জরৎকারু
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
ঋষি/নাগকন্যা
|
হিন্দু
পৌরাণিক সত্তা
|
ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা |
পৌরাণিক সত্তা |
কাল্পনিক সত্তা |
কল্পনা |
সৃজনশীলতা |
কর্মক্ষমতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি
এই নামে উল্লেখযোগ্য দুটি
চরিত্র পাওয়া যায়। এঁদের একজন ছিলেন
যাযাবর নামক ঋষি বংশীয়ের পুত্রসন্তান।
অন্যজন
কশ্যপের
ঔরসে
কদ্রুর
গর্ভজাতা কন্যা। এঁরা স্বামী-স্ত্রী রূপে কিছুদিন একসাথে কাটান। পরে ঋষি জরৎকারু
তাঁর স্ত্রীকে ত্যাগ করে চলে যান। এঁদের একমাত্র সন্তানের নাম আস্তীক।
ঋষি জরৎকারু
ছিলেন উর্ধরেতা
ঋষি,
ব্রহ্মচারী,
মহাতপা পরিব্রাজক।
কথিত আছে,
তিনি শুধু বাতাস খেয়ে কঠোর তপস্যা ও ব্রতানুষ্ঠান করতেন।
এই
কঠোর তপস্যার ফলে তাঁর শরীর ক্ষীণ হয়েছিল বলে,
জরৎকারু নামপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি কখনো বিবাহ করবেন না। কিন্তু ঘটনাক্রমে,
জরুৎকারের বিবাহ পূর্ব-নির্ধারিত ছিল। এর সাথে বিশেষভাবে জড়িত ছিল
জনমেজয়ের সর্পসত্র যজ্ঞ।
পুরাকালে কশ্যপ
নামক ঋষি তাঁর দুই স্ত্রী
কদ্রু ও
বিনতার
উপর সন্তুষ্ট হয়ে, তাঁদের বর
দেওয়ার ইচ্ছা করেন।
কদ্রু
বলশালী সহস্র নাগপুত্র ও
বিনতা
কদ্রুপুত্র অপেক্ষা বলশালী এবং তেজস্বী দুটি পুত্র প্রার্থনা করলেন। কশ্যপ সেই বরই
মঞ্জুর করেন। যথাসময়ে
কশ্যপের
কদ্রু
এক সহস্র ও
বিনতা
দুটি ডিম প্রসব করলেন। পাঁচশ বৎসর পর
কদ্রুর
ডিম থেকে এক হাজার নাগ পুত্রদের জন্ম হলো। কিন্তু
বিনতার
ডিম থেকে কোন সন্তানের জন্ম হলো না বলে- তিনি একটি ডিম ভেঙে ফেললেন। এই ভাঙা ডিম
থেকে ঊর্ধ্ব-ভাগ সম্পূর্ণ ও নিম্নভাগ অসম্পূর্ণ হয়ে
অরুণের
জন্ম হয়। অসময়ে এই ডিম ভাঙার জন্য
অরুণ
তাঁর মাকে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, পাঁচশত বৎসর
কদ্রু'র
দাসী হয়ে থাকতে হবে।
অরুণ
আরো বলেন যে, যদি অসময়ে দ্বিতীয় ডিমটি না ভাঙা হয়, তবে উক্ত ডিম থেকে অপর যে
সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, সেই পুত্রই বিনতার দাসত্ব মোচন করবে।
অরুণের
বাক্যানুসারে অপর ডিমটি থেকে
গরুড়-এর
জন্ম হয়।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ষোড়শ অধ্যায়। অরুণ ও গরুড়ের জন্ম]
এরপর একদিন
উচ্চৈঃশ্রবা
নামক অশ্বের লেজের বর্ণ নিয়ে
কদ্রু'র
সাথে
বিনতার
তর্ক উপস্থিত হলে-
কদ্রু'
অশ্বের লেজ কালো ও বিনতা সাদা দাবি করেন। পরের দিন এই বিষয়টি মীমাংসার জন্য উভয়ই
শর্ত সাপেক্ষে রাজী হন। শর্তটি ছিল- এই তর্কে যিনি জয়ী হবেন, তাঁর অধীনে অপরজনকে
দাসী হয়ে থাকতে হবে। বাড়ি ফিরে
কদ্রু
তাঁর নাগপুত্রেদের বলেন যে, আগামীকাল যখন
উচ্চৈঃশ্রবার
লেজের রঙ পরীক্ষা করা হবে, তখন নাগরা যেন,
উচ্চৈঃশ্রবার
লেজে জড়িয়ে থাকে। যাতে
উচ্চৈঃশ্রবার
লেজের বর্ণ কালো দেখায়। মায়ের এই আদেশ যে সকল নাগ অস্বীকার করে,
কদ্রু তাদের অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, মাতৃআদেশে
লঙ্ঘনকারী নাগেরা পাণ্ডুবংশীয়
জনমেজয়ের সর্পসত্রে অগ্নিদগ্ধ হবে।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব।
বিংশ-ত্রয়োবিংশ অধ্যায়।]
মাতৃ-আজ্ঞালংঘনকারী নাগেরা
জনমেজয়ের
সর্পসত্রের ভয়ে ভীত ছিল। এসব নাগরা একদিন এক সভায় যখন এ বিষয় নিয়ে
আলোচনা করছিলেন, তখন সর্বকনিষ্ঠ নাগ
এলাপত্র এই বিপদ থেকে
উদ্ধারের উপায় জানান।
উল্লেখ্য
কদ্রুর অভিশাপের
সময় এলাপত্র তাঁর কোলে ছিলেন।
সেই কারণে- মায়ের কোল থেকেই এই অভিশাপের প্রতিকার সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী শুনেছিলেন।
এই বাণী ছিল-
জরৎকারুর
সন্তান আস্তীক মুনি সাপদের রক্ষা করবেন।
মায়ের অভিশাপ থেকে অন্যান্য ভাইদের রক্ষা জন্য যখন
অনন্তনাগ
উপায় খুঁজছিলেন,
তখন এলাপত্র অনন্তনাগকে বিষয়টি জানান।
এরপর অনন্ত
জরৎকারু
মুনিকে খুঁজে বের করেন এবং তাঁর সঙ্গে তাঁর নিজের বোনের বিবাহ দেন।
উল্লেখ্য অনন্তের এই বোনের নামও ছিল
জরৎকারু।
[সূত্র:
মহাভারত। আদিপর্ব। সপ্তদশ-অষ্টাদশ, অষ্টত্রিংশ অধ্যায়]
এদিকে
জরুৎকারের
ব্রহ্মচর্যব্রত গ্রহণ করে, তপস্যা করে জীবন অতিবাহিত করছিলেন।
একবার তিনি ভ্রমণে বের হয়ে- কিছু লোককে গাছের ডাল ধরে ঝুলে থাকতে দেখেন।
উল্লেখ্য এই লোকগুলো উপরের দিকে পা এবং নিচের দিকে মাথা রেখে ঝুলছিলেন।
জরৎকারু আশ্চর্য হয়ে তাঁদেরকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে, তাঁরা বলেন যে- জরৎকারু নামে
তাঁদের এক সন্তান বিবাহ ও সন্তানোৎপাদন না করায় তাঁরা বংশলোপের আশঙ্কায় এইভাবে
ঝুলছেন।
উল্লেখ্য এই ঝুলন্ত লোকগুলো ছিল- জরৎকারুর পূর্বপুরুষ।
এরপর জরৎকারু তাঁদের কাছে আত্মপরিচয় দিয়ে বলেন যে,
তিনি
কেবল পিতৃপুরুষদের মুক্তির জন্যই তিনি তাঁরই নামের কোন কন্যাকে বিবাহ করতে
প্রস্তুত আছেন।
এরপর বিবাহের
জন্য জরৎকারু নিকটস্থ বনে চলে যান।
এই বনে ঘুরতে ঘুরতে পরপর তিনবার উচ্চস্বরে বিবাহের জন্য কন্যাভিক্ষা করেন।
তখন
অনন্তনাগ
ওই ভিক্ষা প্রাথর্না শুনে তাঁর বোনকে (এই কন্যার নামও জরৎকারু) নিয়ে
এসে জরৎকারুকে গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন।
কন্যার নামের সঙ্গে তার নামের একত্ব লক্ষ্য করে জরৎকারু মুনি তাকে বিবাহ করতে
সম্মত হন।
কিন্তু বিবাহের শর্ত হিসাবে জরৎকারু বলেন যে,
তিনি স্ত্রীর ভরণপোষণ করবেন না এবং স্ত্রী অন্যায় কোন আচরণ করলে তিনি তাঁকে ত্যাগ
করবেন।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ত্রয়োদশ-পঞ্চদশ অধ্যায়]
বিবাহের কিছুদিন পরে জরৎকারু সন্তানসম্ভবা হন।
একদিন স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে জরৎকারু ঘুমিয়ে ছিলেন।
দীর্ঘ ঘুমে সন্ধ্যা অতিক্রান্ত হওয়ার উপক্রম হলে- সময় মত সন্ধ্যাবন্দনা করার জন্য
স্ত্রী জরৎকারুকে জাগিয়ে দেন।
জরৎকারু এই ব্যবহারে ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন যে,
তিনি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় সূর্যেরও অস্ত যাবার ক্ষমতা নেই।
এরপর তিনি এই অপরাধে স্ত্রীকে ত্যাগ করে চলে যান।
যাবার সময় বলে যান যে তার এক তেজস্বী পুত্র জন্মগ্রহণ করবে এবং এই পুত্র আস্তীক
নামে অভিহিত হবে।
ঋষির বাক্যানুসারে আস্তীক জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং বড় হয়ে
জনমেজয়ের চলমান সর্পসত্র যজ্ঞ
বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। সপ্তচত্বারিংশ অধ্যায়]