অগ্নি
তাপ ও আলোক-প্রদায়ী শক্তি হলো আগুন। বাংলাতে সাধারণ অর্থ
আগুন। সমার্থক শব্দাবলি: অগ্নি,
অনল,
আগ,
আগুন,
পাবক,
বহ্নি,
বৈশ্বানর,
হুতাশন।
বস্তুর আণবিক স্তরে পরিবর্তন ঘটার কারণে নতুন পদার্থ সৃষ্টি হয়।
এই সৃষ্টির সময় আদ্য-বস্তু কিছুটা ভর হারায়। এই হারনো ভর অংশটুকু মূলত শক্তিতে
পরিণত হয়। এই অবমুক্ত শক্তির দৃশ্যমান অংশ হলো আলো এবং উষ্ণতার বিচারে তাপ। এইভাবে
উৎপন্ন আলো ও তাপের সমন্বিত শক্তি হলো- অগ্নি। বস্তুর রূপান্তরের সময় অবমুক্ত শক্তি
মানুষের দর্শনযোগ্য নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই শক্তিকে আগুন হিসেবে বিবেচনা
করা হয় না। মূলত রাসায়নিক বিক্রয়ার সময় ফোটন কণা উৎপন্ন হলে, দৃশ্যমান আলোর সৃষ্টি
হয়।
বস্তুর রূপান্তরের এই ঘটনা নানা ভাবে নানা পদার্থের মধ্যে ঘটতে পারে। মূলত যে বস্তু
রূপান্তরের মাধ্যমে আগুন সৃষ্টি হয়, তাকে ওই পদার্থের আগুন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যেমন- কয়লার আগুন, হাইড্রোজেনের আগুন, হিলিয়ামের আগুন ইত্যদি। মানুষের সর্বাধিক
ব্যবহৃত এবং পরিচিত আগুন হলো- বস্তুর জারণ প্রক্রিয়াজাত আগুন। এই বিচারে আগুনকে
প্রাথমিকভাবে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ভাগ দুটো হলো-
জারিত আগুন অজারিত আগুন।
- জারিত আগুন:
সাধারণভাবে পার্থিব আগুন তৈরি হয়ে থাকে জারণ প্রক্রিয়ায়।
দুর্বল দ্বিবন্ধনযুক্ত অক্সিজেন দহন বিক্রিয়ার উৎপাদ কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি
উৎপন্ন করে। এই সময় আদি বস্তু যে ভর হারায়, তার প্রকাশ ঘটে দৃশ্যমান আলো এবং
তাপের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ৩২ গ্রাম অক্সিজেন থেকে ৪১৮ কিলোজুল শক্তি উৎপন্ন হয়। জ্বালানীর বন্ধন শক্তি এখানে খুব সামান্যই ভূমিকা পালন করে।
মূলত দহন বিক্রিয়ার একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা জ্বলনাঙ্কে পৌছালে অগ্নিশিখা উৎপন্ন হয়। শিখা হলো আগুনের দৃশ্যমান অংশ। অগ্নিশিখা মূলত কার্বন ডাই অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন নিয়ে গঠিত। যথেষ্ট উত্তপ্ত
দশায় গ্যাস আয়নিত হয়ে প্লাজমা উৎপাদন করতে পারে। প্রজ্জ্বলিত পদার্থের উপাদান এবং অপদ্রব্যের উপস্থিতির ভিত্তিতে শিখার রং এবং আগুনের তীব্রতা ভিন্ন হয়।
- অ-জারিত আগুন:
অক্সিজেন ছাড়াই যে আগুন উৎপন্ন
হয়। মহাকাশে নক্ষত্রের অভ্যন্তরে যখন হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি হয় তখন, শক্তি
হিসেবে ফোটন কণা দ্বারা বাহিত হয়ে গামা রাশ্মি বেরিয়ে আসে। এক্ষেত্রে ফোটন কণা
দৃশ্যমান হলেও গামা রশ্মি দৃশ্যমান নয়। এই রূপান্তরের সময় সৃষ্ট তাপ ও দৃশ্যমান
আলোকময় অংশই আগুন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
নক্ষত্রভেদে বস্তুর রূপান্তর ঘটতে পারে নানাভাবে। তবে নক্ষত্রের জন্মের প্রথম ধাপ
সম্পন্ন হয় হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
বস্তুপুঞ্জের সঙ্কোচনে (নক্ষত্রের ভ্রূণদশায়) পারস্পরিক
সংঘর্ষে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই তাপমাত্রা যখন প্রায় ১ কোটি কেলভিনে
উন্নীত হয়, তখন বস্তুপুঞ্জের অভ্যন্তরে নিউক্লীয় বিক্রিয়া শুরু হয়। এই সময়
নক্ষত্রের অভ্যন্তরে প্রোটন-প্রোটন
চক্র পদ্ধতিতে
হাইড্রোজেন
থেকে
হিলিয়াম
রূপান্তর ঘটে। ২টি
হাইড্রোজেন
নিউক্লেই 1H
(প্রোটন)
বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এর ফলে তৈরি হয় দুটি ডিউটেরিয়াম(deuteririum)
-এ পরিণত হয়। একই সাথে তৈরি হয় একটি পজিট্রন এবং একটি
নিউট্রিনো। নিউট্রিনো মহাকাশে পালিয়ে যায়।
1
1H |
+ |
1
1H |
→ |
2
1D |
+ |
e+
|
+ |
ν
e |
+ |
0.42 MeV |
এই পর্যায়ে পজিট্রন এবং
ইলেকট্রনের সংঘর্ষের সৃষ্টি হয় এবং উভয়ই ধ্বংস হয়ে যায়। এই শক্তি
দুটি গামা রশ্মি ফোটন দ্বারা বাহিত হয়
দ্বিতীয় ধাপ : প্রথম ধাপে উৎপন্ন
১ ডিউটোরিয়াম
আরও একটি সাধারণ হাইড্রোজেনের সাথে মিলিত হয়ে হিলিয়াম (3He)-তে
পরিণত হয়। এটি মূলত
হিলিয়াম-এর
একটি
আইসোটোপ। এই সময় আরও তৈরি হয় দুটি প্রোটন এবং ১টি নিউট্রন এবং একই সাথে গামা
রশ্মি নির্গত হয়।
-
2
1D |
+ |
1
1H |
→ |
3
2He |
+ |
γ |
+ |
5.49 MeV |
তৃতীয় ধাপ:
দ্বিতীয় ধাপে উৎপন্ন
হিলিয়াম
(3He)-এর
সাথে একটি
হাইড্রোজেন
নিউক্লেই 1H
(প্রোটোন)
যুক্ত হয়ে হিলিয়াম (4He)
উৎপন্ন করে।
সব মিলিয়ে ৪টি হাইড্রোজনে মিলিত হয়ে হিলিয়াম
(4He)
তৈরি হয়। এই মিলনের ফলে যে ফলাফল পাওয়া যায়, তা হলো-
- 41H → 4He + 2e+ + 2γ +
2νe (26.7 MeV)
অগ্নিপ্রজ্জ্বলন প্রক্রিয়া
আগুন প্রজ্জ্বলিত হওয়ার জন্য প্রথম দরকার
জারক
উপাদান। এক্ষেত্রে জারক হিসেবে থাকতে পারে-
অক্সিজেন,
ওজোন,
হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড,
হ্যালোজেন,
নাইট্রিক এ্যাসিড
ইত্যাদি। প্রতিটি পদার্থ একটি নিরিষ্ট তাপমাত্রায় দহনের উপযোগী হয়ে ওঠে। একে বলা হয়
জ্বলনাঙ্ক। কোনো পদার্থ যখন জ্বলাঙ্ককে অতিক্রম করে, তখন যদি উপযুক্ত জারক উপাদান
যথেষ্ট পরিমাণ উক্ত বস্তুর সংস্পর্শে থাকে, তাহলে জ্বালানী দ্রবের অংশবিশেষ বা
সম্পূর্ণ অংশের রূপান্তর ঘটতে থাকে। এই রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় জ্বালানী আদি ভর
হারাতে থাকে। এই ভর শক্তিতে রূপান্তরিত তাপ ও আলোককণা বা রশ্মি হয়ে অবমুক্ত হয়। এ
ছাড়া জ্বালানীর কিছু অংশ ছাই হিসেবে ধোয়া হিসেবে পাওয়া যায়।
ধরা যাক জ্বালানী হিসেবে একটুকরো কাঠ রাখা আছে। এই কাঠের তাপমাত্রাকে যদি কোনো ভাবে
জ্বলনাঙ্কে উন্নীত করা যায়, তাহলে বাতাসের অক্ষিজেন জারক হিসেবে কাঠের কার্বন
কণাগুলোকে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করবে। এই অবস্থায় কার্বন অক্সিজেনের উপস্থিতিতে
কার্বন-ডাই-অক্সাইডে পরিণত হতে থাকবে। এই অবস্থায় কাঠের কার্বনের কিছু অংশ শক্তি
হিসেবে অবমুক্তি লাভ করবে। আদিম মানুষ শুকনো ঘাস লতা পাতার উপর চকমকি পাথরের ঘর্ষণে
উৎপন্ন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করে, উক্ত উপাদানগুলোর তাপমাত্রাকে জ্বলনাঙ্কে পৌঁছে
দিত। এর ফলে উক্ত উপাদানগুলো জ্বলে উঠতো এবং আগুনের সৃষ্টি হতো।
অবমুক্ত শক্তি উত্তপ্ত ফোটন কণা হিসেবে হিসেবে নির্গত হয়। দ্রত গতি সম্পন্ন এই কণার
তাপ পার্শ্ববর্তী মাধ্যম শোষণ করে এবং এই মাধ্যম উত্তপ্ত হয়ে হঠে। ফোটন কণা মানুষের
দর্শনেন্দ্রিয়কে উজ্জীবীত করে, আর মাধ্যমের তাপ স্পর্শেন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করে।
অগ্নিপ্রজ্জ্বলনে উপযুক্ত জারক এবং জ্বালনী থাকলেই হবে না, এদের ভৌত দশাও যথার্থ হতে
হবে। যেমন- শুকনো কাঠ সহজে জ্বলে উঠবে কিন্তু ভেজা কাঠ জ্বলবে না। কারণ ভেজা কাঠের
জলীয় অংশের কাঠের কার্বন জলনাঙ্কে পৌঁছাতে পারে না। জ্বালানী এবং জারকের সরবরাহ
পর্যাপ্ত থাকতে হবে। এই দুই উপাদানের ঘাটতি থাকলে, আগুন জ্বলে উঠেই নিভে যাবে।
কিম্বা অল্প সময়ের জন্য জ্বলে নিভে যাবে। আগুন জ্বলা এবং এবং অবিরাম জ্বলার জন্য
প্রয়োজন জ্বলন শৃঙ্খলা।
আগুনের উৎস থেকে বেরিয়ে আসা দৃশ্যমান অংশকে বলা হয় অগ্নিশিখা। এই অংশটি তৈরি
হয় জ্বালানী থেকে বেরিয়ে আসা গ্যাসীয় অংশ দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আলোককণার সংমিশ্রণে।
দৃশ্যমান শক্তি হিসেবে থাকে ফোটন কণা। এর সাথে অদৃশ্যমান অংশ থাকতে পারে অবলোহিত ও
অতিবেগুনি রশ্মি।
জ্বালানী এবং জারকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে এর রঙ। জৈব পদার্থ যেমন কাঠ অথবা গ্যাসের অসম্পূর্ণ দহনের সময় লাল-কমলা
বরণের শিখা লক্ষ্য করা যায়। মিথেন জাতীয় গ্যাসের পূর্ণ দহনে শিখায় গঠিত উত্তেজিত অণুতে বিভিন্ন ইলেকট্রন স্থানান্তরের কারণে একক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ নির্গমনের কারণে একটি হালকা নীল রঙ দেখা যায়। ক্লোরিনের মধ্যে হাইড্রোজেন পোড়ালে একটি
ফ্যাকশে শিখা উৎপন্ন হয়। বোরন এবং এর যৌগের দহন তীব্র সবুজ শিখা নিঃসরণ করে। এই
শিখাকে অনেক সময় "সবুজ ড্রাগন" বলা হয়। সাধারণভাবে জৈব পদার্থের শিখার নিচের
অংশ সবচেয়ে বেশ গরম থাকে। এর রঙ হলো হলুদ। এই হলুদ অঞ্চলের উপরে অপেক্ষাকৃত শীতল
অংশের রঙ হয় কমলা। এর উপরের অংশে তাপমাত্রা আরও কমে যায়। এই অংশের রঙ লাল। এই লাল
অঞ্চলের উপরে আর দহন ক্রিয়া চলে না। এখানে অদাহ্য কার্বন কণা কালো ধোঁয়া হিসাবে দৃশ্যমান হয়।
আগুনের ব্যবহার
আগুনের ব্যবহার বলতে বুঝায়- আগুন জ্বালনো এবং প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা। আদিম মানুষের আগুন আবিষ্কারের যে উপাখ্যান প্রচলিত আছে, তা মুলত আগুন জ্বলানো এবং তা নিয়ন্ত্রণ অর্থে ব্যহৃত হয়।
প্রাকৃতিকভাব উৎপন্ন আগুনের সাথে মানুষ পরিচিত হয়েছিল আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত লাভাস্রোত, দাবানল, বজ্রপাত ইত্যাদির মাধ্যমে। তবে প্রাক্-মানব গোষ্ঠীর প্রজাতিসমূহের কাছে আগুন ছিল শুধুই প্রাকৃতিক ভয়ঙ্কর শক্তি। এরা আগুন জ্বালানো বা এর নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল আয়ত্ব করতে পারে নি।
প্রায় ২৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে পাথরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার আদিম কৌশল উদ্ভাবন করেছিল হোমো হ্যাবিলিসরা।
নানা ধরনের পাথুরে অস্ত্র তৈরি করার সময় এরা লক্ষ্য করেছিল, প্রস্তরখণ্ডে আঘাত করলে আগুনের ফুলকি বেড়িয়ে আসে। এই স্ফুলিঙ্গ শুকনো ঘাস জাতীয় দ্রব্যাদিতে পতিত হলে, তা জ্বলে উঠে। প্রাকৃতিক এই ঘটনাকে অনুসরণ করে এরা আগুন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। অচিরেই এরা আগুনের নানাবিধ গুণের সাথে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। প্রাধমিক পর্যায়ে এরা আগুনকে তিনটি উদ্দেশ্যে ব্যবহার শুরু করেছিল।
১.
মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার
জন্য আগুনের ব্যবহার
২. শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আগুনের ব্যবহার
৩. হিংস্র পশুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আগুনের ব্যবহার
এরা আগুন জ্বালানো এবং আগুন নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবহার করা শিখেছিল। রাতে হিংস্র পশুদের হাত থেকে
রক্ষা পাওয়ার জন্য এরা গুহার সম্মুখভাবে আগুন জ্বালিয়ে রাখতো। এছাড়া মাংস পুড়িয়ে
খাওয়ার জন্য এরা আগুন ব্যবহার করতে শিখেছিল। সম্ভবত এই ধারায়
হোমো
গণের পরবর্তী প্রজাতি
হোমো রুডোলফেনসিস-রা
আগুনের ব্যবহার করতো।
হোমো
গণের পরবর্তী প্রজাতির দৈহিক পরিবর্তন ঘটেছিল
হোমো ইরেক্টাসদের
ভিতরে।
২০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে বরফশীতল পরিবেশের ভিতরে এই প্রজাতির চেয়ে এক ধাপ উন্নত প্রজাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।
এই প্রজাতি প্রথম দুই পায়ে ভর করে মাটির উপর সটান দাঁড়াতে
সক্ষম হয়ে উঠেছিল। এছাড়া এরা সৃজনশীল ক্ষমতার দ্বারা নিজের বুদ্ধিমত্তা
দিয়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় জীবনধারণের উপকরণ প্রকৃতি থেকে
সংগ্রহ করতে পারতো এবং উপাদনসমূহ থেকে নানাবিধ উপকরণ
তৈরি করতে পার তো। তবে সৃজনশীল
ক্ষমতার বিচারে এরা আধুনিক মানুষের সমকক্ষ ছিল না।
আত্মরক্ষা এবং শিকারের জন্য এরা পাথুরে কুঠার ব্যবহার করতো।
এই কুঠারের আকার ছিল অনেকটা নাশপাতির মতো। এই বিশেষ ধরনের
যন্ত্রকে বলা হয়
আশুলিয়ান যন্ত্রপাতি।
হোমো
গণের পরবর্তী প্রজাতিসমূহের আগুনের ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি
পেয়েছিল। আদিম মানুষ তথা
হোমো স্যাপিয়েন্সরা-দের
আবির্ভাবের আগের অন্যান্য যে সকল প্রজাতির ভিতরে আগুনের
হোমো গটেনজেনসিস,
হোমো জর্জিকাস,
হোমো এন্টেসেসর,
হোমো সেপ্রানেনসিস,
হাইডেলবার্গেনসিস,
হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস
আদিম মানুষ তথা
হোমো স্যাপিয়েন্সরা আগুন জ্বালানো এবং তা সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ নতুন করে আবিষ্কার করেছিল, নাকি
হোমো গণের উন্নতর প্রজাদের কাছ থেকে শিখেছিল তা জানা যায় না।
হোমো স্যাপিয়েন্সরস্-সহ
হোমো গণের অন্যান্য প্রজাতিরা আগুন উৎপন্ন করার কৌশল শিখেছিল প্রকৃতি থেকেই।
এর শুরুটা হয়েছিল পাথরে আঘাত করা মাধ্যমে।
এই সূত্রে শুকনো কাঠ ঘষে সম্ভবত
হোমো স্যাপিয়েন্সরা শুকনো কাঠ ঘষে আগুন তৈরি করা শিখেছিল।
আগুনের তাপ ও আলো দেওয়ার ক্ষমতাকে আদিম মানুষ ভয় এবং শ্রদ্ধা করতে শিখেছিল। বিশেষ করে অগ্ন্যুৎপাৎ, বজ্রপাত, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক ঘটনায় আগুনের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে
মানুষ আগুনের প্রতি শ্রদ্ধা করতে শিখেছিল। এ্ই সূত্রে পৃথিবীর
জনগোষ্ঠীর মধ্য অগ্নিদেবতার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
লক্ষ লক্ষ বছরে ধরে
হোমো স্যাপিয়েন্সদের
আগের প্রজাতিগুলো আগুনের গুটিকয়েক ব্যবহারের ভিতরে আটকে ছিল।
হোমো স্যাপিয়েন্সরা
তাদের সৃজনশীল ক্ষমতার দ্বারা সে সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে নতুন
সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল। এরা আগুন দিয়ে ধাতুর তৈরি অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি তৈরি করার
কৌশল উদ্ভাবন করেছিল। পোড়া মাটির টেকসই পাত্র তৈরি করা শিখেছিল আগুন ব্যবহার করে।
প্রথম দিকে মানুষের কাছে আগুনের জ্বালানী হিসেবে ছিল শুধু কাঠ, ঘাস, পশুর চর্বি
ইত্যাদি। পরে মানুষ জ্বালানী হিসেবে এই তালিকায় যুক্ত করেছে, কয়লা, খনিজতেল, গ্যাস
ইত্যাদি। আরও পরে যুক্ত হয়েছে পারমাণবিক শক্তি সৌরশক্তি-সহ নানা ধরনের
বিদ্যুৎশক্তি-জাত আগুন।