অই
বানান্ বিশ্লেষণ : অ +ই।
উচ্চারণ:
oi
(ওই)
শব্দ-উৎস:
সংস্কৃত অসৌ>
প্রাকৃত অহ (হে)>
অপভ্রংশ ওই (প্রথমা বহুবচনে)>
বাংলা ই আগম অহি>
অপভ্রংশ
বাংলা অই।
পদ :
১. অব্যয়
- ১.১. মনোভাববাচক, ভয়সূচক/বিস্ময়সূচক
অর্থ : ভয় বা বিস্ময়সূচক শব্দ বিশেষ।
সমার্থক শব্দাবলি:
অই,
ঐ,
ওই,
ওরে।
উদাহরণ: অই বাবা কত বড় সাপ।
ইংরেজি:
oh
১.২.
অদূরবর্তী বা সম্মুখস্থ
কোনো বিষয় নির্দেশবাচক
অর্থ: অদূরবর্তী বা সম্মুখস্থ কোনো বিষয়লে নির্দেশিত করার জন্য ব্যবহৃত ধ্বনি।
সমার্থক শব্দাবলি:
ঐ,
ওই
উদাহরণ: ওই আমাদের গ্রাম।
ইংরেজি:
that
১.৩. মনোভাববাচক, সম্বোধন
- ১.৩.১
অর্থ :
সম্বোধন বাচক ধ্বনি।
ধ্বনির মাধ্যমে কাউকে আহ্বান করা।
সমার্থক শব্দাবলি:
অই,
অএ,
অয়ি
ঐ,
ওই,
ওগো,
ওরে,
ওহে,
হই,
হৈ
উদাহরণ: অই, এদিকে আয়।
- ১.৩.২
অর্থ: সখী বা সমবয়স্কা নারীর প্রতি আহ্বান বা সম্বোধনসূচক শব্দ বিশেষ।
সমার্থক শব্দাবলি: অই,
ওলো।
উদাহরণ: অই, তোরা এদিকে আয়।
পদ :
২.
সর্বনাম
- ২.১.
অর্থ: একবচনে নামপুরুষ নির্দেশক সর্বনাম।
- সমার্থক শব্দাবলি:
অই,
সে।
শব্দ বিবর্তন:
-
সর্বপ্রাচীন নমুনা ১৪৭৩-১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দ।
জখনে জন্মিল অই বাপের ভবনে। [শ্রীকৃষ্ণবিজয়। মালাধর বসু। ]
ইংরেজি:
he।
২.২. অর্থ: দূরবর্তী কোনো স্থানকে
সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত সর্বনাম।
সমার্থক শব্দাবলি:
ঐ,
ওই,
সেই
শব্দ বিবর্তন:
-
সর্বপ্রাচীন নমুনা ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দ।
অই ঠাকুরের কেশ শোভে নানা ফুলে। [বৃন্দাবন দাস। ]
ইংরেজি:
that
২.৩.
অর্থ:কোনো ব্যক্তির
পরিবর্তে সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত সর্বনাম।
সমার্থক শব্দাবলি:
ঐ,
ওই,
সেই
উদাহরণ:
কাজলের কথা বলছো, অই যত সর্বনাশের গোড়া।
ইংরেজি:
that
২.৪. অর্থ: একই বিষয়, যা ভিন্নতর নয়
সমার্থক শব্দাবলি:
একই,
ওই,
সেই
উদাহরণ: অই মুখ, অই চোখ, আলাদা মানুষ বলে চেনা যায় না।
পদ:
৩.
বিশেষণ
অর্থ: সেই অর্থে যা, অন্যপদকে বিশেষিত করে।
শব্দ বিবর্তন:
- সর্বপ্রাচীন নমুনা ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ।
অই নিমিত্তে সদাই কলি মোর কর্মের ফল। [মুকুন্দ
দাস। ]
৪. বাংলা ক্রিয়াবাচক বিভক্তি।
শব্দ-উৎস: সংস্কৃত (আগম) অ + তি (লট্)প্রাকৃত অ + ই-অই বাংলা অই
কর্তৃবাচ্যে বর্তমানকালে প্রথম পুরুষের ক্রিয়ার বিভক্তি।
বিবর্তন:
- সর্বপ্রাচীন নমুনা ১১০০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ।
- অগ্নিরে দহিলে পিণ্ড হুঅই যে ধূলি। [গোবিন্দচন্দ্রের গীত। মাতার গঞ্জনা ও উপদেশ]
- গুরুর আজ্ঞাএ মোক্ষ হুঅই পিণ্ডকু।
[গোবিন্দচন্দ্রের গীত। মাতার গঞ্জনা ও উপদেশ]
সূত্র :
- বঙ্গসাহিত্য-পরিচয়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম খণ্ড। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ। পৃষ্ঠা: ৮৯, ৯১।
- বঙ্গীয় শব্দকোষ (প্রথম খণ্ড)। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য অকাদেমী। ২০০১। পৃষ্ঠা: ২।
- বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক অভিধান। প্রথম খণ্ড (অ-ঞ)। বাংলা একাডেমি, ঢাকা। জুন ২০১৩। পৃষ্ঠা: ১
- বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান। বাংলা একাডেমী, ঢাকা, মার্চ ২০০৫। পৃষ্ঠা: ১।
- বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (প্রথম খণ্ড)। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস। সাহিত্য সংসদ। নভেম্বর ২০০০।পৃষ্ঠা: ২
- বাঙ্গালা শব্দকোষ। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি। ভূর্জপত্র। দোলযাত্রা ১৩৯৭। পৃষ্ঠা: ১
- ভারতী বাঙলা অভিধান। বিশিষ্ট পণ্ডিত ও অধ্যাপকমণ্ডলী কর্তৃক সম্পাদিত। ভারতী বুক স্টল। ১৯৫৯। পৃষ্ঠা: ১।
শব্দবোধ অভিধান। আশুতোষ দেব। দেব সাহিত্য কুটির। মার্চ ২০০০। পৃষ্ঠা: ১
- শব্দসঞ্চয়িতা। ডঃ অসিতকুমার বন্দোপাধ্যায়। নিউ সেন্ট্রাল বুক এজেন্সি প্রাঃ লিমিটেড। ২৩শে জানুয়ারি, ১৯৯৫। পৃষ্ঠা: ১
- শব্দার্থ প্রকাশিকা। কেশবচন্দ্র রায় কর্মকার। দেব সাহিত্য কুটির। মার্চ ২০০০। পৃষ্ঠা: ১
- শব্দার্থমুক্তাবলী। বেণীমাধব দে। ১৭৮৮ শকাব্দ। পৃষ্ঠা: ১।
- সংসদ বাংলা অভিধান। সাহিত্য সংসদ। শৈলেন্দ্র বিশ্বাস। মার্চ ২০০২। পৃষ্ঠা: ১।
- সচিত্র প্রকৃতিবাদ অভিধান (চতুর্থ সংস্করণ)। রামকমল বিদ্যালঙ্কার। ১২৯৫। পৃষ্ঠা: ১।
- সরল বাঙ্গালা অভিধান (সপ্তম সংস্করণ, নিউবেঙ্গল প্রেস ১৯৩৬)। সুবলচন্দ্র মিত্র। পৃষ্ঠা: ১৯।
- wordnet 2.1