৈশ্য |
গার্গ্য |
জগতী |
স্বরের এরূপ পরিচিতি ছান্দ্যোগ্য উপনিষদে ভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। যাজ্ঞবল্ক্য
শিক্ষায় উদাত্ত, অনুদাত্ত ও স্বরিত স্বর থেকে যে অন্যান্য স্বরের উৎপত্তি ঘটেছে- সে
সম্পর্কে লিখেছেন-
ঊচ্চৌ নিষাদগান্ধারৌ নীচাঋষভধৈবতৌ
শেষস্তু স্বরিতা জ্ঞেয়াঃ যড়্জ-মধ্যম-পঞ্চম॥
এখনে ঊচ্চৌ শব্দের দ্বারা উদাত্তকে বুঝানো হয়েছ। এখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে নিষাদ ও
গান্ধার। নীচা শব্দের দ্বারা অনুদাত্তকে বুঝানো হয়েছে। এখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে- ঋষভ
ও ধৈবত। স্বরিত থেকে উৎপন্ন হয়েছে - ষড়্জ, মধ্যম ও পঞ্চম।
যাজ্ঞবল্ক্য মাত্রার মান নির্ণনয়ে সূর্যরশ্মিতে প্রতিভাত ক্ষুদ্রক্ষুদ্র অণুর কথা
বলেছেন। তাঁর মতে চারটি অণুতে এক মাত্রা মাত্রা হয়। তাঁর মতে কণ্ঠে ২ মাত্রা থাকে,
জিহ্বাগ্রে ৩ মাত্রা থাকে। মাত্রা এককগুলো হলো হ্রস্ব (১ মাত্রা), দীর্ঘ (২
মাত্রা) ও প্লুত (৩ মাত্রা)। তিনি পশুপাখির স্বরের ভিতরে মাত্রার সন্ধান করেছিলেন।
যেমন তাঁর মতে- নীলকণ্ঠ পাখির স্বর হ্রস্ব, কাকের স্বর দীর্ঘ এবং ময়ুরের স্বর
প্লুত।
বেদপাঠে সহকারী আটটি স্বর ব্যবহৃত হতো। এগুলো হলো- জাত্য, অভিনিহিত, ক্ষৈপ্র,
প্রশ্লিষ্ট, তৈরোবিরাম, তৈরোব্যঞ্জন, পাদবৃত্ত ও তাথাভাব্য। তিনি স্পর্শবর্ণের
দেবতা ও রঙের উল্লেখ করেছেন।
মাণ্ডুকী শিক্ষা
যাজ্ঞবল্ক্যের পরে সঙ্গীতবিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে মাণ্ডুকী শিক্ষা।
ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর দিকে মণ্ডুক মুনি এই গ্রন্থটি রচনা
করেছিলেন। এই গ্রন্থের বিবরণ থেকে ধারণা করা হয়, তাঁর সময়ে সামগানের প্রচলন ছিল। এই
গ্রন্থে সামগানের পাঁচটি স্বরস্থানের প্রচলন ছিল। এগুলোর নাম ছিল- উদাত্ত, অনুদাত্ত,
স্বরিত ও প্রচর। সম্ভবত প্রচর স্বরস্থানটি ছিল স্বরিত স্বরস্থানের বর্ধিত অংশ।
এই গ্রন্থ মতে পশুপাখির স্বর অনুসরণে সঙ্গীতের ৭টি স্বর গ্রহণ করা হয়েছিল। এই
স্বরগুলোর উৎস এবং বর্ণ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে এই গ্রন্থে। যেমন-
| স্বর |
উৎস (পশুপাখির কণ্ঠস্বর) |
বর্ণ |
| ষড়্জ |
ময়ুর |
পদ্মপত্র |
| ঋষভ |
গাভী |
শুকপিঞ্জর |
| গান্ধার |
ছাগ |
স্বরণাভ |
| মধ্যম |
বক |
কুন্দফুল |
| পঞ্চম |
কোকিল |
কৃষ্ণ |
| ধৈবত |
ঘোড়া |
পীত |
| নিষাদ |
হাতি |
সর্ববর্ণযুক্ত |
সঙ্গীত পরিবেশনায় হস্তসঙ্কেতকে তিনি বিশেষ মূল্য দিয়েছিলেন।
তাঁর গ্রন্থ থেকে এ্ বিষয়ে বিখ্যাত উক্তি পাওয়া যায়- 'যথা বাণী তথা পাণি'।
শিক্ষাকার নারদের
সঙ্গীতাচার্যগণ
শিক্ষাকার নারদের
পূর্ববর্তী কয়েকজন সঙ্গীতজ্ঞের নাম পাওয়া যায় পৌরাণিক গ্রন্থাদিতে। এঁরা হলেন
গন্ধর্ব সঙ্গীতজ্ঞ হাহা, হুহু এবং তম্বুরু।
খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে রচিত মহাভারতে-
মহাভারতের আদি পর্বের ১২৩ অধ্যায় থেকে জানা যায়- অর্জুনের জন্মের পর যে উৎসব
পালন করা হয়েছিল। এই উৎসবের রাজন্যবর্গের সাথে নারদ এবং বিশ্বাবসুর নাম আছে। তবে এই
দুজনকে বিশেষভাবে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে উল্লেখ করা হয় নি। এই তালিকা তিনজন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞের
নাম পাওয়া যায়, এঁর হলেন- হা হা, হুহু এবং তম্বুরু।
এই তিনজন সঙ্গীতজ্ঞ সম্পর্কে বলা হয়েছে- গীতিমাধুর্যসম্পন্ন, সুবিখ্যাত হাহা, হুহু ইত্যাদিগন্ধর্বগণ সমভিব্যাহরে শ্রীমান তুম্বরু
আসিয়া অর্জুনসমীপে মৃদুস্বরে গান করিতে লাগিলেন
এই বিচারে এই তিনজন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর। শিক্ষাকার নারদ অন্য
ব্যক্তি যিনি ছিলেন খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর সঙ্গীতজ্ঞ।