ধঞ্চে (বৃক্ষ)
সেসবানিয়া গণের একটি অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল এবং অভিযোজনক্ষম উদ্ভিদ। সেসবানিয়া গণের মালয় দ্বীপের নরমকাঠযুক্ত বৃক্ষ বিশেষ। প্রায় ৬.৬-৫.৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ফ্যাবালেস বর্গের সেসবানিয়া গণ থেকে এই প্রজাতির উদ্ভিদের উদ্ভব হয়ৈছিল। ধঞ্চে গাছের আদি আবাসস্থল ভারত ও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। বর্তমানে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম), আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার অনেক দেশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে এবং চাষ করা হয়।

এটি একটি একবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। অনুকূল পরিবেশে এর উচ্চতা ১ থেকে ৭ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে সাধারণত এটি ২-৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়।

শিকড় ও নডিউল: ধঞ্চে গাছের শিকড়ে প্রচুর পরিমাণে ছোট ছোট গুটি বা নডিউল থাকে। এই নডিউলে রাইজোবিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে, যা সরাসরি বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটিতে জমা করে। ধঞ্চের একটি বিশেষ প্রজাতি
Sesbania rostrata এর  শুধু শিকড়ে নয়, কাণ্ডেও নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী গুটি দেখা যায়।

কাণ্ড ও পাতা: এদের কাণ্ড বলিষ্ঠ, শাখা-প্রশাখাযুক্ত এবং কাষ্ঠল প্রকৃতির। কাণ্ডের ভেতরে সাদা শাঁস  থাকে। এর পাতাগুলো পক্ষল এবং লম্বাটে। দেখতে অনেকটা তেঁতুল পাতার মতো। একেকটি পাতায় ১০ থেকে ৩০ জোড়া পর্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লিফলেট বা পত্রক থাকতে পারে।

ফুল: ধঞ্চে ফুল দেখতে আকর্ষণীয় এবং এটি মূলত পতঙ্গ পরাগায়িত উদ্ভিদ। রঙ ও আকৃতি: ফুলগুলো সাধারণত উজ্জ্বল হলুদ রঙের হয়। এদের গঠন অনেকটা প্রজাপতির মতো । ফুলগুলো এককভাবে ফুটে থাকে না; বরং লম্বা মঞ্জুরিতে থোকায় থোকায় সজ্জিত থাকে। একটি থোকায় সাধারণত ৩ থেকে ১২টি ফুল থাকে। পাপড়ির উপরের দিকের বড় পাপড়িটিতে মাঝেমধ্যে ছোট ছোট বেগুনি বা কালো রঙের ছিটা দাগ দেখা যায়। সাধারণত বর্ষাকালের শেষের দিকে বা শরতের শুরুতে গাছে ফুল আসতে শুরু করে।

ফল: ধঞ্চের ফল উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভাষায় 'লেগুম' বা পড নামে পরিচিত। ফলগুলো চিকন, গোলাকার এবং বেশ লম্বা হয়। এটি অনেকটা শিম বা মটরশুঁটির লম্বা সংস্করণের মতো। প্রজাতির ভেদে এটি ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফলগুলো কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে এবং পাকলে বাদামী বা ধূসর বর্ণ ধারণ করে। ফলের অগ্রভাগ সাধারণত কিছুটা সূক্ষ্ম বা সুচালো হয়। প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে এবং একেকটি ফলের ভেতরে সারিবদ্ধভাবে বীজ সাজানো থাকে।

বীজ: ধঞ্চের বীজগুলো বেশ শক্ত এবং এদের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা খুব বেশি।   প্রতিটি ফলে সাধারণত ২০ থেকে ৪০টি বীজ থাকে।  বীজগুলো ছোট, গোলাকার বা কিছুটা সিলিন্ডার আকৃতির হয়। এগুলো সাধারণত কালচে বাদামী, সবুজাভ-বাদামী বা ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে। বীজের আবরণ বেশ শক্ত হওয়ায় এগুলো প্রতিকূল পরিবেশেও অনেকদিন টিকে থাকতে পারে। ব্যবহার: ধঞ্চের বীজ সরাসরি বপন করে নতুন চারা তৈরি করা হয়। এছাড়া কিছু শিল্পক্ষেত্রে বীজের আঠা ব্যবহৃত হয়।

ভূমি: এটি বেলে দোআঁশ থেকে শুরু করে এঁটেল বা লবণাক্ত সব ধরনের মাটিতেই জন্মাতে পারে। ধঞ্চে গাছ অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা এবং খরা উভয় পরিস্থিতি সহ্য করতে পারে। এমনকি বন্যার পানিতেও এই গাছ বেঁচে থাকতে সক্ষম।

দ্রুত পচনশীল হওয়ায় এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সর্বোত্তম সবুজ সার হিসেবে কাজ করে। এর কাণ্ড থেকে পাটের মতো এক প্রকার আঁশ পাওয়া যায়, যা দড়ি বা নিম্নমানের কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। শুকনো ধঞ্চে কাঠি বা শলাকা গ্রামাঞ্চলে রান্নার কাজে সাশ্রয়ী জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।