ভৈরব রাগ
সমনাম: ভৈঁরো, ভায়রো।

ভারতীয় রাগশাস্ত্রে বর্ণিত একটি প্রাচীন রাগ।  একে বলা হয় আদি রাগ। দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে এই রাগের নাম মায়ামালবগৌড়।

ব্রহ্মা, কল্পিনাথ, হনুমন্ত, ভরত- রাগ শ্রেণিকরণে দেখা যায় আদিতে এই রাগ আরো কিছু রাগের অধিকর্তা ছিল। অধীনস্থ এই রাগগুলো ছিল ভৈরব রাগের স্ত্রী। তাই এই রাগগুলোকে তখন বলা হতো- রাগিণী। এর অধীনস্ত যে রাগিণীগুলোর নাম পাওয়া যায়, তা হলো-

প্রাচীন ভৈরব ঋষভ ও পঞ্চম ছিল না। ফলে রাগটি ছিল ঔড়ব-ঔড়ব। রেখাব ও পঞ্চমবিহীন ঔড়ব জাতীয় ভৈরবকে অনেকে সরস্বতী ভৈরব বা আদি ভৈরব বলে থাকেন।

প্রাচীন ভারতীয়
প্রবন্ধগান থেকে ধ্রুব গান এবং ধ্রুবা গান এই রাগের ব্যবহার ছিল। সুলতান আলাউদ্দীন খিলজি রাজত্বকালে (১২৯৬-১৩১৬ খ্রিষ্টাব্দ), বৈজু বাওরা গোপাল নায়ক এই রাগে ধ্রুপদ রচনা করেছিলেন। এঁদের রচিত ভৈরব রাগে নিবদ্ধ ধ্রুপদের নমুনা পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে ভৈরবে নিবদ্ধ গান রচনা করেছিলেন- তানসেন। যেমন-

ভৈরবাঙ্গ
ভৈরবের আরোহণ ও অবরোহণের বিন্যাসকে দুটি অঙ্গে বিভাজিত করে বিবেচনা করা হয়। এর একটি হলো- পূর্বাঙ্গ অপরটি উত্তরাঙ্গ। এর পূর্বাঙ্গে রয়েছে গ ম প গ ম ঋ, স। এই স্বরবিন্যাসে শুরু হয় শুদ্ধ গান্ধার থেকে এবং ম প গ ম ঘুরে ঋ-তে আসে দাঁড়ায়। অর্থাৎ ন্যাস স্বর মধ্যম। তারপর ঋ স। মধ্যমে ক্ষণিক বিরাম, এই জন্য ভৈরবে মধ্যম ন্যাস স্বর। এর মধ্য দিয়ে একটি সুরাঙ্গের তৈরি হয়। এর সাথে বিশেষ শর্ত থাকে গান্ধার ছুঁয়ে ঋষভে পৌঁছানো এবং ঋষভে আন্দোলন। কিম্বা মা থেকে ঋষভে পৌঁছাতে হয় একটি বিলম্বে মীড় যুক্ত হয়ে। এর ভিতরে গান্ধার না থাকলেও ক্ষতি নেই।

ভৈরবের উত্তরাঙ্গে রয়েছে দ ন র্স। এই উত্তরাঙ্গে পৌঁছানোর শুরুতে কোমল নিষাদ ছুঁয়ে ধৈবতে বিরাম। অর্থাৎ গ ম দ। তারপর পঞ্চমে সামান্য একটি স্থিতি তারপর পূর্বাঙ্গের স্বরবিন্যাসে ফিরে আসা। সব মিলিয়ে দাঁড়ায়- গ ম দ, প, প গ ম ঋ, স। এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- দ। কিন্তু যখন শুদ্ধ নিষাদ থেকে কোমল ধৈবতে নামার প্রয়োজন হয়, তখন বিলম্বে ও মীড়যুক্ত হয়ে উপস্থাপন করা হয়। একইভাবে স থেকে দ-তে পৌঁছানোর সময় মীড়ের প্রয়োগ করা হয়। এ সকল বৈশিষ্ট্য নিয়েই তৈরি হয় ভৈরবাঙ্গ।

ভৈরব ঠাট

ভৈরব বেশ প্রাচীন রাগ। সঙ্গীত-পারিজাত মতে এই রাগে ঋষভ ও পঞ্চম বর্জিত। এই মতে ভৈরব ঔড়ব জাতীয় রাগ হিসাবে। 'রাগমালা'য় শুদ্ধ ভৈরব হিসাবে যে রাগের বিবরণ পাওয়া যায়, তাতে কোমল গান্ধার ও কোমল নিষাদ-এর ব্যবহার দেখা যায়। এই বিচারে এর আরোহণ অবরোহণ ছিল স জ্ঞ ম প দ ণ র্স র্স ণ দ প ম জ্ঞ স। এই রাগ শুদ্ধ ভৈরব নামে পরিচিত। উল্লেখ্য বর্তমানে এই রাগের প্রচলন নাই।

এছাড় ঋষভ ও পঞ্চম বর্জিত ঔড়ব জাতীয় যে ভৈরবের সন্ধান পাওয়া যায়, তার নাম সরস্বতী ভৈরব বা আদি ভৈরব বলা হয়। পণ্ডিত ভাবভট্টের মতে জাতির বিচারে ভৈরব তিন প্রকার। প্রকার তিনটি হলো  
                    ঔড়ব (ঋষভ ও পঞ্চম বর্জিত)
                    ষাড়ব (পঞ্চম বর্জিত)
                    সম্পূর্ণ (ঠাটের কোনো স্বরই বর্জিত নয়)
            দেখুন : জাতি

বর্তমানে প্রচলিত ভৈরব
ভৈরব ঠাটের জনক রাগ। এই রাগে ভৈরব ঋষভটি অতিকোমল ঋষভ এবং আন্দোলিত হয়ে ব্যবহৃত হয়। এই রাগে ঋষভ এবং ধৈবত কোমল বাকি সকল স্বর শুদ্ধ। কোনো কোনো শিল্পী এই রাগে সুনিপুণভাবে কোমল নিষাদ ব্যবহার করে থাকেন। এ রাগের প্রকৃতি গম্ভীর। কোমল ঋষভ ও কোমল ধৈবত আন্দোলিত হয়।

ভারতীয় রস শাস্ত্রে এই রাগকে বলা হয় করুণা ও নৈরাশ্যের প্রতীক। হয়তো এক সময় ভৈরবের চলন তেমনটাই ছিল। কিন্তু বর্তমানে সকালের রাগ হিসেবে যেভাবে ভৈরব পরিবেশন করা হয়ে, তার ভিতরে থাকে গম্ভীর এবং গভীর প্রশান্তির ছায়া। এই রাগের উভয় রূপ মনকে ভক্তিমার্গে আপ্লুত করে।

ভৈরব রাগের সাধারণ পরিচিতি 

আরোহণ : স ঋ গ ম প দ ন র্স
অবরোহণ
: র্স ন দ প ম গ ঋ স
ঠাট : ভৈরব

জাতি : সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ

বাদীস্বর :

সমবাদী স্বর :
অঙ্গ : উত্তরাঙ্গ।
গ্রহস্বর: গ
সময় : দিবা প্রথম প্রহর

পকড় : ম প , , ম গ ম, ঋ স
         
ম প
, ন র্স, দ, প, গ ম প গ ম ঋ স।  


তথ্যসূত্র: