মূলত ইউরোপে আগত ক্রো-ম্যাগনান তথা আদিম মানুষের সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। এরা ইউরোপের উল্লেখযোগ্য সকল নিয়ানডার্থালদের গুহাই এরা দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। এই সময়ের ভিতরে ভিতরে এরা ইউরোপে অন্যতম জাতিতে পরিণত হয়েছিল। এরা ইউরোপের আইবেরিয়ান উপদ্বীপ (জিব্রাল্টার) থেকে রাশিয়ার উরাল অঞ্চল পর্যন্ত নানা শাখায় বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পাওয়া গেছে প্রায়য় ৩৫০টি চিত্রকর্ম-গুহা। এর ভিতরে প্রায় অর্ধেক নমুনা পাওয়া গেছে উত্তর স্পেন এবং দক্ষিণ ফ্রান্সে। সামগ্রিকভাবে ইউরোপে আগত ক্রো-ম্যাগনানদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটেছিল চারটি পর্যায়ে। এই পর্যায় চারটি হলো-
- অরিগ্ন্যাসিয়ান সভ্যতা: ব্যাপ্তীকাল ৪৩ থেকে ২৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই সময়ের ভিতরে ইউরোপের বিভিন্ন গুহায় পাওয়া পাওয়া গেছে- মূর্তি এবং সঙ্গীতযন্ত্র হিসেবে বাঁশি। ক্রো-ম্যাগনান সভ্যতার বিকাশকালের আদিম পর্যায়ে মানুযের ভাষার বিকাশ ঘটেছিল চিত্রকর্ম এবং মৌখিক ভাষার ক্রমবিবর্তনের ধারায়। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সূত্রে এর চিত্রকর্মের নমুনা পাওয়া গেলেও- মৌখিক ভাষার নমুনা পাওয়া যায় না। সে সময়ে নির্মিত মাতৃমূর্তিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়- ভাষ্কর্য তৈরিতে এরা পারদর্শী হয়ে উঠেছিল। পাশাপাশি বিকাশলাভ করেছিল চিত্রকর্ম। এই সময়ে প্রাপ্ত বাঁশি এবং নৃত্যশীলা মূর্তি। এগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য নমুনাগুলো হলো-
- গেইসেঙ্ক্লোস্টের্ বাঁশি: জারমানির গেইসেঙ্ক্লোস্টের্লে (Geissenklösterle) গুহায় পাওয়া গিয়েছিল হাতির দাঁতের তৈরি বাঁশি। এই বাঁশিটির বয়স ধরা হয়েছে- আনুমানিক ৪৩ থেকে ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
- হোহলে ফেল্স বাঁশি: খ্রিষ্টপূর্ব ৪০ থেকে ৩৫ হাজর অব্দের ভিতরে গ্রিফোন শকুনের ডানার হাড় থেকে এই বাঁশিটি তৈরি করা হয়েছিল।
- গালগেনবার্গের ভেনাস: এটি একটি নৃত্যশীলা নারীমূর্তি। সর্পমণির দ্বারানির্মিত এই মূর্তিটি তৈরি হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে।
ধনুকাকার
ততযন্ত্রের
বাদ্য যন্ত্রে মূল কাঠামো হয়ে থাকে ধনুকের মতো বাঁকানো। আদি ধনুকাকার বাদ্যযন্ত্রে
ধাতব তারের পরিবর্তে, প্রাণীর অন্ত্র ব্যবহৃত হতো।
এই জাতীয় বাদ্যযন্ত্র এখনো আফ্রিকায় ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে আফ্রিকা নাইজেরিয়া
ওবু জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা ধনুকাকার ততযন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। এই যন্ত্রের কাঠামো
হিসেবে ব্যবহার করা কাঠের তৈরি বাঁকা দণ্ড এবং ক্রিয়াত্মক অংশ ব্যবহার করা হয় একটি
ধাতব তার। এই জাতীয় যন্ত্রে সর্বপ্রাচীন নমুনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়- ফ্রান্সের 'ট্রোইস
ফ্রেরেস' গুহায় খোদিত চিত্রকর্মটিকে। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৩,০০০ অব্দের দিকে এই
চিত্রকর্মটি অঙ্কিত হয়েছিল।
সাইবেরিয়া এবং মঙ্গোলিয়ার ভিতর দিয়ে মূল চীন ভূখণ্ডে মানুষ প্রবেশ করেছিলম আনুমানিক
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫ হাজার অব্দের দিকে।
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে চীনের হেনান প্রদেশের উয়ান কাউন্টির জিয়াহুতে নিওলিথিক জিয়াহুতে
খনন করা সময় পাওয়া যায়- খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ অব্দের একটি বাঁশি । প্রাচীন
চীনা বাদ্যযন্ত্রে নমুনা পাওয়া গেছে প্রায় ৬০০০ খ্রিষ্টপূর্বের দিকে।
চিনের জিয়াহু গুডি বাঁশি |
এই বাঁশিটি জিয়াহু গুডি নামে পরিচিত। লালমুকুট ক্রেনের লম্বা ঠ্যাং দিয়ে এই বাঁশিটি তৈরি করা হয়েছিল।এর
পরিপাম ২০সেমি × ১.১ সেমি (৭.৯ ইঞ্চি × ০.৪ ইঞ্চি)। এই বাঁশির গায়ে ফুটোর সংখ্যা এক থেকে আট পর্যন্ত হতো। চার চিত্র যুক্ত বাঙশিতে উপরের দিকে ৩টি ফুটো এবং নিচের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলের জন্য ১টি ফুটো থাকতো।খ্রিষ্টপূর্ব ২৬০০ অব্দের দিকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া উর নগররাষ্ট্রের রাজকীয় কবরস্থানে প্রাপ্ত দ্রব্যাদির ভিতরে ছিল বহু বাদ্যযন্ত্র। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য বাদ্য যন্ত্র ছিল বীণা। এই যন্ত্রগুলির বেশিরভাগই কাঠের তবে তাতে রূপালী আস্তরণ যুক্ত করা হয়েছিল। নীল এবং সাদা মোজাইকযুক্ত বীণার সাউন্ড বক্স তৈরি করা হয়েছিল। এতে যুক্ত ছিল রূপার ঢালাইকৃত গরুর মাথা এবং রূপার তৈরি বাদন দণ্ড। আরেকটি বীণার আকার ছিল সমুদ্রগামী জাহাজের মতো ।
রানি পুয়বির বীণা |
রানি পুয়বির বাঁশি |
১৪০০ অব্দের দিকে প্রাচীন আমোরিটে প্রাপ্ত লিপি |
খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ অব্দের দিকে প্রাচীন আমোরিটে বর্তমান
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রাচীন নগরীতে
যে সকল ফলক পাওয়া গেছে, তাতে কীলকলিপিতে লেখা গান লিপিবদ্ধ ছিল। একে সাধারণভাবে বলা
হয় হুররিয়ান সঙ্গীত। এটি ছিল মূলত নিক্কাল দেবীর প্রশস্তিমূলক গানের স্বরলিপি।
[কাজ চলছে]