দেশী
উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে রাগ বিশেষ। পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডে-এর প্রণীত ক্রমিকপুস্তকমালিকা (ষষ্ঠ খণ্ড) অনুসারে‒ এই রাগ টোড়ির একটি প্রকরণ হিসেবে অনেকে এই রাগকে 'দেশী টোড়ি' বলে থাকেন।

১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে অহোবলের রচিত সঙ্গীত পারিজাত গ্রন্থের রাগ-প্রকরণ অধ্যয়ে [৪৩০] ষড়্জ গ্রাম আদি মূর্চ্ছনা (উত্তরমন্দ্রা মূর্চ্ছনা) থেকে এই রাগের উৎপত্তি হয়েছিল। এই রাগের ঋষভ ও ধৈবত কোমল। এর অংশস্বর ছিল ঋষভ। এই রাগের আরোহণে এবং আরোহণে গান্ধার ও নিষাদ বর্জিত ছিল। এই বিচারে এর আরোহ-অবরোহের স্বরবিন্যাস ছিল-
আরোহণ: স ঋ ম প ন র্স
অবরোহণ: র্স ন দ প ম গ ঋ স
গ্রাম: ষড়্জ্ গ্রাম
মূর্চ্ছনা : উত্তরমন্দ্রা
জাতি: ঔড়ব-সম্পূর্ণ
বাদীস্বর: ঋষভ
সমবাদী স্বর: ধৈবত
স্বরপ্রস্তর: সঋ মপ ধসন-নদ মপ গগ ঋস- ঋঋ সণ্ দ্ স। সঋ মপ ণণ ধমপ মপ গগ
উল্লেখ্য, সঙ্গীত-পারিজাতের শুদ্ধ গান্ধার এবং শুদ্ধ নিষাদ, বর্তমান কালে হয়ে গেছে কোমল গান্ধার ও কোমল নিষাদ। এর সাথে কোমল ঋষভ ও কোমল ধৈবত যুক্ত হলে- দেশী'র আরোহণ-অবরোহণ পাল্টে যাবে এবং তা হবে বর্তমান কালের ভৈরব ঠাটের মতো।

আরোহণ: স ঋ ম প ণ র্স
অবরোহণ: র্স ণ দ প ম জ্ঞ ঋ স
ঠাট: ভৈরবী

প্রাচীন দেশী রাগের এই রূপটি প্রচলিত নয়। বর্তমানে আশাবরী ঠাটের দেশী প্রচলিত।
আরোহণ: স র ম প ন র্স
অবরোহণ: র্স প দ, ম প, র জ্ঞ, স র, ণ্ স।
ঠাট: শাবরী
জাতি: ঔড়ব-সম্পূর্ণ
বাদীস্বর: পঞ্চম
সমবাদী স্বর: ঋষভ
অঙ্গ: উত্তরাঙ্গ
সময়: দিবা দ্বিতীয় প্রহর
পকড় :ম প জ্ঞ, স র ণ্ স।
বিভিন্ন গ্রন্থে এই রাগের প্রায় পাঁচ-ছয়টি প্রকার পাওয়া যায়।এতে কখনো কখনো শুদ্ধ ধৈবত ব্যবহার করা হয়। অনেকের মতে আধুনিক দেশী পূর্বাঙ্গে সারং এবং উত্তরাঙ্গে আশাবরী যুক্ত করে সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেকে মনে করেন- আশাবরীআড়ানা রাগের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে।

ভাতখণ্ডেজির প্রদর্শিত উঠাও হলো-
উঠাও : ণ্ স, র প জ্ঞ, র, ণ্ স, র ম প র ম প, দ প, ম প, জ্ঞ, র, প জ্ঞ র, ণ স।

কোনো কোনো মতে এই রাগটি আশাবরী ঠাটের ঔড়ব-ষাড়ব জাতীয় রাগ । এই মতে আরোহে গান্ধার ও নিষাদ বর্জিত এবং অবরোহে মধ্যম বর্জিত। যেমন

অন্য মতে এই রাগটি আশাবরী ঠাটের ঔড়ব-সম্পূর্ণ জাতীয় রাগ । এই মতে আরোহে গান্ধার ও ধৈবত বর্জিত । যেমন‒

এই রাগে আগে কোমল ঋষভ লাগানোর চল ছিল। সে সময় আশাবরী ঠাটেও কোমল ঋষভ ব্যবহার করা হতো। দেশীর এই রূপকে বলা হয়ে থাকে কোমল আশাবরী বা কোমল দেশী।

এই রাগের উৎপত্তির বিচারে মতভেদ আছে। এর একটি মত হলো- সারং ও আশাবরী রাগের সংমিশ্রণে এই রাগের উৎপত্তি হয়েছে।


তথ্যসূত্র: