অপ্সরা
বানান বিশ্লেষণ:
অ+প্+স্+অ+র্+আ
উচ্চারণ: ɔp.ʃo.ra
(অপ্.শো.রা)
শব্দ-উৎস:
अप्सरा
(অপ্সরা)>বাংলা
অপ্সরা।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: অপ্
(জল)-
√সৃ
(গমন করা)+অস
(অসুন),
কর্তৃবাচ্য
+আ
(টাপ্)
পদ:
বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { অপ্সরা | হিন্দু পৌরাণিক সত্তা | ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা | পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিক সত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | কর্মক্ষমতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}
সমার্থক শব্দাবলি: অপ্সরা, অপ্সরী, সুরাঙ্গনা, স্বর্গবেশ্যা।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে− অপ্ (জল) থেকে এদের উৎপন্ন হয়েছিল বলে এঁদের নাম- অপ্সরা।
দেবাসুরের সমুদ্রমন্থনকালে এঁরা সমুদ্র থেকে উত্থিত হয়েছিলেন।
দেব-দানব কেউ এদের গ্রহণ না করায়− এঁরা সর্বসাধারণের স্ত্রীরূপে গণ্য হলেন।
অবশ্য অধিকাংশ অপ্সরার স্বামী ছিলেন
গন্ধর্বরা।
অপ বা জল থেকে
উৎপন্ন হন নি, এমন কিছু অতুলনীয় নারীকেও অপ্সরা হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
এদের মধ্যে স্বর্গের কিছু স্বাধীনা অপ্সরাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
মনুসংহিতার মতে−
এঁদেরকে সপ্তম মনু সৃষ্টি করেছিলেন।
এদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০ হাজার।
কামদেবতা ছিলেন এঁদের অধিপতি।
অপ্সরারা নৃত্যকলায় পারদর্শী ছিলেন।
অধিকাংশ সময়
গন্ধর্বরাদের
সাথে এঁরা
ইন্দ্র-এর
সভায় নর্তকী হিসাবে যোগদান করতেন।
দেবতাদের এঁরা বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন।
বিশেষ করে যখন কোনো মানুষ, তপস্যা দ্বারা নিজেকে ইন্দ্রের স্থান দখল করার উপযোগী
হয়ে উঠতেন, তখন ইন্দ্র এঁদের তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য অপ্সরাদের নিয়োগ করতেন।
এঁরা ছিলেন মায়ারূপিণী।
নিজেদের শরীর নানাভাবে পরিবর্তিত করতে সক্ষম ছিলেন।
এরা পুরাকালে- নানাভাবে মানুষদেরকে সাহায্য করতেন।
এঁরা পাশা খেলায় পারদর্শী ছিলেন।
ভরত মুণির নাট্যশাস্ত্রের প্রথম অধ্যায় ৪৫-৫০ শ্লোকে পাওয়া যায়, ব্রহ্মা ভরতকে
কৌশিকীনৃত্তির জন্য শিবের নৃত্য থেকে শৃঙ্গাররসের উপযোগী কোমল অঙ্গহার, আত্মা রস,
ভাব ও ক্রিয়া নামক উপাদান দেন। এ সকল উপাদান নারী ছাড়া পুরুষ এককভাবে প্রয়োগ করতে
পারে না। তাই ব্রহ্মা কিছু নিপুণ অপ্সরা তৈরি করলেন। এই অপ্সররা ছিলেন মঞ্জুকেশী,
সুকেশী, মিশ্রকেশী, সুলোচনা, সৌদামিনী, দেবদত্তা, দেবসেনা, মনোরমা, সুদতী, সুন্দরী,
বিদগ্ধা, সুমালা, সন্ততি, সুনন্দা, সুমুখী, মাগধী, অর্জুনী, সরলা, কেরলা, ধৃতি,
নন্দা, সুপুষ্কলা ও কলভা।
সব মিলিয়ে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিগুলোতে যে সকল অপ্সরার নাম পাওয়া যায়, সেগুলো হলো− অদ্রিকা, অরুণা, অর্জুনী, অলম্বুষা, অসিতা, উর্বশী, কলভা কেরলা, ঘৃতাচী, জানপদী, তিলোত্তমা, দেবদত্তা, দেবসেনা, ধৃতি, নন্দা, নাগদত্তা, পুঞ্জিকাস্থলা, বিদগ্ধা, বিদ্যুৎপর্ণা, বিশ্বাচী, পঞ্চচূড়া, পূর্বচিত্তি, মঞ্জুকেশী, মনোরমা, মাগধী, মিশ্রকেশী, মেনকা, রম্ভা, রুচিরা, সরলা, সুকেশী, সুদতী, সুনন্দা, সন্ততি, সুন্দরী, সুপুষ্কলা, সুবাহু, সুমধ্যা, সুমালা, সুমুখী, সুলোচনা, সোমা, সৌদামিনী, হেমা।
সূত্র:
ভরত নাট্যশাস্ত্র। বঙ্গানুবাদ। ডঃ সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ডঃ ছন্দা চক্রবর্তী। ১৩৫৯।