১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দেবকী বসু পরিচালিত
'বিদ্যাপতি' ছবিতে অভিনয় করে খ্যতির শীর্ষে উঠে আসেন। এই বছরেই মুক্তিপ্রাপ্ত
'মুক্তি' ছবির মাধ্যমে তিনি প্রথম সারির নায়িকা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। এই বছর
থেকে দরিদ্র সস্তা অভিনেত্রী কাননবালা থেকে তিনি সম্ভ্রান্ত কাননদেবী হয়ে উঠেন।
আর্থিক দুরবস্থার কারণে, এই সময়ে
বাছবিচার ছাড়া তিনি বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে মে (শনিবার ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৬),
কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কাহিনী
অবলম্বনে নির্মিত
সাপুড়ে'
নামক ছায়াছবি মুক্তি পায়। এই ছবিতে 'চন্দন' চরিত্রে অভিনয়
ও গানে কণ্ঠ দান করেন।
কাননদেবীর অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা
|
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে কানদেবী নিউ থিয়েটার্স ছেড়ে নিজের পছন্দমত
ছবিতে অভিনয় শুরু করেন
। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত 'শেষ উত্তর' ও তার হিন্দী 'জবাব' ছবিতে
তিনি বিশেষ সাফল্য পান। বিশেষ করে তাঁর 'তুফান মেল' গানটি তাঁকে অভিনেত্রীর
পাশাপাশি গায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত হিন্দি বাংলা মিলিয়ে বেছে বেছে
অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করেন।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে 'শ্রীমতী পিকচার্স' প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের
ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনার দিকে মন দেন। এই সময় তিনি শরৎচন্দ্রের উপন্যাস
অবলম্বনে চলচ্চিত্র তৈরিতে মনোযোগী হন।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শেষবারের মতো অভিনয় করেন '‘ইন্দ্রনাথ শ্রীকান্ত ও অন্নদা
দিদি'।
কণ্ঠশিল্পী কানন
দেবী
অভিনয় ছাড়া, তিন দশক ব্যাপী তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয়
কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলা সঙ্গীতজগতে অসাধারণ অবদান রাখেন।
সুকণ্ঠের জন্য তিনি শৈশব থেকেই সুনাম পেয়ে এসেছেন। কিন্তু
আর্থিক দুরবস্থার জন্য তাঁর মা তাঁকে ভালো শিক্ষকের কাছে
গান শেখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন নি। তাঁর সহজাত
সঙ্গীতপ্রতিভার বদলে তিনি ছবিতে কণ্ঠদান করতে
পেরেছিলেন। পরে অবশ্য কাননদেবী ওস্তাদ আল্লা রাখার কাছে তালিম নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত এবং আধুনিক বাংলা গানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। সেকালের বিখ্যাত গায়ক, সুরকার এবং সঙ্গীত শিক্ষক রাইচাঁদ বড়াল, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, পঙ্কজ মল্লিক, অনাদিকুমার দস্তিদার, ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র প্রমুখের কাছে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গান শিখেছিলেন। তাঁর গাওয়া নজরুলসঙ্গীত 'আমি বনফুল গো' সে সময়ে অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলো— 'আমার হৃদয় তোমার আপন হাতে', 'তার বিদায় বেলার মালা খানি', 'আজ সবার রঙে রঙ মেশাতে হবে', 'তোমার সুরের ধারা' আমার বেলা যে যায়', 'বারে বারে চেয়েছি, পেয়েছি যে তারে', প্রাণ চায় চক্ষু না চায়', 'সেই ভালো সেই ভালো', 'একদিন চিনে নেবে তারে', 'কাছে যবে ছিল হলোনা যাওয়া', 'সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে', 'এত দিন যে বসে ছিলেম পথ চেয়ে'।
শেষজীবনে তিবি সেবামূলক কাজে নিজেকে যুক্ত
করেন । দুঃস্থ বয়স্ক শিল্পীদের সাহায্যের জন্য তিনি সব সময়ে সক্রিয় ছিলেন ।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পদ্মশ্রী সম্মাননা পান।
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর জনপ্রিয় আত্মজীবনী 'সবারে আমি নমি'।
১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে দেওয়া হয় দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই জুলাই তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।