বিশ্বলোকের গল্প
প্রিক্যাম্বরিয়ান পর্ব
তৃতীয় অধ্যায়। তৃতীয় ভাগ। তৃতীয় অংশ
এডিয়াকারান অধিযুগ
(৬৩.৫ থেকে ৫৪.১ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)

নেওপ্রোটারোজোয়িক যুগের তৃতীয় এবং শেষ অধিযুগ। ১৯৫২ খ্রিষ্টব্দের শুরুর দিকে রুশ বিজ্ঞানী বরিশ সোকোলোভ এই অধিযুগের নামকরণ করেন। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ভাষায় Yata Takarra- এর অর্থ হলো শক্ত বা পাথুরে ভূমি। এই শব্দটি থেকে গৃহীত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার Ediacara পর্বতমালা। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে এই পর্বতমালার কাছে রিগ স্প্রিগ প্রথম পেয়েছিলেন Dickinsonia costata নামক প্রজাতির জীবাশ্ম। এখানে প্রাপ্ত অন্যান্য জীবাশ্মের বিশেষ ধরনের প্রজাতিসমূহের নামকরণ করা হয়েছিল  'Ediacaran Biota'। এই সকল কারণে এই অধিযুগের নামকরণ করা হয়েছে Ediacaran period

এই অধিযুগে প্যান্নোশিয়া মহামহদেশের উদ্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে জীবজগতে উদ্ভব হয়েছিল নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী।

জড়জগতের ক্রমবিবর্তনের ধারা

জীবজগতের ক্রমবিবর্তনের ধারা
ক্রায়োজেনিয়ান বরফযুগটি
 ৬৩.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ অবধি বিদ্যমান ছিল। ক্রায়োজেনিয়ান বরফযুগের অন্তর্গত মারিনোয়ান আন্ত-বরফযুগের শেষে এই অধিযুগে পৃথিবীর তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটেছিল দ্রুত। সেই তুষারাবৃত শীতল পৃথিবীর সমুদ্রে জীবজগতে পরিবর্তনের নতুন ধারার সূচনা হয়। এর ফলে নানা প্রজাতির প্রাণীর যেমন বিলুপ্তি ঘটেছিল, তেমনি বিবর্তনের ধারায় জীবজগতে নতুন প্রজাতির আবির্ভাব ঘটেছিল। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এক কোষী জীবজগতের কিছু প্রজাতো বহুকোষী জীবে পরিণত হয়েছিল। তবে এদের ভিতরে একটি শ্রেণি বহুকোষের সমন্বয়ে আবির্ভূত হলেও এদের দেহে কলাতন্ত্রের বিকাশ ঘটেনি। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল দুটি উপরাজ্যের প্রাণিকুল। এই উপরাজ্য দুটি হলো-  পরিফেরা এবং ইউমেটাজোয়া

এই সময়ের ভিতরে জলজ উদ্ভিদের কিছু প্রজাতি স্থলজ হয়ে উঠেছিল। এর মধ্য দিয়ে ৫৪.১ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ধীরে ধীরে স্থলজ উদ্ভিদের বিকাশ ঘটেছিল। বিশেষ করে এই বির্তনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল সবুজ শৈবাল। এই সময় সাগর জলে সবুজ উদ্ভিদগুলো বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধি করে চলেছিল।


পরিফেরা পর্বের প্রাণীর উদ্ভব ও বিকাশ
৬৩.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
মূলত অস্তিত্ব রক্ষার সূত্রে এক কোষী জীবজগতে বহুকোষী জীবের আবির্ভাব ঘটেছিল। কিন্তু এদের ভিতরে একটি শ্রেণি প্রজাতির দেহে কলাতন্ত্রের বিকাশ ঘটলো না। এই শ্রেণির জীবকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন পরিফেরা বা প্যারাজোয়া। এদের দেহাভ্যন্তরে স্পঞ্জোসিল নামক প্রশস্ত গহ্বর এবং গহ্ববরের বাইরের দিকে অসক্যুলাম নামক বড় আকারের ছিদ্র তৈরি হয়েছিল। দেহপ্রাচীরে সৃষ্টি হয়েছিল অস্টিয়া নামক অসংখ্য ক্ষুদ্রাকার ছিদ্র । এদের দেহ আবৃত হয়েছিল ফ্লাজেলা বিশিষ্ট কোষ কোয়ানোসাইট দিয়ে। এই ফ্লাজেলাকে এরা অবিরত আন্দোলিত করতে পারতো। এদের দেহত্বক এক বা একাধিক প্রকোষ্ঠ দিয়ে গঠিত হয়েছিল এবং দেহপ্রাচীর হয়েছিল দ্বিস্তর বিশিষ্ট। বিজ্ঞানীরা এর বাহিরের স্তরের নাম পিনাকোডার্ম এবং ভেতরের স্তর নাম কোয়ানোডার্ম দিয়েছেন। উভর স্তরের মাঝে যুক্ত হয়েছিল কোষ-বিহীন মেসেনকাইম স্তর। এদের দেহাভ্যন্তরে সিলিকন বা ক্যালিসিয়ামের এক ধরণের তন্তুও সৃষ্টি হয়েছিল থাকে। গঠন প্রকৃতি অনুসারে এই তন্তুকে বলা হয় স্পিকিউল বা স্পঞ্জিন। এই তন্তু এই পর্বের প্রাণিকুলের কঙ্কালের ভূমিকা নিয়েছিল। এর ফলে এদের সুনির্দিষ্ট আকার পেয়েছিল। বর্তমানে প্রজাতিভেদের এদের আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন রকম দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ পরিফেরা পর্বের প্রাণী হয়ে থাকে সিলিণ্ডারের মতো নলাকার বা কুশনের মতো। এরা হতে পারে প্রতিসম,  অপ্রতিসম, অরিয় প্রতিসম ধরণের। পরিফেরার পর্বের আদর্শ প্রজাতি হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে Amphimedon queenslandica-কে। এর সাধারণ নাম স্পঞ্জ।

ইউমেটাজোয়া উপরাজ্যের উদ্ভব ও বিকাশ
এই অধিযুগে আবির্ভূত উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলো ভিতরে ছিল
নিডারিয়া পর্বের নানা ধরনের প্রবাল, জেলিফিস, হাইড্রা,
বিলাটেরিয়া থাক এবং নেফ্রোজোয়া থাকের আদিম প্রজাতিসমূহ। এছাড়া আবির্ভূত হয়েছিল প্লাকোজোয়া, ট্রাইলোবোজোয়া, এবং টিনোফোরা পর্বের আদিম প্রজাতিসমূহ।

মূলত ৬৩.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে যে সকল বহুকোষী প্রাণীর দেহে কলাতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছিল, বিজ্ঞানীরা তাদের নাম দিয়েছেন ইউমেটাজোয়া ৬০.৫২ কোটি থেকে ৫৪ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইউমেটাজোয়া উপরাজ্য ৩টি ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই ভাগ টি হলো-প্যারাহোক্সোজোয়া, ট্রাইলোবোজোয়াটিনোফোরা

৫৪ কোটি ১০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই অধিযুগের সমাপ্তি ঘটে। একই সাথে সমাপ্তি ঘটে ক্যাম্ব্রীয়ান-পূর্ব মহাকাল। এরপর শুরু হয় ক্যাম্ব্রিয়ান মহাকাল


সূত্র :
http://essayweb.net/geology/timeline/mesoproterozoic.shtml
http://en.wikipedia.org/wiki/Neoproterozoic

http://eol.org/pages/2908256/overview