অর্থ: এক প্রকার
বায়বীয়,
অধাতব,
মৌলিক পদার্থ।
এটি হ্যালোজেন গ্রুপের
মৌল। ভূত্বকে ০.০৬৫% ফ্লোরিন পাওয়া যায়।
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এর রঙ ফ্যাকাশে হলুদ।
প্রতীক
F
রাসায়নিক সংকেত
F2
পারমাণবিক সংখ্যা ৯
পারমাণবিক ভর ১২৬.৯০৪৫
গলনাঙ্ক : -১৮৮.১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস
স্ফুটনাঙ্ক : -১৮৮.১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস
হিমাঙ্ক -২১৯.৬১ ডিগ্রি সেলসিয়াস
ঘনত্ব ১.৬৯৬।
ইলেক্ট্রোন বিন্যাস 1s22s22p5
এই মৌলটি সর্বাধিক বিদ্যুৎঋণাত্মক এবং অধাতব মৌলগুলোর ভিতরে সর্বাধিক রাসায়নিকভাবে
সক্রিয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই মৌলটি
আয়োডিন,
গন্ধক,
ফসফরাস,
ব্রোমিন এবং অধিকাংশ
ধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে।
ফ্লোরিন আবিষ্কারের বহু আগে থেকে মানুষ ফ্লোরোস্পার বা ফ্লোরাইট
(CaF2
)-এর
সাথে পরিচিত ছিল। রঙিন পাথর হিসেবে পাথর সংগ্রহকারীদের কাছে এই ফ্লোরাইটের বেশ কদর
ছিল। কিন্তু এর অন্যতম উপাদান ফ্লোরিন সম্পর্কে বিশেষ ধারণা গড়ে উঠতে ঊনবিংশ
শতাব্দী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
ফ্লোরিন সম্পর্কে আগ্রহ গড়ে ঊঠেছিল হাইড্রোফ্লোরিক এ্যাসিডের সূত্রে। যতদূর জানা
যায়, ১৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে নুরনবার্গের কারিগর এইচ সন্হার্ড একে কাঁচক্ষয়কারী উপাদান
হিসেবে সিলিসিক এ্যাসিডকে নির্দেশিত করেছিলেন। পরে জানা যায়, কাঁচক্ষয়কারী ওই
এ্যাসিডটি ছিল হাইড্রোফ্লোরিক এ্যাসিড। ১৭৭১ খ্রিষ্টাব্দে কার্ল উইলহেম শিলে
গবেষণাগারে হাইড্রোফ্লোরিক এ্যাসিড তৈরি করেন। সে সময় এর নামকরণ করা হয়েছিল সুইডিশ
এ্যাসিড। এই এ্যাসিডের সূত্রে বিজ্ঞানীরা ধারণা করতে থাকেন যে, এই এ্যাসিডে কোনো
মৌলিক পদার্থ আছে। ফলে এই এ্যাসিডের অন্তর্গত মৌলিক পদার্থ আবিষ্কারের একটি নতুন
প্রচেষ্টা শুরু হলো বিজ্ঞানীদের মধ্যে।
১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে গে লুসাক এবং
থেনার্ড নামক দুজন বিজ্ঞানী ফ্লোস্ফারের সাথে হাইড্রোফ্লোরিক এ্যাসিডের মিশ্রণ
উত্তপ্ত করে অপেক্ষাকৃত বিশুদ্ধ হাইড্রোফ্লোরিক এ্যাসিড পান, কিন্তু ফ্লোরিন অধরা
থেকে যায়। এ পযর্ন্ত ধারণা ছিল হাইড্রোফ্লোরিক এ্যাসিডে অক্সিজেন আছে। এইচ ডেভি এবং
এ. এম্পায়ার প্রথম ঘোষণা দেন যে, হাইড্রোফ্লোরিক এ্যাসিডে কোনো অক্সিজেন নেই এবং
এই এ্যাসিড অক্সিজেন-বিহীন অনেকটা হাইড্রোক্লোরিক এ্যাসিডের মতো। ডেভিড এই
এ্যাসিডের ভিতরে অবস্থিত মৌলিক পদার্থ হিসেবে যে বস্তুটিকে অনুমান করেছিলেন তার
নামকরণ করেন 'ফ্লোরিন'। কিন্তু তিনি মুক্ত ফ্লোরিন প্রস্তুত করে বিজ্ঞানীদের সামনে
উপস্থিত করতে পারেন নি। তবে প্রচুর ফ্লোরিন-ঘটিত যৌগিক পদার্থ নিয়ে গবেষণা করতে
গিয়ে ফ্লোরিনের বিষক্রিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই গবেষণা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
তবে ফ্লোরিনের পারমাণবিক ভর ১৯.০৬ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। এরপর বিজ্ঞানীরা ফ্লোরিন
নিয়ে গবেষণা বন্ধ রাখেন। ডেভির মৃত্যুর পর, তাঁর ছাত্র এম ফ্যারাডে ১৮৩৪
খ্রিষ্টাব্দে ফ্লোরিন আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে
গবেষণা ত্যাগ করেন।
১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে আয়ারল্যান্ডের নক্স ভ্রাতৃদ্বয় ফ্লোরিন নিয়ে
গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু এঁরা ফ্লোরিনের বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং এঁদের এক
ভাই মারা যান। এই গবেষণায় রত দুজন বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী পি ল্যায়েটে এবং ফরাসী
বিজ্ঞানী ডি. নিকলস ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মারা যান। এরপর ফ্রান্সের 'ইকলো
পলিটেকনিকের অধ্যাপক ই ফ্রেমি ১৮৫৪ থেকে ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত গবেষণা করেন।
তিনি অনার্দ্র এবং গলিত ফ্লোরাইডকে তড়িৎ-বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হন। কিন্তু এই
বিশ্লেষণের মাধ্যমে আদর্শ ফ্লোরিন সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন। তবে তিনি মুক্ত ফ্লোরিন
আবিষ্কারের পথটি খুলে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে সামান্য পরিমাণ
ফ্লোরিন সংগ্রহ করতে সক্ষম হন জি গোরে। কিন্তু সংগ্রহের পরপরই হাইড্রোজেনের
সাথে বিক্রিয়া করে এই নমুনা বিস্ফোরিত হয়। এরপর আরও অনেক বিজ্ঞানী মুক্ত ফ্লোরিন
তৈরিতে এগিয়ে আসেন, এঁদের সকলেই একে একে ব্যর্থ হতে থাকেন। ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে
জুন, এ ময়েস প্রথম প্যারিস এ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সে-কে জানান যে, তিনি ফ্লোরিন
মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিই তিনি প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু
প্যারিস এ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের পরিদর্শকদের সামনে যখন এই পরীক্ষাটি করেন,
তখন সফলভাবে তা সম্পন্ন করেন। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তরল ফ্লোরিন তৈরিতে সফল হন।