গ্যাস (রসায়নবিজ্ঞান)
গ্যাস (অভিধান)
বস্তুর মৌলিক ৪টি অবস্থাদশার একটি। অপর দুটি দশা হলো-কঠিন, তরল
ও প্লাজমা। গ্যাসকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। এই ভাগ তিনটি হলো-
- মৌলিক: একটি মৌলিক
পদার্থের বায়বীয় দশা। আদরশ্ তাপ ও চাপের বিচারে যে সকল মৌলিক পদার্থ গ্যাসীয়
দশায় থাকে, সেগুলো হলো-
অক্সিজেন,
আর্গন,
ক্লোরিন
ক্রিপ্টন,
জেনন,
নাইট্রোজেন,
নিয়ন,
ফ্লোরিন,
রেডন,
হাইড্রোজেন ও
হিলিয়াম।
এর ভিতরে কিছু গ্যাসীয় মৌলিক পদার্থ আছে, যেগুলো রাসায়নিক ক্রিয়ার বিচারে
নিষ্ক্রিয়। এই জাতীয় গ্যাসকে নিষ্ক্রিয় বা
মহার্ঘ গ্যাস বলা হয়।
এই শ্রেণির মৌলিক পদার্থগুলো হলো
আর্গন,
ক্রিপ্টন,
জেনন,
নিয়ন,
রেডন
ও
হিলিয়াম।
- যৌগিক: রাসায়নিক বিক্রিয়ার দ্বারা সৃষ্ট
যৌগিক পদার্থের বায়বীয় দশা। যেমন-
হাইড্রোজেন সালফাইড, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি। এর সংখ্যা অসংখ্য
- মিশ্র: একাধিক মৌলিক
বা যৌগিক গ্যাসের সংমিশ্রণ। যেমন- প্রাকৃতিক বাতাস, এর সংখ্যা অসংখ্য।
গ্যাসের প্রকৃতি যাই
হোক। এর ভৌতধর্ম কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো হলো
- গ্যাসীয় অবস্থায়
পদার্থের অণুগুলো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে। ফলে তরল বা কঠিন পদার্থের তুলনায়
এদের ঘনত্ব কম হয়।
- গ্যাস আবদ্ধ
পাত্রে রাখলে, তার পরিমাণ যাই হোক না কেন, তা ওই পাত্রের পুরাটাই জুড়ে ছড়িয়ে
থাকে। ফলে পাত্রের আয়তনের ও গ্যাসের পরিমাণের বিচারে ঘনত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
- কঠিন বা তরল
পদার্থের বিচারে তাপ ও চাপে সম্প্রসারণ ও সংকোচন অনেক বেশি হয়।
- বিভিন্ন গ্যাসের
সংমিশ্রণে, প্রতিটি গ্যাসের অণু সমসত্ত্ব মিশ্রণে পৌঁছায়।
- গ্যাস যে পাত্রে
আবদ্ধ করা হয়, তার সবদিকের দেওয়ালে সমানভাবে শক্তি প্রয়োগ করে। প্রতি একক আয়তনে
এই চাপ শক্তিকে গ্যাসের চাপ বলা হয়।
গ্যাসের আয়তন কি হবে,
তা নির্ভর করে এর তাপমাত্রা এবং এর উপর প্রয়োগকৃত চাপের উপর। এই সাধারণ বৈশিষ্ট্য
ব্যাখ্যা করা হয়, তিনটি বৈজ্ঞানিক সূত্রের দ্বারা। এই সূত্র তিনটি হলো
১. বয়েলের সূত্র:
১৬৬২ খ্রিষ্টাব্দে আইরিশ
বিজ্ঞানী রবার্ট বয়েল এই সূত্রটি দেন। এই সূত্রটি হলো
'স্থির
তাপমাত্রায় কোন নির্দিষ্ট ভর যে কোন গ্যাসের আয়তন তার চাপের বিপরীত অনুপাত'
অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট তাপামাত্রায় গ্যাসে চাপ দ্বিগুণ বৃদ্ধি করলে, আয়তন
অর্ধেক কমে যায়। আবার চাপ অর্ধেক বৃদ্ধি করলে, আয়তন দ্বিগুণ হয়।
ধরা যাক, কোনো গ্যাসের
P=
কোনো নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ
V
= উক্ত গ্যাসের আয়তন।
তাহলে বয়েলের সূত্রানুসারে,
V∞1/P
হবে।
২. চার্লসের সূত্র: ১৭৭৮
খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী চার্লস গ্যাসের দ্বিতীয় দ্বিতীয় সূত্র দেন। এই সূত্রটি
হলো
'স্থির চাপে কোনো নির্দিষ্ট ভর
গ্যাসের আয়তন তার পরমতাপমাত্রার সমানুপাতিক।'
অর্থাৎ, যদি
P
=গ্যাসের স্থির চাপ
V
=
উক্ত গ্যাসের আয়তন।
T
=
উক্ত গ্যাসের তাপমাত্রা
হয়,
তাহলে
V∞T
হবে।
২. বয়েল ও চার্লসের সমন্বিত সূত্র বা চাপের সূত্র: প্রথম দুটি সূত্রের সমন্বয়ে নতুন
চূড়ান্ত সূত্র তৈরি হয়েছে। এই সূত্র হলো-
স্থির আয়তনের কোনো নির্দিষ্ট ভর
গ্যাসের চাপ তার পরমতাপমাত্রার সমানুপাতিক।'
অর্থাৎ,
বয়েলের সূত্রানুসারে
V∞1/P
চার্লসের সূত্রানুসারে
V∞T
উভয় সূত্রে সমন্বয়ে হবে
V∞1/P ×T
[যখন
P
ও
T
উভয়ই পরিবর্তনশীল]