অ
[বর্ণ, লিপি, শব্দ, ব্যাকরণগত উপদান]
বর্ণ উৎস: ব্রাহ্মীলিপি>কুষাণলিপি>গুপ্তলিপি>বাংলা
বাংলা
বর্ণমালা'র এবং
স্বরবর্ণ সেটের
প্রথম বর্ণ। এই
বর্ণের উপরে পূর্ণ মাত্রা আছে। এই বর্ণের কোনো কার-চিহ্ন নেই।
ব্যঞ্জনবর্ণের
সাথে এই বর্ণ যুক্ত হয়ে
ব্যঞ্জনধ্বনিকে
উচ্চারণযোগ্য করে তোলে। যেমন–
ক্ + অ=ক।
অন্যান্য
লিপির মতই
ব্রাহ্মীলিপি থেকে করমবিবর্তনের
ধারায়
বাংলা লিপি'র 'অ'বর্ণের চিহ্নটি উৎপন্ন হয়েছে।
ব্রাহ্মীলিপির ক্রমবিবর্তনের
ধারায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দের দিকে যে রূপটি ধারণ করেছিল,
তারই ক্রমবিবর্তনের ধারা অনুসরণ করে, এই বর্ণটি
বর্তমান রূপ লাভ করেছে । খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দ থেকে পরবর্তী খ্রিষ্টপূর্ব
১০০ অব্দের মধ্যে ব্রাহ্মীলিপির 'অ' নানা লিপিকারদের হাতে নানা রূপ লাভ করেছিল। এর
কিছু উল্লেখযোগ্য নমুনা নিচে দেখানো হলো
উত্তর ভারতে কুষাণদের আধিপত্য বিস্তারের সূত্রে
কুষাণ রাজবংশের
সূচনা ঘটেছিল। এই বংশের অন্যতম সম্রাট
কণিষ্ক, আনুমানিক ১৫১ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। এই রাজবংশের
রাজত্বকালে এবং পরবর্তী
সাতবাহন রাজবংশ এবং
গুপ্ত রাজবংশ-এর শাসনের প্রথম অধ্যায় পর্যন্ত উত্তর, মধ্য এবং
পূর্ব ভারতে প্রতিষ্ঠিত
ব্রাহ্মীলিপির নানা রকম পরিবর্তন ঘটে। পরিবর্তিত এই বিশেষ রূপকে বলা হয়
কুষাণলিপি। মোটা দাগে এই লিপির
সময়কাল ধরা হয় ১০০-৩০০ খ্রিষ্টাব্দ।
গুপ্ত রাজবংশের সূচনা হয়েছিল ২৪০ খ্রিষ্টাব্দে। আর এর অন্তিমকাল
ধরা হয়ে থাকে ৫১০ খ্রিষ্টাব্দ। এই সময়
ব্রাহ্মীলিপির আবার বিবর্তিত হয়।
গুপ্তরাজবংশের শাসনামলে এই বিবর্তিত রূপকে বলা হয়
গুপ্তলিপি।
ব্রাহ্মীলিপি'র উল্লেখযোগ্য
প্রকরণসহ
কুষাণলিপি ও
গুপ্তলিপির ক্রমবিবর্তন দেখানো হল।

ব্রাহ্মীলিপি থেকে
গুপ্তলিপি পর্যন্ত,
অ বর্ণের রূপ সাধারণভাবে একই মনে হয়। খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ
থেকে নবম শতাব্দী পর্যন্ত এই লিপি বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এই
পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য দিক হলো- বর্ণের রেখাগুলো ব্যাপকভাবে বক্ররূপ
লাভ করে। এই লিপির বক্রতার জন্যই এর নাম দেওয়া হয়েছে-
কুটিললিপি
থেকে আধুনিক বাংলা লিপির উদ্ভব হয়।
৬০০-৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতর লিখিত
কুটিললিপি'র
প্রথম দিকে অ-বর্ণটি মাত্রাহীন ছিল। এরপর বিভিন্ন পরিবর্তনের
ভিতর দিয়ে আধুনিক অ-এর চিহ্ন সৃষ্টি হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীর পরে। নিচের ছকে
কুটিললিপি
থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত অ-এর ক্রমবিবর্তনের
রূপটি দেখানো হল।
১২শ-১৩শ খ্রিষ্টাব্দের পরবর্তী সময়ের লিপি
চর্যাগীতি ও
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন -এ
পাওয়া যায় ।
অবশ্য
বিভিন্ন লিপিকারদের হাতে এই বর্ণটির হেরফের ঘটায়, কোন
বর্ণটি আদর্শ ছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না।
তবে মোটামুটিভাবে এ ক্ষেত্রে যে রূপটিকে
ধরা যেতে পারে তা নিচের ছকে দেখানো হল।

তথ্যসূত্র:
১. প্রাচীন ভারতীয় লিপিমালা।গৌরীশঙ্কর ওঝা। অনুবাদ ও সম্পাদনা :
মনীন্দ্র নাথ সমাজদার। বাংলা একাডেমী ঢাকা। আষাঢ় ১৩৯৬, জুন ১৯৮৯।
২. বাঙালা লিপির উৎস ও বিকাশের অজানা ইতিহাস। এস,এম. লুৎফর
রহমান। বাংলা একাডেমী ঢাকা। ফাল্গুন ১৪১১, মার্চ ২০০৫।
৩. বর্ণমালার উদ্ভববিকাশ ও লিপিসভ্যতার ইতিবৃত্ত। দেওয়ান গোলাম
মোর্তজা। বাংলা একাডেমী ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ্য ১৪১০, মে ২০০৩।
৪. সংস্কৃত বর্ণমালার ইতিহাস। রবীন্দ্রনাথ ঘোষঠাকুর। বাংলা
একাডেমী ঢাকা। কার্তিক ১৩৮৫, নভেম্বরে ১৯৭৮।