প্রতীক
: Be
পারমাণবিক সংখ্যা : ৪
পারমাণবিক ভর : ৯.০১২২
ইলেক্ট্রন বিন্যাস : 1s2
2s2
গলনাঙ্ক : ১২৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
স্ফুটনাঙ্ক : ২৯৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
এটি একটি ধূসর বর্ণের হাল্কা ও ভঙ্গুর
মৌলিক পদার্থ।
এটি একটি
ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু।
ভৌত ধর্মের বিচারে
কঠিন। কক্ষ
তাপমাত্রায় এই ধাতুটি কেলাসাকারে থাকে। তবে বেরিল জাতীয় রত্নে বেরিলিয়াম যৌগিক
পদার্থের অংশ হিসাবে পাওয়া যায়।
প্রাচীন
কাল থেকে বেরিল গাত্রের রত্ন
পান্নার
সাথে মানুষের পরিচয় ঘটেছিল। কিন্তু তখন মানুষ জানতো না যে, এর ভিতরে
যে বেরিলিয়াম নামক একটি বিশেষ ধরনের মৌলিক পদার্থ আছে। উল্লেখ্য
পান্নাহলো—
এ্যালুমিনিয়াম,বেরেলিয়াম,
সিলিকন ও
অক্সিজেনর একটি জটিল যৌগ।
রাসায়নিক সংকেত
Be3Al2(SiO3)6
।
খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত রসায়নবিদের কাছে
ধাতু হিসেবে বেরিলিয়াম
গবেষণায় বিশেষ গুরত্বপূর্ণ লাভ করে নি। পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণাগারে আকরিক এবং
রত্নরাজির গবেষণার ক্ষেত্রে প্রসারিত হয়েছিল
খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে। এরই ধারাবাহিকতায়
বার্লিন এ্যাকডেমি অব সায়েন্সের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এফ.
আচার্ড ১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বেরিলিয়াম সমৃদ্ধ খনিজ পদার্থ
নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি বেরিল বিশ্লেষণ করে, সিলিকন
অক্সাইড ২১.৭%, এ্যালুমিনিয়ম অক্সাইড ৬০.০৫%,
আয়রণ অক্সাইড এবং সিলিকন অক্সাইড ৫.০২% এবং ক্যালসিয়াম অক্সাইড ৮.৩% পান
এবং বাকি প্রায় ৫% সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে ব্যর্থ হন।
১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে জে, বিন্ধহেইম নামক অপর একজন গবেষক বেরিল
বিশ্লেষণ করে একই ফলাফল পান। এরপর আরও অনেকে বেরিল
নিয়ে গবেষণা করলেও বেরিলিয়ামের সন্ধান দিতে পারেন নি।
১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এল. ভ্যায়ুকুয়েলিন নামক একজন গবেষক
পান্না বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারেন যে এতে নতুন কোন মৌলিক
পদার্থ আছে। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে তিনি
বলেন যে পান্নাতে
অশুদ্ধ এ্যালুমিনা আছে। তিনি এ্যালুমিনার অশুদ্ধতার জন্য
একটি বিশেষ উপাদানকে দায়ী করেন এবং এর নাম রাখেন
গ্লুসিনিয়াম। এবং এর সঙ্কেত দেন
Gl
।
পরে রাসায়নবিদগণ বেরিল থেকে প্রাপ্ত পদার্থ হিসাবে এর নাম
রাখেন বেরিলিয়াম। ব্যবহার
বেরিলিয়াম-তাম্র সঙ্কর উৎপাদনে এবং পারমাণবিক চুল্লির জন্য বেরিলিয়াম সম্বলিত সহনীয় এবং প্রতিফলক
পদার্থের উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। যে সকল স্থানে ইস্পাতের ঘর্ষণের ফলে স্ফূলিঙ্গ সৃষ্টি করে
বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, সে সকল স্থানে বেরিলিয়ামযুক্ত
যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। পারমাণবিক শক্তি সংশ্লিষ্ট কাজে বেরিলিয়াম ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
নক্ষত্রলোকে বেরিলিয়াম
যে সকল
নক্ষত্রের
ভর সৌরভরের ০.৫ থেকে ১০ গুণ বেশি হয়, তাদের কেন্দ্রের
হিলিয়াম
প্রজ্জ্বলিত হওয়ার পূর্বেই, এদের বাইরের
হাইড্রোজেন
স্তর জ্বলে উঠে এবং নক্ষত্রটি ক্রমবিবর্তিত হয়ে একটি
লাল দানব তারায়
(red giant star)
পরিণত হয়।
এই শ্রেণির নক্ষত্রের উল্লেখযোগ্য নমুনা হলো-
আর্দ্রা ।
লাল দানব তারার
অভ্যন্তরভাগ অতি সঙ্কোচনের কারণে, এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং এর অভ্যন্তরভাগের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে
থাকে। যখন এর আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ১০৮
এবং ঘনত্বের পরিমাণ ১০৮
গ্রাম/বর্গ সেন্টিমিটার হয়, তখন নক্ষত্রের ভিতরে জমে থাকা
হিলিয়ামের দহন শুরু হয়। প্রথাবস্থায় হিলিয়াম সংযোজিত হয়ে
বেরিলিয়াম-৮ তৈরি করে।
4He + 4He + 92 keV → 8*Be
এরপর বেরিলিয়াম-৮ এর সাথে আরও একটি হিলিয়ামের সাথে
যুক্ত হয়ে তৈরি হয় কার্বন-১২ তৈরি করে। এই অবস্থায়
হিলিয়াম ঝলকেরএর সৃষ্টি হয় ।