আদম
বানান্ বিশ্লেষণ: আ+দ্+ম্+অ
উচ্চারণ:
a.d̪om (আ.দোম্)
শব্দ-উৎস: আরবি আদম> বাংলা আদম।
পদ: বিশেষ্য
১. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| পুরুষ | ব্যক্তি | জীবসত্তা | জীবন্তবস্তু | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |

অর্থ: আদি ইব্রাহিম (আঃ)-এর প্রচারিত ধর্মমতে− আদম ছিলেন প্রথম পুরুষ মানুষ। তারপরে সৃষ্টি করা হয় তাঁর স্ত্রী হাওয়া। এই আদি দম্পতির উত্তর-প্রজন্মের সকল সদস্য আদমের বংশধর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আদমের সন্তান হিসেবে মানুষের অপর নাম আদমি। ইব্রাহিমীয় ধর্মের সূত্রে প্রথমে ইহুদীরা এই মত গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তী নবী ঈসা (আঃ)-এর অনুসারী খ্রিষ্টান এবং হজরত মুহম্মদ (সাঃ) অনুসারী মুসলমানরা এই মত গ্রহণ করা করেন। ইহুদী, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মে আদমকে প্রথম পুরুষ মানুষ এবং একই সাথে প্রথম নবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসকল ধর্মেমতে ঈশ্বর তাঁকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন। তারপর তাঁর দেহে প্রাণ সঞ্চার করা হয়। হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয় আদমের পাঁজর থেকে। সৃষ্টির পর তাঁদের আবাস হয় বেহেশত বা স্বর্গ। মানুষ যেহেতু সকল প্রজাতির ভিতর শ্রেষ্ঠ, তাই ঈশ্বর দেবদূত বা ফেরেশতাকুলকে আদেশ করেন আদমকে সিজদা করার জন্য। ইবলিশ ব্যতীত সকল ফেরেশতা এই আদেশ প্রতিপালন করেন।

কুরাআনের সুরা আল্-বাক্বারাহ -তে এ বিষয়ে বলা হয়েছে−
৩০. আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
৩১. আর আল্লাহ্ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।
৩২. তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।
৩৩. তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর!
৩৪. এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইব্‌লীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।
৩৫. এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।
৩৬. অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে।

কুরআনে আদম-এর নাম ২৫টি আয়াতে ২৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা বাক্বারাহ, সুরা আ-রাফ, সুরা ইসরা, সুরা কাহ্ফ এবং সুরা ত্ব-হাতে তাঁর নাম, গুনাবলী ও কার্যাবলী আলোচনা করা হয়েছে। সূরা হিজর ও ছোয়াদে শুধু গুণাবলী এবং সূরা আল ইমরান, সুরা মায়েদাহ এবং সুরা ইয়াছীনে আনুসঙ্গিক রূপে শুধু নামের উল্লেখ আছে।
বাইবেলর আদিপর্বে ১.২৬-২৮ অংশে মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে আছে
২৬. পরে ঈশ্বর কহিলেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি ; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে, সমস্ত পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্ত্তৃত্ব করুক।
২৭. পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।
২৮. পরে ঈশ্বর তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন; ঈশ্বর কহিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর, আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের পক্ষিগণের উপরে, এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।

ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {হোমো | হোমোনিনি | হোমিনিডি | হোমোনোইডি | ক্যাটার্‌হৃনি | সিমিফর্ম্‌স | হ্যাপ্লোর্‌হৃনি | প্রাইমেট | অমরাযুক্ত স্তন্যপায়ী | স্তন্যপায়ী | মেরুদণ্ডী | কর্ডেট | প্রাণী | জীবসত্তা | জীবন্তবস্তু | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা | }

অর্থ: হোমিনিডি গোত্রের হোমো (Homo) গণের যে কোন জীবিত বা বিলুপ্ত প্রজাতি, যারা বুদ্ধিমত্তার বিচারে শ্রেষ্ঠ, বাক্‌প্রত্যঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট ভাষার সাহায্যে সুচারুরূপে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে এবং ভূমির উপর দুই পায়ে সরলভাবে দাঁড়াতে পারে। এরা নিজের বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নিজেদের প্রয়োজনীয় জীবনধারণের উপকরণ প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করতে পারে এবং উপাদনসমূহ থেকে নানাবিধ উপকরণ তৈরি করতে পারে। উন্নত মানসিক ভাবনার দ্বারা চিত্তবিনোদনের জন্য নানাবিধ বিমূর্তভাবনা উপস্থাপন করতে পারে।

বৈজ্ঞানিক নাম : Homo sapiens [ বিস্তারিত: মানুষ [জীববিজ্ঞান]

সমার্থক শব্দাবলি: আদম, আদমি, ইনসান, জন, নর, নৃ, মনুজ, মনুষ্যমানব, মানুখ, মানুষ, লোক,  হোমো
যুক্তশব্দ


সূত্র :