বায়ু
বানান বিশ্লেষণ: ব্+আ+য়্+উ
উচ্চারণ:
baẽ.u (বায়্.উ)।

শব্দ-উৎস: আর্যভারতীয় জেন্দ বায়>বৈদিক বায়ু>সংস্কৃত বায়ুঃ>বাংলা বায়, বায়ু
ইরানি জেন্দ ভাষায় লিখিত অবস্থা নামক ধর্মগ্রন্থে বায়ু দেবের নাম পাওয়া যায়। সংস্কৃততে শব্দটি হয়েছে বায়ুঃ। '(আকাশাৎ জায়তে বায়ুঃ। মনুসংহিতা ১.৭৬)। বাংলায় বিসর্গ বর্জিত হয়ে 'বায়ু' গৃহীত হয়েছে।

রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:
বা (প্রবাহিত হওয়া)+উ (উণ), কর্তৃবাচ্য
পদ: বিশেষ্য

. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| গ্যাস | প্রবাহী | বস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}
অর্থ: যে কোনো বস্তুর গ্যাসীয় দশার সাধারণ নাম। পদার্থ বিজ্ঞানে বায়ু বলতে বিভিন্ন মৌলিক বা যৌগিক গ্যাসীয় অবস্থার মিশ্ররূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সমার্থক শব্দাবলি: পবন, বাত, বাতাস, বায়, বায়ু, সমীরণ, হাওয়া

ইংরেজি: Air

হিন্দু দর্শনে বায়ু

ভূতল থেকে উপরের দিকে অবস্থিত বায়ুকে ভারতীয় ঋষিরা মোট সাতটি ভাগে ভাগ করেছিলেন
এই সাতটি বায়ুমার্গ সাতটি বায়ুপ্রবাহের নামে চিহ্নিত এগুলি হলো
 প্রবহ, বহ, উদ্বহ, সংবহ, বিবহ, পরিবহ ও পরাবহ

হিন্দু দর্শনে, শরীরে অবস্থিত বায়ুকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা :
    ক. প্রাণ : এই বায়ু হৃদয়ে থাকে এবং রক্ত চলাচলে সহায়তা করে

    খ. অপান : এই বায়ু গুহ্যদেশে থাকে এবং প্রাণ বায়ুর সহায়তা ও আহার্য চালিত করে
    গ. সমান : এই বায়ু নাভিদেশে থাকে এবং পাক কার্য সম্পন্ন করে
    ঘ. উদান : এই বায়ু কণ্ঠদেশে থাকে এবং উদ্গার ও শ্বাস কার্যাদি সম্পন্ন করে
   
ঙ. ব্যান : এই বায়ু সর্ব শরীরে থাকে এবং দেহ রক্ষা করে
 

কোনো কোনো মতে আরো পাঁচটি বায়ু আছে এই পাঁচটি বায়ু হল
    ক. নাগ : এর কাজ উদ্গার

   
খ. কুর্ম : এর কাজ নিমীলন
   
গ. কৃকর : এর কাজ ক্ষুধা বৃদ্ধি
   
ঘ. দেবদত্ত : জৃম্ভণে সাহায্য করে।
     ঙ. ধনঞ্জয় : দহের সর্বত্র অবস্থান করে এবং শরীরকে রক্ষা করে
মৃতাবস্থাতেও এই বায়ু শরীরের থাকে


হিন্দু অপর দর্শনে- বায়ু পঞ্চভূতের দ্বিতীয় ভূত
আকাশ থেকে এর জন্ম এই ভূত শব্দ ও স্পর্শগুণ যুক্ত

 

২.ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা | হিন্দু দেবতা  | দেবতা | দৈবসত্তা | অতিপ্রাকৃতিক সত্তা | বিশ্বাস | প্রজ্ঞা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন  | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে অন্তরীক্ষ ও বাতাসের দেবতা এর অপর নাম পবন

ভারতীয় আর্যরা ভারতবর্ষের প্রবেশের সময় যে সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন, তাতে বায়ু দেবতা বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রাচীন ইরানি জেন্দ ভাষায় লিখিত অবস্থা নামক ধর্মগ্রন্থে বায়ু দেবের নাম পাওয়া যায়। ভারতীয়া আর্যরা খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দের দিকে ঋগ্বেদ রচনা করেন। ওই গ্রন্থে বায়ু দেবতাকে বিশিষ্ট দেবতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ঋগ্বেদের প্রথমমণ্ডল-এর দ্বিতীয় সূক্তে বায়ু দেবতাকে আহ্বান করা হয়েছে। ঋগ্বেদের নাম পাওয়া যায় 'বায়' হিসাবে। কখনো কখনো বায়ু এবং ইন্দ্রকে একার্থে উল্লেখ করা হয়েছে।

বায়বা যাহি দর্শতেমে সোমা অরংকৃতাঃ। তেষাং পাহি শ্রুধী হবম্।
বায় উক্‌থের্ভিজরন্তে ত্বামচ্ছা জরিতারঃ। সুতসোমা অহর্বিদঃ
  [ঋগ্বেদ প্রথম মণ্ডল, ২ সূক্ত]

হিন্দু পৌরাণিক যুগে বায়ু দেবতাকে পবন দেবতা হিসেবে উল্লেখ পাওয়া যায়। অঞ্জনা একদিন রঙিন কাপড় পরে বাগানে ভ্রমণ করছিলেন এমন সময় বায়ু এঁর কাপড়  উড়িয়ে নিয়ে যান বানরী এতে চমকিতা হয়ে উঠলে বায়ু বললেন যে, তিনি ইতিমধ্যেই অঞ্জনাতে উপগত হয়েছেন এই মিলনের ফলে জন্ম হয়েছিল হনুমানের হনুমান ঐরাবতকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে, ইন্দ্র হনুমানকে বজ্র দ্বারা আঘাত করেন এতে হনুমান বিহ্বল হয়ে পড়লে পবনদেব নিজের গতি রোধ করে পুত্রকে নিয়ে গিরিগুহায় প্রবেশ করেন ফলে বাতাসের অভাবে সমগ্র চরাচরে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় তখন সকল দেবতা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে, ব্রহ্মা বায়ুর কাছে উপস্থিত হয়ে, হনুমানকে পুনর্জীবিত করেন পবন দেবতা খুশি হয়ে আবার বাতাস প্রবাহিত করেন কুন্তী মন্ত্র দ্বারা এই দেবতাকে আবাহন করে এঁর সাথে মিলিত হন এই মিলনের ফলে দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমের জন্ম হয়

রাজা কুশনাভের একশত রূপবতী কন্যা ছিল পবনদেবতা এদের রূপে মুগ্ধ হয়ে তাদের কাছে যৌনমিলন প্রার্থনা করেন এই কন্যারা পবনদেবের এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলে, পবনদেবতা তীব্র বায়ু প্রবাহ দ্বারা এঁদের মাজা ভেঙে দেন ফলে এই কন্যারা কুব্জ (কুঁজো) হয়ে যায়

৩. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা  { | কম্পাস বিন্দু | অভিমুখ | অবস্থানগত সম্পর্ক  | সম্পর্ক | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

অর্থ: উত্তর ও পশ্চিম দিকের মধ্যবর্তী একটি কম্পাসবিন্দু, যা ৩১৫ ডিগ্রী নির্দেশ করে।

সমার্থক শব্দাবলি: উত্তরপশ্চিম দিক, উত্তরপশ্চিম, উঃপঃ, বায়ু, বায়ুকো
ইংরেজি:
northwest, nor'-west, northwestward, NW


সূত্র :