বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: তোরা সব জয়ধ্বনি কর
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
আস্ল এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল,
সিন্ধু-পারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙ্ল আগল!
মৃত্যু-গহন অন্ধকূপে, মহাকালের চণ্ড-রূপে ধূম্র-ধূপে
বজ্র-শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ঙ্কর!
ওরে ঐ আসছে ভয়ঙ্কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
দ্বাদশ রবির বহ্নি-জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন-কটায়,
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!
বিন্দু তাহার নয়ন-জলে
সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে
কপোল-তলে!
বিশ্ব-মায়ের আসন তারি বিপুল বাহুর 'পর
হাঁকে ঐ ''জয় প্রলয়ংকর!''
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
মাভৈঃ, ওরে মাভৈঃ, মাভৈঃ, মাভৈঃ জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে
জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ঐ বিনাশে।
এবার মহা-নিশার শেষে
আসবে ঊষা অরুণ হেসে
করুণ্ বেশে!
দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু-চাঁদের কর!
আলো তার ভরবে এবার ঘর।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
-
রচনাকাল ও স্থান:
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতজুড়ে চলছিল অসহযোগ আন্দোলন। এই সূত্রে ১৫-১৬ এপ্রিল
কংগ্রের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রামে। এই সময় দেশবন্ধু
চিত্তরঞ্জন দাস কারাগারে ছিলেন। তাই তাঁর স্ত্রী বাসন্তী দেবী এই সম্মেলনের
সভাপতিত্ব করেন। এই সভায় ব্রিটিশদের সকল বিধিতে বাধা দেওয়ার নতুন অঙ্গীকার
ব্যক্ত করা হয়। কুমিল্লায় বসে এই সংবাদ শুনে নজরুল উল্লসিত হন এবং এই গানটি রচনা
করেন।
এই সময় নজরুল নৈহাটিতে ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে 'বিজলী' পত্রিকার সম্পাদক সুবোধ রায়ের আমন্ত্রণে নজরুল নৈহাটি যান। সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে তিনি এই মাসেই বিপ্লবী বিজয় মোদক ও হামিদুল হকের আমন্ত্রণে হুগলী যান। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে নজরুল কুমিল্লায় যান এবং কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে বীরেন্দ্র সেনগুপ্তের বাড়িতে অতিথি হিসেবে প্রায় চার মাস অতিবাহিত করেন। এই বাড়িতেই তিনি এই গানটি রচনা করেছিলেন। ধারণা করা হয়, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল (বৈশাখ ১৩২৯) মাসে নজরুল ইসলাম এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল নজরুল ইসলামের ২২ বৎসর ১১ মাস।
কোনো এক সময় ৮ স্তবক বিশিষ্ট এই কবিতার প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্তবকে নিতাই ঘটক সুরারোপ করে গানে রূপান্তর করেন।
উল্লেখ্য, ১৯১০-১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে নজরুল ইসলামের লেটো পালা 'মেঘনাদ বধ'-এ গানটিতে 'তোরা সব জয়ধ্বনি কর' অংশের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া এর অঙ্গবিন্যাসও ছিল বর্তমানে প্রচলিত 'তোরা সব জয়ধ্বনি কর' এর অনুরূপ।
ও রে কপি সেনাদল, তোরা সব জয়ধ্বনি কর [তথ্য]
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল (১৩২৯ বৈশাখ) মাসে নজরুল নতুন করে এই গানটি রচনা করেছিলেন নতুন ভাবনায়।
- গ্রন্থ:
- অগ্নি-বীণা
- প্রথম সংস্করণ [কার্তিক ১৩২৯ বঙ্গাব্দ। ২৫শে অক্টোবর, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ। শিরোনাম: প্রলয়োল্লাস।]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। প্রথম খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা জুন ২০১২।
অগ্নিবীণা। শিরোনাম - প্রলয়োল্লাস। পৃষ্ঠা: ৫-৭।
-
নজরুল গীতিকা।
- প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। জাতীয় সঙ্গীত। ১১। রাগমালা (মালকৌষ-ভৈরব-মেঘ-বসন্ত-হিন্দোল-শ্রীপঞ্চম নটনারায়ণ)। পৃষ্ঠা ৩৬-৩৯]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা জুন ২০১২। নজরুল গীতিকা। নজরুল গীতিকা। জাতীয় সঙ্গীত। ২৭। রাগমালা (মালকৌষ-ভৈরব-মেঘ-বসন্ত-হিন্দোল-শ্রীপঞ্চম নটনারায়ণ)। পৃষ্ঠা: ১৯০-১৯১]
- পত্রিকা:
-
প্রবাসী।
[জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯ বঙ্গাব্দ (মে-জুন ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ)। শিরোনাম: প্রলয়োল্লাস। পৃষ্ঠা ১৯১]
[নমুনা]
-
বিজলী [৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ। (শুক্রবার ১৯ মে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ)] (শুক্রবার ১৯ মে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ)]
-
নারায়ণ । [আষাঢ়, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ। (জুন-জুলাই, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ)]
- রেকর্ড:
-
কলাম্বিয়া [আগষ্ট
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৫৬)। রেকর্ড জিই ৭৫৪৮। শিল্পী: বাংলার সন্তান
(গিরীন চক্রবর্তী ও অন্যান্য)। উল্লেখ্য কবি নজরুল ইন্সটিটিউট থেকে প্রকাশিত 'নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চম খণ্ড -এ রেকর্ডের সংখ্যা উল্লেখ আছে জি.ই. ৭৪৫৮'।
-
স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন
দাশ।
[নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি,
পঞ্চম খণ্ড। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট,
ঢাকা] ১৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৮১-৮৬।
[নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: স্বদেশ
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য