৪০ থেকে ৩০ হাজার অব্দের ভিতরে ম্যামোথ দাঁতে খোদাই করা হোহলে ফেল্স ভেনাস |
ধর্মীয় চেতনায় প্রতীকী ধর্মের আদিমস্তরে বিকাশলাভ করেছিল মাতৃদেবী। এর প্রতীক ছিল যোনী চিহ্ন। এর পাশাপাশি ছিল কাপ ও পৃথকভাবে অঙ্কিত রেখা। এর নমুনা উৎকৃষ্ট নমুনা পাওয়া যায়। ৫ থেকে ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস-দের দ্বারা নির্মিত টান-টানের ভেনাস-কে মাতৃদেবী আদিম নমুনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে এই মূর্তিটিতে মাতৃদেবীর দৈহিক রূপ ততটা স্পষ্ট খুঁজে পাওয়া যায় না। মাতৃদেবীর আদিমরূপ অনেকাংশেই স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে ২,৩০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে হোমো ইরেক্টাসদের সৃষ্ট আদিম মাতৃদেবী বেরেখাত রানের ভেনাসতে। পাথরের তৈরি এই মূর্তিটি পাওয়া গেছে বর্তমান ইস্রায়েল অধিকৃত গোলন মালভূমি। এই মূর্তিতে স্পষ্ট স্তনের রূপ লক্ষ্য করা যায়। যোনি চিহ্ন রেখাকারে প্রথম লক্ষ্য করা যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৪০ থেকে ৩০ হাজার অব্দের ভিতরে ম্যামোথ দাঁতে খোদাই করে হোহলে ফেল্স ভেনাস-এ। এই মূর্তিটি তৈরি করেছিল ক্রো-ম্যাগনানরা। এই ভেনাসের মূর্তিতে পেটের তলদেশে রেখার দ্বারা যোনি চিহ্ন দেখানো হয়েছে। এরপর ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাপ্ত ভেনাসের মূর্তিতে যোনি চিহ্ন দেখা গেছে রেখাকারেই।
আব্রি-ক্যাস্টানেট যোনি-চিহ্ন ও কাপচিহ্ন |
কালক্রমে মাতৃদেবীর যোনি
চিহ্নকে পৃথকভাবে উপস্থাপন করা শুরু হয়েছিল প্রতীক হিসেবে
এর সর্বপ্রাচীন স্পষ্ট নমুনা পাওয়া যায় ৩৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে অঙ্কিত
আব্রি-ক্যাস্টানেট । এর পরবর্তী সময়ে অঙ্কিত অনেক যোনিচিহ্নের নমুনা পাওয়া গেছে
ইউরেশিয়া অঞ্চলে।
আফ্রিকা থেকে আগত জনগোষ্ঠীর একাংশ বর্তমান
সিরিয়ার উত্তরাংশ, তুরস্কের উত্তরাংশ এবং
ইরানের খুযেস্তান প্রদেশের অঞ্চল জুড়ে
মেসোপটেমিয়া সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এই বিস্তৃত অঞ্চলের কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে
বর্তমান ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলকেই বিশেভাবে
মেসোপটেমিয়া সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু ধরা হয়। এই অঞ্চলের
খ্রিষ্টপূর্ব ৭০৯০ অব্দের দিকে
উত্তর মেসোপটেমিয়ায় গড়ে উঠেছিল জারেমা নগরী। এরা মাতৃদেবীর পূজা করতো।
এদের ভিতরে দেবীমূর্তির পূজার পাশাপাশি যোনি চিহ্নকে বিশেষ মর্যাদা দিত।
সামারায় প্রাপ্ত খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ অব্দের মাতৃদেবী |
দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ায়
সামারা সভ্যতার বিকাশলাভ করেছিল
ঘটেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০০ থেকে ৪৮০০ অব্দ পর্যন্ত। মূলত এই
সভ্যতা হাস্সুনা সভ্যতার সাথে মিশে গিয়েছিল। এই কারণে একে অনেক সময় একে
সামারা-হাস্সুনা সভ্যতা বলা হয়। এই সভ্যতার
ধারবাইকতায় উদ্ভব হয়েছিল উবাইদ (Ubaid)
সভ্যতার। এর সময় ধরা হয় খ্রিষ্টপূর্ব
৬৫০০
থেকে ৩৮০০ অব্দ পর্যন্ত। ৫৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এরা এরিদু নগরী প্রতিষ্ঠা করে এবং এই নগরেকন্দ্রিক
সভ্যতা বিকাশলাভ করে বর্তমান ইরাকে দক্ষিণাঞ্চলের পারশ্য উপসাগর পর্যন্ত।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫৩০০ থেকে ৪৭০০ অব্দের ভিতরে এই সভ্যতা মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী
উন্নতর অবস্থায় পৌঁছেছিল। এদের তৈরি পাত্রগুলোর গায়ে অলঙ্কৃত করা হতো ছোটো ছোটো
মোটিফ ব্যবহার করা হতো। এই সময়ের ভিতরে এই অঞ্চলে শস্য, উর্বরতা,
যৌনাচারের দেবী হিসেবে মাতৃদেবীর পূজা হতো। এর পাশাপাশি হালাফ
সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৬১০০ থেকে ৫১০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে
দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ায়। এর অবস্থান ছিল বর্তমান
দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক, সিরিয়া এবং উত্তর ইরাক অঞ্চল জুড়ে।
কালের ক্রমবিবর্তনের ধারায় মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে
উঠছিল সুমেরীয় সভ্যতা। এই সভ্যতায় সৃষ্টি হয়েছিল প্রাচীন সুমেরীয় চিত্রলিপি।
প্রাক-সুমেরিয়ান প্রতীক হিসেবে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দের দিকে
যোনি চিহ্ন যুক্ত হয়েছিল নারী অর্থে। এর সাথে কাপড়ের চিহ্ন যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছিল 'প্রাপ্তবয়স্কা'র
প্রতীক।
|
|
|
নারী |
কাপড় |
প্রাপ্তবয়স্কা |
মিশরের মাতৃদেবী হাথোর |
আক্কাদিয়ান পৌরাণিক কাহিনিতে নারী এবং ভূমিকে চাষযোগ্যা হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে। ভূমি
এবং যোনিকে
কর্ষণে ক্ষেত্র হিসেবে মান্য করা হতো। প্রাচীন মিশরে যোনিকে সুখ এবং পুনর্জনমের
আধার হিসেবে মান করা হয়েছে। সেখানে সন্তান প্রসবের দেবী হাথোর ছিলেন মাতৃদেবীতে
পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সৃষ্টিকর্তার মাতা এবং প্রেমিকা। তাঁর মূর্তিতে
স্পষ্টভাবে যোনিচিহ্ন স্থাপিত করা হতো।
গ্রিস এবং রোমান পৌরাণিক যুগে প্রেম বা মাতৃদেবীর মূর্তি থেকে যোনিচিহ্ন কিছুটা
আবরিত হয়ে পড়েছিল। এই সময়ের নগ্ন দেবীর মূর্তিগুলোতে ভগাঙ্কুর ও যোনিমুখ প্রদর্শন
বন্ধ হয়ে যায়। এর পরিবর্তে সুচারুভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে নারীর স্তনযুগল।
পক্ষান্তরে এই সময়ে পুরুষাঙ্গের প্রদর্শন প্রাধান্য পেয়েছিল ব্যাপকভাবে।
শিবলিঙ্গ |
ভারতবর্ষে
খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের দিকে পৌরাণিক পূজাচারে যোনি হয়ে উঠেছিল শক্তির আধার। শৈব
শক্তির সাথে আদিমাতা হয়ে উঠেছিলেন দেবী দুর্গা। এই পূজাচারে শিবলিঙ্গের সাথে
শক্তিরূপিনী দুর্গার যোনি যুক্ত করা হয়েছিল মাতৃভক্তিতে। এরূপ সম্মিলিত শিবলিঙ্গ
ভারতের অনেক মন্দিরেই দেখতে পাওয়া যায়।
ভারতীয় যোগশাস্ত্রে
যোনি মুদ্রা শক্তিসঞ্চয়নী মুদ্রা হিসেবে মান্য করা হয়।
এক্ষেত্রে দুই হাতের সমন্বয়ে যোনির রূপকরূপ তৈরি করা হয়।
সূত্র:
Signs and Symbles Their Design and Meaning/Adrian Frutiger/Translated by Andrew 1989 Bluhm/Van Nostrand Reinhold, New York
https://theconversation.com/when-did-the-vulva-become-obscene-130078