বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
১-৭ মার্চ, ১৯৭১
পূরব-পাঠ: ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে এই মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসের
প্রথম দিনে ১লা মার্চ আকস্মিকভাবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট
ইয়াহিয়া খান,
এক ঘোষণায় অনির্দিষ্টকালের জন্য তা স্থগিত করে দেন। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষ
এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে, স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, পাকিস্তান
ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্ভব হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে প্রতিবাদী
আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনে রূপ লাভ করতে থাকে।
৭ই মার্চ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে সুষ্পষ্টভাবে অসহযোগ আন্দোলনের
নির্দেশনামা জারি হয়ে যায়। এ ছাড়া এই ভাষণের শেষে-
বঙ্গবন্ধু
দৃঢ়তার সাথে বলেন-'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'।
এই মাসেরই ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত্রে পাকস্তানি সেনাবাহিনী, '
অপারেশন সার্চ লাইট'
ইতিহাসের বর্বরোতম সামরিক অভিযান শুরু করে।
এই পরিস্থিতিতে
বঙ্গবন্ধু
২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এই মাসের উল্লেখযোগ্য
দিনগুলো গুলো ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটের বিচারে, এই মাসের
প্রতিটি দিনের ঘটনা ছিল ঐতিহাসিক। নিচে এই মাসের ঘটনাগুলোর সূচি তুলে ধরা হলো।
- ১ মারচ (সোমবার, ১৬ ফাল্গুন ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ)
- ঢাকায় জাতীয় পরিষদের বৈঠকে
যোগদানের জন্য ১ লা মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট
ইয়াহিয়া খানের
ঢাকায় আসার কথা ছিল। উল্লেখ্য, জাতীয় পরিষদের দিন ধার্য ছিল ৩রা মার্চ (বুধবার, ১৮ ফাল্গুন ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ)।
তাই
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা শাসনতন্ত্র প্রণয়নের
বিল চূড়ান্ত করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বেলা ১টার দিকে বেতার একটি গুরুত্বপূর্ণ
বার্তার ঘোষণা দেওয়া হয়। বেলা ১.০৫টায়
ইয়াহিয়া খানের
বিবৃতিতে বলা হয় যে, ৩ মার্চ ঢাকায় আহুত জাতীয় পরিষদের বৈঠক
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই সময়
ইয়াহিয়া খান,
রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। তাঁর এই বিবৃতি
প্রায় সকল পত্রিকায় ২রা মার্চ প্রকাশিত হয়েছিল। ২রা মার্চ 'মর্নিং নিউজ'
পত্রিকার এমনি সংবাদ সংকলিত হয়েছে 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ
দ্বিতীয় খণ্ডে মুদ্রিত আছে ৬৬৩-৬৬৪। নিচে ওই গ্রন্থ থেকে বিবৃতির বৈদ্যুতিন
অনুলিপি যুক্ত করা হলো।
[ইয়াহিয়া খানের ভাষণ]
- এই দিন ঢাকা স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছিল ক্রিকেট খেলা। উল্লেখ্য ২৬শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শুরু হয়েছিলো-
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড একাদশ ও কমনওয়েলথ একাদশের মধ্যে চারদিনের একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংস চলছিল।
দর্শকরা প্রায় প্রত্যেকে সঙ্গে করে রেডিও নিয়ে গিয়েছিলেন। এক ছিল স্টেডিয়ামে খেলা দেখা এবং রেডিতে তার ধারাবিবরণী শোনা।
এ ছাড়াও ছিল পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা সর্বশেষ সংবাদও রেডিওর খবর থেকে জেনে নেওয়া।
রেডিওতে দুপুরের সংবাদে দর্শকরা
পাকিস্তানের
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা শোনার পর,
এরা ক্রিকেট খেলার মাঠ ছেড়ে, জয়বাংলা শ্লোগান দিতে দিতে
রাস্তায় নেমে পড়ে। ইতিমধ্যে ঢাকা শহরের মানুষ ঘর, অফিস ছেড়ে রাস্তায় নেমে
আসে। রেডিওতে সংবাদ প্রচারের ঘণ্টা খানেকের মধ্য
ঢাকার রাজপথ বিক্ষুব্ধ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সেময় অনেকের হাতে ছিল যুদ্ধের প্রতীকী
অস্ত্র হিসেবে আড়াই হাত পরিমিত লাঠি। অনেক জায়গায় পাকিস্তানের জাতীয় পতাকায় আগুন ধরিয়ে
দেয়। একই সাথে
মুহম্মদ আলী জিন্নাহ,
আয়ুব খান এবং
ইয়াহিয়া খানের
ছবিতে জুতার
মালা পরানো হয় এবং তাদের কুশপুত্তলিকা দাহ শুরু হয়।
মূলত এই ঘোষণা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত '
অপারেশন
সার্চ লাইট' সফল করার জন্য কালক্ষেপণের
একটি বাহানা মাত্র। এই সময়ের শ্লোগানে ছিল স্বাধীনতা ঘোষণা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের দাবি। শ্লোগানগুলো
ছিল-
- বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর
- তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা।
- বেতারে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা শোনার পর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা, বটতলায়
মিলিত হয় ৩টার দিকে একটি প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
- ৩.২০টায়
বঙ্গবন্ধু
হোটেল পূর্বাণীতে তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের সাথে মিলিত হন
এবং একটি পরবর্তী কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা করেন। বিক্ষুব্ধ জনগণ হোটেল পূর্বাণীর সামনে এসে শ্লোগান দিতে থাকে।
এই অবস্থায়
বঙ্গবন্ধু
দ্রুত সভা সমাপ্ত করেন।
- ৪.০০টায়
বঙ্গবন্ধু
হোটেলে আহুত সাংবাদিক সম্মেলনে- বিগত ২৩ বছরের পাকিস্তানিদের বাঙালিদের উপনেবিশক দৃষ্টিতে
দেখার সমালোচনা করেন। একই সাথে জাতীয় পরিষদের বৈঠক বাতিলের প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি
২রা মার্চ ঢাকাতে এবং ৩রা মার্চ সারাদেশ ব্যাপী হরতাল ডাকেন। তবে পূর্ব-বাংলার জনগণের প্রতি চূড়ান্ত নির্দেশ প্রদানের জন্য, ৭ই মার্চ
রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেবেন বলে ঘোষণা দেন।
['দি পিপল' পত্রিকার ২রা মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত সংবাদটি সংযুক্ত করা হয়েছে-
'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খণ্ডে মুদ্রিত আছে ৬৬৫-৬৬৬
পৃষ্ঠায়। দেখুন এর
বৈদ্যুতিন অনুলিপি]
- পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল
সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান,
ইয়াহিয়া খানের গোপন অভিসন্ধি জানতে পেরে প্রতিবাদ করেন। তাই এই দিন তাঁকে
পদচ্যূত করে, তাঁর স্থলে খ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক
সাহেবজাদা ইয়াকুব খান
কে নিয়োগ দেন।
- এই দিন সামরিক বিধি ১১০ জারি করা হয়। এই বিধিটি হলো-
১ মার্চ : সামরিক আইন বিধি ১১০
পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে
প্রত্যক্ষ বা
পরোক্ষভাবে কোনো ছবি খবর অভিমত বিবৃতি মন্তব্য প্রভৃতি মুদ্রণ বা
প্রকাশ থেকে সংবাদপত্রসমূহকে বারণ করা হচ্ছে । এই আদেশ লঙ্ঘন করা
হলে ২৫ নং সামরিক শাসন বিধি প্রযোজ্য হবে। এর সর্বোচ্চ শাস্তি দশ
বছর সশ্রম কারাদণ্ড।
২ মারচ (মঙ্গলবার ১৭ ফাল্গুন ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ)
- এই দিন প্রেসিডেন্ট
ইয়াহিয়া খানে প্রধান
সামরিক প্রশাসক হিসেবে নিজ ক্ষমতাবলে প্রদেশগুলোতে সামরিক আইন প্রশাসক
নিয়োগ করেন এবং ১১০ নং সামরিক আইন বিধি জারি করে সংবাদপত্রের ওপর
নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন । একই সাথে প্রেসিডেন্টের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে.
জে. এস জি এম পীরজাদা ইয়াকুব খানকে এদিন গভর্নরের অতিরিক্ত দায়িত্ব
গ্রহণের কথা জানান।
- আগের দিনের ডাকা হরতাল, ঢাকায় সুশৃঙ্খলভাবে পালিত হয়। এই দিন দোকানপাট, কলকারখানা, অফিস-আদালত সব
বন্ধ থাকে। ফলে রাজধানীতে ঢাকায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এছাড়া এদিন ট্রেন ও
বিমান চলাচলও বন্ধ থাকে। হাজার হাজার মানুষ লাঠি ও রড হাতে রাজপথে নেমে
এলেও কোনো অরাজকতার অবস্থা সৃষ্টি হয় নি।
|
প্রথম পতাকার নমুনা |
সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় ডাকসু ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ছাত্র-জনতার এক বিশাল
সমাবেশে। এই সমাবেশে শিল্পী শিবনারায়ণ দাশের পরিকল্পনা ও অঙ্কনে সবুজ পটভূমিকার ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে বাংলার সোনালি
মানচিত্র-সংবলিত স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উত্তোলন করেন ডাকসুর তৎকালীন সভাপতি
আ.স.ম আব্দুর রব।
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি
নূরে-আলম-সিদ্দিকী, ছাত্রলীগ সম্পাদক
শাহজাহান সিরাজ, ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক
আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও পূর্বতন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ প্রমুখ ।
- ঢাকার ফার্মগেটে সকাল ১১ টার দিকে আন্দোলনরত জনতার ওপর সামরিক বাহিনীর গুলিবর্ষণ ও বেয়নেট চার্জে
৯ জনের মতো বাঙালি হতাহত হয় ।
- ন্যাপের উদ্যোগে পল্টন ময়দানে ও আতাউর রহমানের জাতীয় লীগের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমে
এদিন বিকেলে অনির্ধারিত জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
- ঢাকাতে আকস্মিকভাবে রাত ৯টা থেকে ৩রা মার্চ সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়।
বেতারে এই ঘোষণার পাশাপাশি 'প্রতিদিন ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত কার্ফিউ
জারির অগ্রিম ঘোষণাও দেওয়া হয়। বেতারে এই ঘোষণা শোনার পর কার্ফিউ লঙ্ঘনের জন্য
পথে নেমে আসে। এরা ঢাকার রাজপথে ব্যারিকেট তৈরি করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়
এবং সারারাত ধরে রাজপথে মিছিল ও শ্লোগান চলতে হয়। সেনাবাহিনী মিছিলকারীদের উপর গুলিবর্ষণ করে। এর ফলে
অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়। কিন্তু জনগণ কার্ফিউ ভাঙতে সক্ষম হয়।
- এই অবস্থায়
বঙ্গবন্ধু এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে
জানান যে,
- পরদিন ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যস্ত হরতাল পালিত হবে।
- সকল সরকারি অফিস, সচিবালয়, হাইকোর্ট ও অন্যান্য আদালত, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান,
পিআইএ, রেলওয়ে এবং অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যম, পরিবহন, ব্যক্তিমালিকানা ও সরকারি মিল, ফ্যাক্টরি, শিল্প ও
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও মাকেট প্রভৃতি হরতালের আওতাভুক্ত হবে। আর এ্যাম্বুলেন্স, সংবাদপত্রের গাড়ি, হাসপাতাল,
ওষুধের দোকান, বিদ্যুৎ ও পানি পরিবহণ হরতালের আওতামুক্ত থাকবে ।
- ৩ মার্চ বাঙালিদের জন্য শোকদিবস ঘোষণা করা হয়। (এ দিনেই অধিবেশন বসার কথা ছিল
- রেডিও, টেলিভিশন এবং সংবাদপত্র যদি বাঙালিদের সংবাদ প্রকাশে ব্যর্থ হয় তা হলে কোনো বাঙালি এগুলোতে
সহযোগিতা করবেন না।
- ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্দেশিত হবে ।
- অসহযোগ আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ এবং শৃঙ্খলার সাথে এগিয়ে নিতে হবে।
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে মূলত- অনানুষ্ঠানিকভাবে অসহযোগ
আন্দোলন সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। সন্ধ্যায়
বঙ্গবন্ধু
তাঁর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাসায় আগত জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি বিশেষভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যাতে না বাধে সে বিষয়ে
সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
- এইদিন পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন একটি খোলা চিঠিতে, সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য
শেখ মুজিবর রহমান
আহ্বান জানায়। এই আহ্বান পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের বিপ্লবী পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছিল।
[খোলা চিঠির নমুনা।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দ্বিতীয় খণ্ড। পৃষ্ঠা: ৬৬৭-৬৬৮।]
- এই দিন চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিতে ৭১ জন নিহত হন।
৩ মারচ (বুধবার, ১৮ ফাল্গুন ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ
- এই দিন
বঙ্গবন্ধু'র
ঘোষণা অনুসারে, সারা দেশ ব্যাপী হরতাল পালিত হয়।
যদিও বেলা ২টা পর্যন্ত হরতালের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু
সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সারাদিনই হরতাল পালন করে।
২রা মার্চে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত আন্দোলনকারীদের লাশ
নিয়ে মিছিল বের করা হয়।
- এই দিন ঢাকা বিমান বন্দরে সেনাবাহিনী প্রবেশের চেষ্টা করলে, আন্দোলনকারীরা বাধা দেয়।
সেনাবাহিনী গুলি বর্ষণ করলে, দুই জন নিহত হয়। এই দিন সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
- সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকার কার্ফিউ রাত ৯টার পরিবর্তে রাত
১০টা থেকে শুরু ঘোষণা দেওয়া হয়।
-
এই দিন বিকালে, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পল্টনে একটি জনসভার আয়োজন করে। এই সভায় একটি
প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে 'স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা ও কর্মসূচী
দেওয়া হয়। এই ইশতেহার পাঠ করেছিলেন ছাত্রলীগের
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে
শাহজাহান সিরাজ।
এই ইশতেহারের উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব বিষয় ছিল-
- স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাম হবে 'বাংলাদেশ'।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হবেন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি' হবে জাতীয় সঙ্গীত।
কর্মসূচির বেশির ভাগই ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য নানা ধরনের নির্দেশনা। এই ইশতেহারটি উত্থাপিত
হয়েছিল স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ। এই পরিষদের পক্ষে ইশতেহারটি পাঠ করেছিলেন
শাজাহান সিরাজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৬৯-৬৭১ থেকে, ইশতেহারের
বৈদ্যুতিন নমুনা যুক্ত করা হলো। [ ইশতেহারের
বৈদ্যুতিন অনুলিপি]
- এই ঘোষণার পর কার্যত পূর্ববাংলার শাসন ব্যবস্থা আওয়ামী
লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল।
- কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৃথক ছাত্র সভায় ছাত্র ইউনিয়নের
তৎকালীন সভাপতি নূরুল ইসলাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন করে সংগ্রাম পরিচালনার প্রস্তাব
রাখেন।
- চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষণ করে। ফলে বহুমানুষ হতাহত হয়। অনেক জায়গায় সরকার
কার্ফু জারি করে।
- এই দিন রংপুরে সেনাবহিনীর সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। ফলে এই দিনে ৩ জন শহিদ হয়।
এর ভিতরে প্রথম শহিদ হয়েছিলেন- শঙ্কু সমজদার। এরপর রংপুরে ৩ মার্চ থেকে ৫ মার্চ
পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছিল।
পাঞ্জাব পাকিস্থান ফ্রন্ট (পিপিএফ) ভুট্টোর ভূমিকার চরম নিন্দা
করে। তারা বাংলার জনগণের প্রতি অত্যাচার বন্ধের আহ্বান জানায়।-
জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
সেখানে ব্যাপক ভাবে ভুট্টো সমালোচিত হন। পাঞ্জাব পাকিস্তান ফ্রন্টের আহ্বায়ক
মালিক গোলাম জিলানি পিপলস পার্টির সমালোচনা করে এক 'দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত'
বলে অভিহিত করেন।
- ৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার, ১৯ ফাল্গুন ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ)
- মার্চ মাসের ১ তারিখে দেওয়া
বঙ্গবন্ধু'র ঘোষণা অনুসারে, সারা দেশ ব্যাপী
সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এর ফলে ঢাকাসহ সারা পূর্ব-পাকিস্তানে বেসামরিক
শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে।
- এই দিন সরাকারি ঘোষণায় ঢাকার কার্ফিউ তুলে নেওয়া হয়। তবে খুলনা ও রংপুরে কারফিউ বলবৎ থাকে।
- এই দিন ঢাকা ও টঙ্গীতে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর গুলিবর্ষণে শতাধিক লোক হতাহত হন।
৩ ও ৪ মারচের সেনাবহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জন।
- খুলনায় আন্দোলনকারীদের উপর সেনাবাহিনী গুলি বর্ষণে ৬ জন শহিদ হন।
- চট্টগ্রামে এই দিনও সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের উপর গুলি বর্ষণ করে। ৩ ও ৪ মার্চের গুলিবর্ষণ
১২০ জন নিহত এবং প্রায় ৩৩৫ জন আহত হয়।
- ১ ও ৪ মার্চ পর্যন্ত সকল শহিদদের গায়েবানা জানাজা এবং শোক মিছিল হয়। এছাড়া ঢাকায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকরা
রাজপথে শান্তিরক্ষার জন্য টহল দেওয়া শুরু করে।
- এই দিন হরতাল চলাকালে সেনাবাহিনী নিয়মিত টহল দেওয়া প্রায়
বন্ধ করে দেয়। এই দিন রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানার ইপিআরের সদস্যরা রাজপথে
আন্দোলনকারীদের সমর্থনে 'জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করে।
- পূর্ব-পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন, আন্দোলনের প্রতি
আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানায় এবং সামরিক শাসন প্রত্যাহারের জন্য দাবি জানায়।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন শিক্ষক এক যৌথ বিবৃতিতে তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভারের গণবিরোধী ভূমিকার
তীব্র সমালোচনা করেন।
- রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ এবং পাকিস্তান টেলিভিশন ‘ঢাকা টেলিভিশন’ হিসেবে
সম্প্রচার শুরু করে। বেতার-টেলিভিশন শিল্পীদের ২০ জন এক
যুক্ত বিবৃতিতে ঘোষণা করেন যে,- যতদিন পর্যন্ত দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ
সংগ্রামে লিপ্ত থাকবেন ততদিন পর্যন্ত ‘বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তাঁরা অংশ নেবেন না।’
- ঢাকা বেতার কেন্দ্র এক প্রজ্ঞাপনে জানায় যে, প্রতিদিন
দুইবার স্থানীয় সংবাদ পরিবেশন করবে।
- করাচি প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে
এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান
দেশকে
বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
[বাংলাদেশের স্বাধীনত যুদ্ধ দলিলপত্র: দ্বিতীয় খণ্ড। পৃষ্ঠা: ৬৮০-৬৮১]
- পিডিপি প্রধান নূরুল আমীন এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ
প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্টের প্রতি অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় আহবান করার দাবি জানান।
- ন্যাপ প্রধান
আব্দুল হামিদ খান ভাসানি,
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাঙালির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দাবি জানান। এছাড়া তিনি বলেন যে,
'কংগ্রেস, খেলাফত, মুসলীম লীগ, আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের মাধ্যমে আমি আন্দোলন করেছি।
কিন্তু ৮৯ বছরের জীবনে এবারের মতো গণজাগরণ ও অগণতান্ত্রিক ঘোষণার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিক্ষোভ কখনো দেখি নি।'
- এ দিন
বঙ্গবন্ধু
৫ ও ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহবান জানান।
এই হরতালের বাইরে থাকবে হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, এ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার ও
সাংবাদিকের গাড়ি, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ, স্থানীয় টেলিফোন ও আন্তঃজেলা টেলিফোন
যোগাযোগ, দমকল ও আবর্জনার গাড়ি। মাসের প্রথম সপ্তাহের কারণে সরকারি
কর্মচারিরা যাতে বেতন পান, সে জন্য সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দেন।
তিনি পূর্ব-পাকিস্তানের ভিতরে লেলদেনের জন্য ১৫০০ টাকার
ব্যাংক-চেক ভাঙানোর সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেন। তবে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো
ব্যাংকের মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তানের বাইরে টাকা না পাঠানোর নির্দেশ দেন।
-
রাত ১১টায়
রাও ফরমান আলী কিছু প্রস্তাব নিয়ে
বঙ্গবন্ধুর কাছে যান।
বঙ্গবন্ধু অন্যায়ভাবে আন্দোলনকারীদের হত্যা করার কথা বলেন। তিনি স্পষ্ট করে জানান যে, এখন আর
এক ছাদের নিচে বসবাস করা সম্ভব নয়, বিশেষ করে যেখানে ভুট্টো রয়েছে। এরপর
রাও ফরমান আলী ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যান।
- পূর্ব-পাকিস্তানের গরভর্ন পদে
টিক্কা খানকে নিয়োগের বিষয় উত্থাপিত হলে,
তৎকালীন গভর্নর ও পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি লেফট্যান্ট
জেনারেল
সাহেবজাদা ইয়াকুব খান পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
- পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান
জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের সংহতির জন্য
তাঁর দল যদ্দুর সম্ভব ৬-দফার কাছাকাছি হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
৫ই মার্চ
ইয়াহিয়া খানের
সাথে ভুট্টোর আলোচনা করে।
- ৫ মার্চ । শুক্রবার ২০ ফাল্গুন ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ।
- মার্চ মাসের ১ তারিখে দেওয়া
বঙ্গবন্ধু'র
ঘোষণা অনুসারে, সারা দেশ ব্যাপী সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক
হরতাল পালিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে হরতালের পর ব্যাংক খোলা থাকে। মসজিদে
মসজিদে জুমার নামাজের পর শহিদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ
মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা
হয়।
- বঙ্গবন্ধুর স্বাধিকার আন্দোলনের আহবানে সাড়া
দিয়ে বিকেলে কবি সাহিত্যিক ও শিক্ষকবৃন্দ মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন।
ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের হয়।
- ছাত্র নেতা তোফায়েল আহমদ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি রিলে করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহবান
জানান। রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন,
ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর সিলেটসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে
মিলিটারির বুলেটে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ, শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা
হচ্ছে। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ
ছাড়া আর কিছুই নয়।
- পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীর গুলিতে টঙ্গী শিল্প এলাকায় ৪ জন শ্রমিক শহিদ
হন এবং ২৫ জন শ্রমিক আহত হন। এই ঘটনার পর জনতা টঙ্গী কংক্রিট সাঁকোর পাশের
কাঠের সাঁকোটি পড়িয়ে দেয় এবং বড় বড় গাছ ফেলে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে
ফেলে।
- চট্টগ্রাম সেনাবাহিনীর গুলিতর ৩ জন নিহত হয়। এছাড়া
আহত ১০ জন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যুবরণ করে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে
মৃত্যু হয় ২৩৮ জন।
- খুলনায় ২ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ
করে।
- রাজশাহীতে ১ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে
মৃত্যুবরণ করে।
- এ সকল ঘটনার প্রতিবাতে,
ঢাকায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে একটি প্রতিবাদী মিছিল করে। পরে সাথে সাধারণ মানুষ
যোগদান করলে, তা বিশাল প্রতিবাদী মিছিলে পরিণত হয়। এ
ছাড়া পৃথকভাবে পূর্ব-পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা,
খিলাগাঁও ভূমি বন্দোবস্ত কমিটি প্রতিবাদী মিছিল করে।
- ঢাকায় লেখক ও শিল্পীবৃন্দ এই আন্দোলনে একাত্মতা
ঘোষণা করে। এছাড়া ড. আহমদ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাধীনতার শপথ
পাঠ করানো হয়।
- সন্ধ্যায় সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় যে, আজ ঢাকায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে
ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।
- সামরিক আইন প্রত্যাহারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে মহিলা,
ছাত্র ও শিক্ষকরা মিছিল করে।
- ঢাকা ও লাহোরে দেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক আন্দোলনে
নিহত শিহিদদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশের সংহতির
জন্য বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
- পূর্ব-পাকিস্তানের বহু জায়গায় পাকিস্তানি পতাকা
লাঞ্ছিত করে, বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
- ঢাকায় আওয়ামী লীগের ৫১ পুরানো পল্টনস্থ কার্যালয়ে,
দেশের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করা হয়।
এর মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তানের প্রতিটি জেলা ও মহকুমার সাথে যোগাযোগ রক্ষার
ব্যবস্থা করা হয়।
- পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড. এ. ভুট্টো
রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময়
ধরে আলোচনা করেন।
-
এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বিকেলে করাচী
থেকে ঢাকায় পৌঁছোন। তিনি রাতে বঙ্গবন্ধুর সাথে ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ
করেন।
- রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশী বেতারে
প্রচারিত 'শেখ মুজিব জনাব ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ ভাটোয়ারা করতে রাজি আছেন'
সংক্রান্ত সংবাদকে 'অসদুদ্দেশ্যমূলক' ও 'কল্পনার ফানুস' হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
- রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে পিপলস
পার্টির প্রধান জেড. এ. ভুট্টোর আলোচনা বৈঠক শেষে পার্টির মুখপাত্র আবদুল হাফিজ
পীরজাদা মন্তব্য করেন, জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত রাখার প্রেক্ষিতে আওয়ামী
লীগের প্রতিক্রিয়া যেভাই বিচার করা হোক না কেন, তা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত এবং আদৌ
যুক্তিযুক্ত নয়।
৬ মার্চ (শনিবার, ২১ ফাল্গুন ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ)
- বঙ্গবন্ধু'র ডাকে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে তাঁরই নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা
পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে ইতিপূর্বে বেতন দেয়া হয়নি সেসব
অফিস বেতন প্রদানের জন্য খোলা থাকে।
- সকাল ১১টার দিকে সেন্ট্রাল জেলের গেট
ভেঙ্গে ৩৪১ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে ৭ জন কয়েদি নিহত
এবং ৩০ জন আহত হয়।
- প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ একটি বিশাল প্রতিবাদী দল যশোহর
শহরে সেনাবাহিনীর অবস্থান থেকে বিতারিত করার জন্য অগ্রসর হলে, সেনা-সদস্যরা
শহর ছেড়ে যশোহর ক্যান্টমেন্টে আশ্রয় নেয়। এই সময় কিছু পাকিস্তানি সৈন্য
জনতার প্রহারে নিহত হয়। এছাড়া এই আন্দোলনের বিরোধিতাকারী অবাঙালি (বিহারি)
হতাহত হয়।
- অলি আহমদের
সভপতিত্বের পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মুজদফর আহমদের
সভাপতিত্বে গণ সমাবেশ হয়। এই সমাবেশ থেকে জনগণের মুক্তির জান্য সংগ্রামের
আহ্বান করা হয়।
- সাংবাদিক
ইউনিয়ন, শিক্ষক সমিতি, মহিলা পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ), কৃষক
শ্রমিক সমাজবাদী দল, শ্রমিক ইউনিয়ন, গণশিল্পীগোষ্ঠী, উদিচী শিল্পীগোষ্ঠী,
স্বজনী ও ফরোয়ার্ড স্টুডেন্টস্ ব্লকের উদ্যোগে বিক্ষুব্ধ মিছিল এবং বাংলা
ন্যাশনাল লীগের উদ্যোগে ঢাকাতে বিরাট শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
- বিকেলে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত সভায় মহিলা
আওয়ামী লীগের সদস্যরা বাঁশের লাঠি, লোহার রড ও কালো পতাকা নিয়ে উপস্থিত হয়।
সভা শেষে একটি মিছিল বের করে।
- সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ পৃথক মিছিল করে এবং বায়তুল
মোকারম প্রাঙ্গণে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনয়নের উদ্যোগে বিশাল সাংবাদিক সম্মেলন
হয়।
- টঙ্গীতে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে কাজী
জাফরের সভাপতিত্বে শ্রমিক সভা ও বিক্ষোভ মিছিল হয়।
- লেখক-শিল্পীদের মুখপত্র 'প্রতিরোধ'-এর দ্বিতীয়
সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম ছিল- 'আপসের বাণী আগুণে জ্বালিয়ে দাও'।
এদের শ্লোগান ছিল- পরিষদ বৈঠক বর্জন কর, বাংলাদেশ স্বধীন কর।
- ইয়াহিয়া খানের
ভাষণ ও তার প্রতিক্রিয়া
ইয়াহিয়া খান
দুপুরে বেতার ভাষণে ২৫শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। ভাষণে তিনি বলেন, যাই
ঘটুক না কেন যদ্দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার হুকুমে রয়েছে এবং আমি
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছি তদ্দিন পর্যন্ত আমি পূর্ণাঙ্গ ও নিরঙ্কুশভাবে
পাকিস্তানের সংহতিরে নিশ্চয়তা বিধান করবো।
[ইয়াহিয়া খান
বেতার ভাষণের
বৈদ্যুতিন অনুলিপি।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৬৯-৬৭১।
-
ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের অব্যবহিত
পরেই বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার ওয়ার্কিং
কমিটির এক যুক্ত জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী এই রুদ্ধদ্বার
বৈঠকে প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের আলোকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা হয়।
- ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের পরপরই ঢাকা
ও নারায়ণগঞ্জে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়।
- ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতৃবৃন্দ ইয়াহিয়ার
ভাষণকে প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁরা এক বিবৃতিতে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে
সরাসরি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাংলাদেশের সকল বেতার কেন্দ্র থেকে রিলে করার দাবি
জানান।
- লাহোরে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বি এ সলিমী ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদ সরফরাজের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল
বের করে। এই মিছিল থেকে বি এ সলিমী এবং সরফরাজ-সহ ১৬জনকে গ্রেফতার করে।
-
জুলফিকার আলী ভুট্টো
এই অধিবেশনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে তিনি
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণকে স্বাগত জানিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তাঁর দল
২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনের আগেই আলোচনার মাধ্যমে শাসনতন্ত্রের
মোটামুটি একটি কাঠামো স্থির করতে চায়।
- লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার
মার্শাল নূর খান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ-শাসনের বৈধ
অধিকার রয়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তারের সব বাধা অবিলম্বে দূর করতে হবে।
প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণে পরিস্থিতি অবনতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের ওপর দোষারোপ করায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
- পেশোয়ারে পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রধান
খান আবদুল কাইয়ুম খান ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবানের সিদ্ধান্তকে
অভিনন্দিত করে বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
- পিডিপি প্রধান নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান
ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ দৌলতানা ইয়াহিয়া খানের ঘোষণাকে স্বাগত
জানান।
- এই দিন পাকিস্তানের প্রশাসনে বিরাট
পরিবর্তন করা হয়। তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর পদ লাভ করেছিল
সাহেবজাদা ইয়াকুব খান।
ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাঁকে অপসারণ করে
টিক্কা
খানকে গভর্নর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। একই সাথে তিনি ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার এবং সামরিক আইন
প্রশাসকের দায়িত্ব পান। কথিত আছে, বাংলাদেশের
অপারেশন সার্চ লাইট-এর দ্বারা পূর্ব-পাকিস্তানে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের
যে পরিকল্পনা করা হয়, গভর্নর হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন এবং জানার পর পরই এর
বিরোধিতা করেন। এই কারণে ৭ই মার্চ
সাহেবজাদা
ইয়াকুব খান গভর্নর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
মার্চ ৭। ২২ ফাল্গুন ১৩৭৭
বঙ্গাব্দ। রবিবার
- পূর্ব-নির্ধারিত ৭ই মার্চের ভাষণের পূর্বে বিভিন্ন মহল থেকে
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার চাপ সৃষ্টি হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু'র ১
থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং দেশ-বিদেশের প্রতিক্রিয়া, পাকিস্তানি
রাজনৈতিক দল ও সামরিক বাহিনীর মনোভাব লক্ষ্য করে এই ভাষণের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এই
ভাষণের আগেই আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়া কিছু দাবি
বঙ্গবন্ধু'র
কাছে আগে থেকেই উত্থাপন করেছিল। যেমন-
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ সামরিক বাহিনীর
গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে পতাকা উত্তোলনের আহ্ববান
- কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের পূর্বাবাংলা সমন্বয় কমিটির দাবি ছিল-
গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা
- ন্যাপ (মুজাফ্ফর)-এর দাবি ছিল ১৭ দফার মাধ্যমে শাসনতন্ত্র
প্রণয়ন করা
- সাধারণ ছাত্রনেতৃত্বের দাবি ছিল- স্বাধীনতা ঘোষণা করা
- সরকারি প্রেসনোটে প্রকাশ করা হয় যে, গত ৬ দিনে ১৭২ জন নিহত
ও ৩৫৮ জন আহত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।
- পূর্ব-ঘোষিত এই ভাষণ শোনার জন্য, ঢাকা শহর এবং ঢাকার বাইরে
থেকে বহু মানুষ এসেছিল। এরা নানা ধরনের শ্লোগান দিতে দিতে নির্ধারিত সময়ের বহু আগেই
রমনায় জড়ো হয়। এদের শ্লোগান ছিল- জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, তোমার দেশ আমার দেশ/বাংলাদেশ
বাংলাদেশ, তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা, মেঘনা যমুনা, তোমার নেতা আমার নেতা/শেখ মুজিব
শেখ মুজিব, ভুট্টোর মুখে লাথি মারো/বাংলাদেশ স্বাধীন করো, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর/বাংলাদেশ
স্বাধীন কর্, হুলিয়ার ঘোষণা/মানি না মানি না।
- বঙ্গবন্ধু রমনা বেলা সোয়া তিনটায় রেসকোর্স মাঠের
সভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। পাজামা-পাঞ্জাবি ও কালো কোট পরিহিত শেখ মুজিব মঞ্চে
এসে দাঁড়ালে জনতা করতালি ও নানা ধরমের শ্লোগানের মধ্যদিয়ে তাঁকে অভিনন্দন
জানান। এই সময় অনেকের হাতে ছিল- বাংলার মানচিত্রখচিত
বাংলাদেশের পতাকা। এরপর তিনি ২৬ মিনিটের একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণেই মূলত
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। ভাষণের শেষ বাক্যটি ছিল- 'এবারের সংগ্রাম
আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা'।
[বঙ্গবন্ধুর
ভাষণের লিখিত রূপ]
- এই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ই মার্চ
সাহেবজাদা
ইয়াকুব খান পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর পদ থেকে সরিয়ে,
তার স্থলে জেনারেল
টিক্কা
খানকে বসানো হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
চলাকাল
টিক্কা
খান ও রাও ফরমান আলী
ঢাকায় পৌঁছায়। ঢাকায় পৌঁছে
টিক্কা
খান সামারিক শাসক ও পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডোর কমান্ডার হিসেবে
দায়িত্ব গ্রহণ করে। তবে সে সময়ে কোনো বিচারপতি তার শপথ পাঠ করাতে রাজি না হলে, তাঁক
সামরিক শাসক হিসেবে থাকতে হয়। পরে ১০ই মার্চ এই আদেশ পরিবর্তন করে খ অঞ্চলের
সামারিক প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
- পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত 'ডন' পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর 'দশ দফা'
প্রকাশিত হয়েছিল।
[দ্রষ্টব্য: ডন পত্রিকায় প্রকাশিত
বঙ্গবন্ধুর ১০ দফা]
৭ই মার্চের ভাষণের প্রতিক্রিয়া:
- এই সময় সরকারি নির্দেশে ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর
ভাষণ রিলে না করার সিদ্ধান্ত ছিল। এর প্রতিবাদে বেতারে কর্মরত বাঙালি কর্মচারিরা কাজ বর্জন করেন।
ফলে বিকেল থেকে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সকল অনুষ্ঠান
প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। পরে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই এদিনের অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
পরে গভীর রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর
ভাষণের পূর্ণ বিবরণ প্রচারের অনুমতি দিলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দিয়ে ঢাকা বেতার
কেন্দ্র পুনরায় চালু হয়।
- বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরপরই
এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান
সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে অনতিবিলম্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের
দাবি করেন। একই সাথে তিনি জানান যে, ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদানের জন্য
আওয়ামী লীগ যে শর্ত দিয়েছেন তা ন্যায়সঙ্গত, উপযুক্ত, সুষ্ঠ ও বৈধ।
- মূলত এই ভাষণের দ্বারা আন্দোলনকারীদের ভিতরে স্বাধীনতার
বীজমন্ত্র-রোপিত হয়ে গিয়েছিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে জন্য অল্প-বিস্তর
প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। শর্ত মেনে নিয়ে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে আওয়ামী
লীগের যোগদানের বিষয়টি বাস্তবায়িত হলে- বাংলাদেশের স্বাধীনতা পিছিয়ে যেতো। যেহেতু
অপারেশন সার্চ লাইট-এর পরিকল্পনা তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
তাই ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কালক্ষেপণ ছিল- ওই পরিকল্পনা
বাস্তবায়নের জন্য।
- এই ভাষণের পর সারাদেশে মিছিল বন্যা বয়ে গিয়েছিল। শহর ছাড়িয়ে
গ্রাম-গ্রামান্তরে তা ছড়িয়ে পড়েছিল।
সূত্র :
- বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র:
১-১৫ খণ্ড
মুক্তিযুদ্ধ কোষ। প্রথম খণ্ড। মুনতাসির মামুন সম্পাদিত। সময়, ঢাকা।
ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
বিভিন্ন পত্রপত্রিকা