|
প্রাণিজগতের ইউমেটাজোয়া
উপরাজ্যের অন্তর্গত
প্যারাহোক্সোজোয়া
থাকের একটি পর্ব বিশেষ।
গ্রিক শব্দ Knide
অর্থ রোম বা কাঁটা এবং Aria
অর্থ সংযুক্ত থাকা। এ শব্দদুটির সমন্বয়ে নিডেরিয়া
(Cnidaria)
শব্দটি তৈরি হয়েছে। ১৮৮৮ সালে বিজ্ঞানী হাসচেক
(Hatschek)
প্রথম নিডেরিয়া (Cnidaria)
পর্বটির নামকরণ করেন।
এই পর্বের প্রাণীর দেহে
কিছু কোষ কলাতন্ত্রের
সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে এদের দেহে কলাতন্ত্রের সূত্রে স্নায়ুকলা গঠিত হয়েছে। তবে
এদের দেহের অধিকাংশ কোষই বিচ্ছিন্ন। তবে
এই কোষগুলো সুনির্দিষ্ট কাজ করে থাকে।
এদের ভ্রূণ দ্বিস্তর বিশিষ্ট। এই কারণে এদেরকে ডিপ্লোব্লাস্টিক
(Diploblastic) প্রাণী
হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদের দেহের বাহিরের স্তরকে এক্টোডার্ম
(Ectoderm) এবং ভেতরের স্তরকে এন্ডোডার্ম
(Endoderm)। উল্লেখ্য, পূর্ণাঙ্গ
নিডেরিয়াদের প্রাণীকুলও দ্বিত্বক বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
এদের দেহের ভেতরে প্রশস্ত গহ্বর থাকে। এই গহ্বরকে বলা হয় সিলেন্টেরন (Coelenteron)।
এদের দেহে একটি
মাত্র মুখছিদ্র রয়েছে। এদের পায়ু ছিদ্র দেখা যায় না।
এরা অরীয় প্রতিসম (Radial symmetry)। অর্থাৎ এদের দেহের কেন্দ্রীয় অক্ষের মধ্য
দিয়ে অতিক্রান্ত একটিমাত্র তল বরাবর ছেদ করে দুই বা ততোধিক বার দেহটিকে সমভাবে
ভাগ করা যায়।
এদের
বহিঃদেহত্বকে নিডোব্লাস্ট (Cnidoblast) নামক কোষ
থাকে। এই কোষ থেকে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয় এবং এই বিষ ধারণের জন্য নিমাটোসিস্ট
(Nematocyst) নামক
একটি থলি রয়েছে। শত্রুকে আক্রমণ বা শিকারকে কাবু করার জন্য এরা বিষাক্ত পদার্থ
প্রয়োগ করে। এই বিষ প্রয়োগের জন্য এদের দেহে থ্রেড টিউব
(Thread tube) নামক
চাবুকের মত নল রয়েছে।
অধিকাংশই নিডেরিয়া সামুদ্রিক। তবে এর কিছু প্রজাতি স্বাদুপানির বাস করে।
এরা একাকী বা দলবদ্ধভাবে বাস করে। এদের অনেক প্রজাতি নিশ্চল বা সচল অবস্থায় থাকতে
পারে। এদের নিশ্চল দশাকে বলা পলিপ
(Polyp)। এদের কোনো প্রজাতি মুক্তভাবে
সাঁতার কাটে। এদের এই দশাকে বলা হয় মেডুসা
(Medusa)।
কোনো কোনো প্রজাতির ভিতরে উভয় দশাই পরিলক্ষিত হয়। এদের
বহিঃকোষীয় ও অন্তঃকোষীয় উভয় প্রকার পরিপাক প্রক্রিয়া এদের দেহে দেখতে পাওয়া
যায়।
ক্রমবিবর্তনের ধারা
টোনিয়ান অধিযুগের (১০০-৭২
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
৮৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
ক্রাইয়োজেনিয়ান অধিযুগে শুরু হয়েছিল। এরই ভিতরে
চোয়ানোজোয়া
থাকের প্রাণিকুল বিভাজিত হয়ে উৎপন্ন হয়েছিল
চোয়ানোফ্লাগেল্লাটিয়া শ্রেণির অন্তর্গত প্রজাতিসমূহ এবং ৬৭ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে জীবরাজ্যে আবির্ভূত হয় এ্যানিমেলিয়া।
৮৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
ক্রায়োজেনিয়ান বরফযুগের
শুরু হয়েছিল।
ক্রাইয়োজেনিয়ান অধিযুগে (৭২-৬৩.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
এ্যাপোইকোজোয়া থাকের প্রাণিকুল বিভাজিত হয়ে উৎপন্ন হয়েছিল
চোয়ানোফ্লাগেল্লাটিয়া শ্রেণির অন্তর্গত প্রজাতিসমূহ এবং ৬৭ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে জীবরাজ্যে আবির্ভূত হয়
এ্যানিমেলিয়া।
ক্রাইয়োজেনিয়ান অধিযুগটি স্থায়ী
হয়েছিল ৬৩
কোটি ৫০ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে এবং
এডিয়াকারান অধিযুগ
(৬৩.৫-৫৪.১
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) অবধি বিদ্যমান ছিল। সেই তুষারাবৃত শীতল পৃথিবীর
সমুদ্রে জীবজগতে পরিবর্তনের নতুন ধারার সূচনা হয়। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এক কোষী
জীবজগতে বহুকোষী জীবের আবির্ভাব ঘটেছিল। এদের ভিতরে একটি শ্রেণি বহুকোষের সমন্বয়ে
আবির্ভূত হলেও এদের দেহে কলাতন্ত্রের বিকাশ ঘটেনি। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল দুটি
উপরাজ্যের প্রাণিকুল।
এই উপরাজ্য দুটি হলো-
প্যারাজোয়া
এবং
ইউমেটাজোয়া।
৬০.৫২ কোটি থেকে ৫৪ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইউমেটাজোয়া উপরাজ্য ৩টি ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই ভাগ টি হলো-
প্যারাহোক্সোজোয়া থাক: আবির্ভাব কাল ৬০.৫২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এদের দেহে অনেক সুগঠিত কলাতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল। আদিম প্যারাজোয়াদের দেহের কলাতন্ত্র ছিল আংশিক। এদের দেহের কিছু কিছু কোষ কলাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হলেও অধিকাংশ কোষ মুক্তভাবে দেহের বিভিন্ন কাজ করতো। এই থাক থেকেই পরবর্তী সময় মানুষসহ অন্যান্য উন্নত প্রজাতিসমূহের আবির্ভাব হয়েছিল।
৬০.৫-৫৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে প্যারাহোক্সোজোয়া থাকের প্রজাতিগুলো ৩টি পর্বে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই পর্বগুলো হলো-নিডারিয়া পর্ব, বিলাটেরিয়া থাক ও প্লাকোজোয়া পর্ব।
নিডারিয়া পর্ব: আবির্ভাবকাল ৫৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই পর্ব থেকে পর্বর্তী সময়ে আবির্ভুত হয়েছিল তিনটি ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এগুলো হলো-
এ্যান্থোজোয়া: আবির্ভাবকাল ৫৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
মেডুসোজোয়া: আবির্ভাবকাল ৫৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
মিক্সোজোয়া
সূত্র :
১. বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। প্রথম খণ্ড।
২.
http://en.wikipedia.org/wiki/Eumetazoa
৩.
http://www.earthlife.net/inverts/ctenophora.html