পাণ্ডু
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে
ইনি ছিলেন চন্দ্রবংশীয় বিচিত্রবীর্য দ্বিতীয় ক্ষেত্রজ পুত্র এঁর প্রকৃত পিতা ছিলেন বেদব্যাস (কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন) বিচিত্রবীর্য অকালে মৃত্যুবরণ করলে, সত্যবতীর আদেশে কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন  বিচিত্রবীর্যের  স্ত্রী অম্বালিকার সাথে মিলিত হন সঙ্গমকালে অম্বালিকা  কৃষ্ণ-দ্বৈপায়নের বিশাল মূতি দেখে ভয়ে পাণ্ডুবর্ণা হয়ে যান এরই কারণে অম্বালিকা একটি পাণ্ডুবর্ণের পুত্র প্রসব করেন এই পুত্রই পাণ্ডু নামে খ্যাত হন

তাঁর বড়ভাই ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ ছিলেন বলে, পাণ্ডু রাজ্যভার গ্রহণ করেন কুন্তিভোজ তাঁর পালিতা কন্যা কুন্তীর জন্য স্বয়ংবর-সভার আয়োজন করলে, তিনি কুন্তীকে লাভ করেন পরে ভীষ্ম মদ্ররাজ শল্য-এর বোন মাদ্রীর সাথে পুনরায় পাণ্ডুর বিবাহ দেন

বিবাহের একমাস পর পাণ্ডু দিগ্বিজয়ে বের হন ইনি যুদ্ধজয়ে প্রাপ্ত ধনরাজি ধৃতরাষ্ট্র-এর অনুমতি নিয়ে ভীষ্ম, সত্যবতী, বিদুর প্রমুখের হাতে অর্পণ করেনএরপর তিনি মোট পাঁচটি মহাযজ্ঞ সম্পন্ন করেন

এর কিছুদিন পর ইনি কুন্তী ও  মাদ্রীকে সাথে করে হিমালয়ের দক্ষিণ পার্শ্বের বনে শিকারে যান। এই বনে তখন  কিন্দম মুনি হরিণের রূপ ধারণ করে একটি হরিণীর সাথে সঙ্গম করছিলেন। পাণ্ডু সঙ্গমরত মৃগযুগলকে পাঁচটি বাণ দ্বারা আঘাত করলেমৃগরূপী মারত্মভাবে আহত হন। মৃত্যুর আগে মুনি স্বমূর্তি ধারণ করে, পাণ্ডুকে অভিশাপ দিয়ে বলেন

'মৃগভ্রমেই আমার উপর শরনিক্ষেপ করিয়াছ, এ নিমিত্ত তোমার ব্রহ্মহত্যার পাপ হইবে না, কিন্তু সঙ্গমসময়ে আমাকে বধ করাতে তোমার যে পাপ হইয়াছে, তাহার ফল অবশ্যই তোমাকে ভোগ করিতে হইবে। তুমি যে সময়ে স্ত্রীসংসর্গ করিবে, সেই সময়ে তোমার মৃত্যু হইবে। তুমি যে পত্নীর সইত সংসর্গ করিয়া কালগ্রাসে পতিত হইবে, তিনি ভক্তিভাবে তোমার সহগামিনী হইবেন। হে রাজন! তুমি যেমন সুখের সময়ে আমাকে দুঃখ দিলে, সেইরূপ তোমাকেও সুখকালে দুঃখ পাইতে হইবে।' [মহাভারত, আদিপর্ব: অষ্টাদশাধিকশততম অধ্যায়। পাণ্ডুর প্রতি মৃগরূপী মুনির শাপ]

এই অভিশাপের কারণে, মাদ্রী এবং কুন্তী উভয়ই স্বামী-সংসর্গ থেকে বঞ্চিত হন পরে কুন্তী সন্তান কামনায় পাণ্ডুর অনুরোধে তিন দেবতার সাথে মিলিত হন এবং তিনটি সন্তান লাভ করেন। মাদ্রীও অনুরূপভাবে সন্তান কামনা করে পাণ্ডুকে জানালে, কুন্তী এই মন্ত্রটি একবারের জন্য মাদ্রীকে দান করেনমাদ্রী একবার অশ্বিনীকুমার-দেবতাদ্বয়কে আহ্বান করে, নকুল সহদেব নামে দুটি সন্তান লাভ করে। 

মৃগয়া থেকে ফিরে তিনি দশার্ণ, মগধ, মিথিলা, কাশী, সুহ্ম, পুণ্ড্র প্রভৃতি দেশ জয় করেন এর কিছুদিন পর একদিন পাণ্ডু অত্যন্ত কামার্ত অবস্থায়  মাদ্রী সাথে মিলিত হন এবং সঙ্গমরত অবস্থায় ইনি মৃত্যুবরণ করেন পরে কুন্তী এসে সকল বিষয় অবগত হয়ে স্বামীর সাথে সহমৃতা হতে চান কিন্তু  মাদ্রী সকল দোষ নিজের মনে করে নিজেই সহমৃতা হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন পরে ধৃতরাষ্ট্রের আদেশে পাণ্ডু ও  মাদ্রীর মৃতদেহ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য রাজধানীতে আনা হয় এবং সেখানেই উভয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়