পদ্মরাণী চট্টোপাধ্যায়
১৯১৯-১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ
সঙ্গীতশিল্পী
মূল নাম পদ্মরাণী গঙ্গোপাধ্যায়। বিবাহের পর পদবী পাল্টে নাম হয়েছিল পদ্মরাণী চট্টোপাধ্যায়।

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের তদানীন্তন বাংলার চব্বিশ পরগণার টাকী শহরে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন তবলাবাদক। তিনি ছিলেন সেকালের প্রখ্যাত তবলাবাদক হিরু গঙ্গোপাধ্যায়ের ছাত্র।

কীর্তন গায়ক হিসেবে তাঁর মামা খ্যাতি ছিল। তাঁর দাদু ছিলেন দক্ষ পাখোয়াজবাদক। এই মামার কাছেই তাঁর এবং তাঁর চার দিনের বড় মামাতো বোন ছায়ারাণী চট্টোপাধ্যায় সঙ্গীতে হাতে খড়ি। এরপর তিনি অন্ধগায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে, অনাদি মুখোপাধ্যায় এবং হরিদাস মুখোপাধ্যায়ের কাছে গান শেখেন। শৈশবে তিনি গান পরিবেশন করে জমিদার মুন্সিজীর আশীর্বাদ লাভ করেন এবং পুরস্কৃত হন।

পঞ্চাশের দশকে পদ্মরাণীর সাথে কমলদাশগুপ্তের  ঘটনাক্রমে পরিচয় হয়। এই সময় কমল দাশগুপ্ত থাকতেন গ্রে স্ট্রিটের বাসায়। তিনি এই বাড়িতে গিয়ে তাঁর কাছে নজরুলের গান শিখতেন।

১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর দুটি গান নিয়ে একটি নজরুলসঙ্গীতের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। টুইন কোম্পানি থেকে প্রকাশিত এই দুটি গানের সুরকার ছিলেন সুরেশ চক্তবর্তী। এই গান দুটি ছিল-

নজরুলের রচিত 'যবে তুলসী তলায়' গানটি গেয়ে শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৩৮ মার্চ এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল [এন ১৭০৫০]। গানটির সুর করেছিলেন কমল দাশগুপ্ত। আসাদুল হক -এর রচিত ' নজরুলসঙ্গীতের অবিস্মরণীয় শিল্পী ' গ্রন্থ থেকে জানা যায়- এই গানটি প্রথমে রেকর্ডে গেয়েছিলেন সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়। সুরকার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলামনজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে গানটি রেকর্ড করা হলেও টেকনিক্যাল কারণে রেকর্ডটি বাতিল করা হয়। এরপর সুধীরা সেনগুপ্তা ও  ইন্দিরা সেনগুপ্তাকে দিয়ে রেকর্ড করা হয়। এই দুই জনই যথাযথভাবে গানটি পরিবেশন করতে ব্যর্থ হলে- রেকর্ডকৃত গান বাতিল করা হয়। এরপর রেকর্ড কোম্পানি আব্বাসউদ্দীন আহমদকে দিয়ে গানটি রেকর্ড করার ব্যবস্থা করেন। চূড়ান্তভাবে রেকর্ড করার দিন ধার্য হলেও, আব্বাসউদ্দীন আহমদ জরুরী টেলিগ্রাম পেয়ে দেশের বাড়ি চলে যান। এরপর গ্রামোফোন কোম্পানি এই গানটির জন্য ট্রেনার হিসেবে নিয়োগ দেন  কমল দাশগুপ্তকে।  নজরুল ইসলামের  সুরারোপিত গানটি ছিল একটু জটিল। কমল দাশগুপ্ত নজরুল ইসলামের করা সুরকে একটি সরল করে, তথকালীন আধুনিক গানের মতো করে পদ্মরাণীকে গানটি রেকর্ড করিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, এন ১৭১৭৮ রেকর্ডেটিতে নজরুল ইসলামের  রচিত দুটি গান প্রকাশিত হয়েছিল। গান দুটির শিল্পী ছিলেন- গিরীন চক্রবর্তী, অসিত মুখোপধ্যায়, চিত্ত রায়, রেবা সোম, পদ্মরাণী ও অনিমা মুখোপাধ্যায়। গান দুটি হলো-

আসাদুল হক-এর রচিত ' নজরুলসঙ্গীতের অবিস্মরণীয় শিল্পী' গ্রন্থ থেকে জানা যায়- পদ্মরাণী অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ১৬টি গান গেয়েছিলেন। এই গানগুলোর গীতিকার সম্পর্কে জানা যায় নি। এই গ্রন্থ থেক জানা যায়- পদ্মরাণীর অনুরোধে তাঁর নিজের নাম (পদ্ম) দিয়ে কবি একটি গান রচনা করেছিলেন। গানটি হলো- 'বন্ধু দেখলে তোমার বুকের মাঝে'। এই সময় ভাটিয়ালী সুরে আরও একটি গান রচনা করেছিলেন। গানটি হলো- 'নিশির নিশুতি যেন হিয়ার ভিতরে গো'। উল্লেখ্য, এই গান দুটি তিনি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর , কলকাতা বেতার ে ( কলকাতা খ ) চতুর্থ অধিবেশন  ( সন্ধ্যা ৯:৩০ ) । পরিবেশন করছিলেন।

তাঁর জীবদ্দশায় নানা ধরনের গান পরিবেশন করলেও তিনি মূলত নজরুলসঙ্গীতের শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন । নজরুলের গান ছাড়াও তিনি অন্যান্য রচয়িতাদের রেকর্ডে গেয়েছেন। তাঁর গাওয়া দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের উল্লেখ পাওয়া যায় সিদ্ধার্থ ঘোষের 'রেকর্ডে রবীন্দ্রসঙ্গীত গ্রন্থে [পৃষ্ঠা: ৬০]। এএচএমভি থেকে প্রকাশিত এই রেকর্ডে নম্বর ছিল- এন ১৭১৬৭। এই গান দুটির সহশিল্পী ছিলেন- রত্নমালা সেন ও রেবা ঘোষ। এএচএমভির রেকর্ড তালিকায় এন সিরিজের ১৭৭০ থেকে ১৭১৭৮ রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে।  তাই ধারণা করা যায়- এই গান দুটির প্রকাশকালও ছিল এই সময়ে। এই গান দুটি হলো-

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

রেকর্ডে পদ্মরাণীর গাও নজরুলসঙ্গীতের তালিকা

১. আমার কেহ নয় [তথ্য]
এইচএমভি।  এন ২৭০৭৪ । জানুয়ারি ১৯৪১ (পৌষ-মাঘ ১৩৪৭)

২.
আমি গিরিধারী সাথে মিলিতে যাইব  [তথ্য]
এইচএমভ । এন ১৭৪৮৫। জুলাই ১৯৪০ (আষাঢ়- শ্রাবণ ১৩৪৭)

৩.
এ দেবদাসীর পূজা লহ [তথ্য]
এইচএমভি। এন ১৭৩৪৪। সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ (ভাদ্র- আশ্বিন ১৩৪৬)

৪. একটুখানি দাও অবসর (মোরে একটুখানি দাও অবসর) [তথ্য]
টুইন এফটি ৪১৭১। [ডিসেম্বর ১৯৩৫ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪২)

৫. ও বন্ধু! দেখ্‌লে তোমায় বুকের মাঝে [তথ্য]
এইচএমভি। [সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৫)। এন ১৭১৮৫।

৬. ওরে শুভ্রবসনা রজনীগন্ধা [তথ্য ]
এইচএমভি। এন ১৭৩০৯। জুন ১৯৩৯ (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪৬)

৭. কত যুগ পাই নাই তোমার দেখা [তথ্য]
টুইন। এফটি ৪৬০৫। অক্টোবর ১৯৩৬ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৩)

৮. কে তোরে কি বলেছে মা [তথ্য]
এইচএমভি । এন ২৭০৭৪। জানুয়ারি ১৯৪১ (পৌষ-মাঘ ১৩৪৭)

৯. গগনে খেলায় সাপ বরষা বেদিনী [তথ্য]
এইচএমভি। এন ১৭১৭৮। আগষ্ট ১৯৩৮ (১৬ শ্রাবণ-১৪ ভাদ্র ১৩৪৫)। সহ শিল্পী বৃন্দ : গিরীন চক্রবর্তী, অসিত মুখোপাধ্যায়, চিত্ত রায়, রেবা সোম ও অনিমা মুখোপাধ্যায়।

১০. জাগো মালবিকা ! জাগো মালবিকা ! [তথ্য]
টুইন । এফটি ৪১৭১। [ডিসেম্বর ১৯৩৫ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪২)

১১. তুমি আরেকটি দিন থাকো  [তথ্য]
এইচএমভি । এফটি ১৭০৫০। মার্চ ১৯৩৮ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪৪)

১২. নিরুদ্দেশের পথে আমি হারিয়ে যদি যাই [তথ্য]
এইচএমভি । এন ১৭৩০৯। জুন ১৯৩৯ (জ্যৈষ্ঠ -আষাঢ় ১৩৪৬)

১৩. নিশির নিশুতি যেন  [তথ্য]
এইচএমভি ।  এন ১৭১৮৫। সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ (ভাদ্র-আশ্বিন-১৩৪৫)

১৪. বরষা ঋতু এল এল বিজয়ীর সাজে [তথ্য]
এইচএমভি। এন ১৭১৭৮। আগষ্ট ১৯৩৮ (১৬ শ্রাবণ-১৪ ভাদ্র ১৩৪৫)

১৫. বাহির দুয়ার মোর বন্ধ হে প্রিয় [তথ্য]
এইচএমভি । এন ১৭৪৮৫।[জুলাই ১৯৪০ (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৭)

১৬. যবে তুলসীতলায় প্রিয় সন্ধ্যাবেলায় [[তথ্য]
এইচএমভি । এন ১৭০৫০। মার্চ ১৯৩৮ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪৪)


সূত্র: