কালকূট
পদ:
বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{|
বিষ
|
হিন্দু
পৌরাণিক সত্তা
|
ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা |
পৌরাণিক সত্তা |
কাল্পনিক সত্তা |
কল্পনা |
সৃজনশীলতা |
কর্মক্ষমতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু পৌরাণিক মতে, তীব্রতর বিষ বিশেষ। সমুদ্রমন্থনের শেষ দিকে এই বিষ সমুদ্র থেকে
উৎপন্ন হয়েছিল।
দেবতারা অমর হওয়ার জন্য, অমৃত নামক পানীয়ের কথা জানতেন। এই অমৃত সমুদ্রমন্থনের
মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। তাই
একবার
সুমেরু দেবতাদের
অমৃতলাভের জন্য মন্ত্রণাসভায় বসেন। বিষয়টি অবগত
হয়ে
বিষ্ণু
ব্রহ্মার
কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে সমুদ্রমন্থনের বিষয়টি অনুমোদিত হয়।
দেবতারা এই
অনুমতি লাভের পর, সমুদ্রমন্থনের জন্য
মন্দরপর্বতকে
মন্থন দণ্ড হিসেবে নির্বাচন করেন।
কিন্তু সকল দেবতা মিলিত হয়ে এই পর্বত উত্তোলন করতে ব্যর্থ হন। পরে এঁরা
বিষ্ণু
এবং
ব্রহ্মাকে তাঁদের ব্যর্থতার কথা জানান। উভয় দেবতা এই পর্বত
উত্তোলনে
অনন্তনাগের
শরণাপন্ন হতে বলেন। পরে দেবতাদের অনুরোধে
অনন্তনাগ
এই পর্বত
উত্তোলন করেন।
এরপর
অনন্তনাগ
এই
মন্দরপর্বতকে
বহন করে সমুদ্রতীরে নিয়ে যান। এরা সমবেত দেবতা এবং
অনন্তনাগ সমুদ্রকে জানান,
যে তাঁরা অমৃতলাভের জন্য তাঁকে (সমুদ্রকে) মন্থন করবেন। উত্তরে সমুদ্র জানান যে, এই
তিনি মন্থনের কারণে তাঁকে অশেষ দুঃখভোগ করতে হবে। তাই এই মন্থনের ফলে যে ফল লাভ
হবে, তার অংশবিশেষ তাঁকে দিতে হবে। এরপর দেবতারা কূর্মরাজকে (কচ্ছপরাজ)
মন্দরপর্বতকে পিঠে ধারণ করতে বলেন। এই আদেশ অনুসারে কূর্মরাজ সমুদ্রের ভিতরে
মন্দরপর্বতকে পিঠে ধারণ করেন। এই মন্থনে
অনন্তনাগ রজ্জু হিসেবে
মন্দরপর্বতকে বেষ্টন করেন।
সমুদ্রমন্থনের এই পর্যায়ে অমৃত লাভের আশায় দানবরা অংশগ্রহণ করেন। পরে দানবরা
অনন্তনাগের মুখের দিক ধরে
এবং দেবতার এর লেজ ধরে মন্থন শুরু করেন। এই সময়
অনন্তনাগের মুখ থেকে
অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো নিঃশ্বাস বায়ু বের হয় এবং বাস্পরাশিতে আকাশ আচ্ছন্ন করে। পরে
এই বাস্পরাশি থেকে
মেঘমালা সৃষ্টি হয় এবং এক সময় প্রবল বৃষ্টিতে দানব ও দেবতাদের শ্রান্তি
দূরীকরণ করে। এই মন্থনের কারণে সাগরে বহু প্রাণীর মৃত্যু হয়।
মন্দরপর্বতের লতা, বৃক্ষরাজি, প্রাণিকূল ধ্বংস হয়ে যায়। এই সময়
মন্দরের
গাছপালায়
দাবানলের সৃষ্টি হয়। কিন্তু
ইন্দ্র বৃষ্টি বর্ষণের দ্বারা সে আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
এতকিছুর সংমিশ্রণে অমৃততুল্য নির্যাস সাগরজলে মিশে যেতে থাকে। এর প্রভাবে দেবতারা
অমরত্ব লাভ করেন। এই নির্যাসের প্রভাবেই সমুদ্রজল প্রথমে ক্ষীরে পরিণত হয় এবং পরে এই ক্ষীর
ঘৃতে পরিণত হয়।
কিন্তু এত কিছুর পরেও দেব-দানবেরা অমৃতের সন্ধান পেলেন না, বরং ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। দেবতারা পুনরায়
ব্রহ্মার
কাছে এর প্রতিকারের জন্য সকাতর প্রার্থনা করেন। তখন
ব্রহ্মা
বিষ্ণুকে বলেন যে,
বিষ্ণু যদি দেবতাদের বলদান
করেন, তাহলেই দেবতাদের অমৃতলাভ করা সম্ভব হবে।
এরপর
বিষ্ণু বলপ্রদান করলে, দেবতারা পুনরায় সমুদ্রমন্থন শুরু করেন।
এই পর্যায়ে সমুদ্র থেকে
চন্দ্র সৃষ্টি হলো। এর ঘৃত থেকে লক্ষ্মীদেবী এবং সুরাদেবী
উত্থিতা হলেন। এরপর উৎপন্ন হলো
উচ্চৈঃশ্রবা
নামক অশ্ব। এরপর
উৎপন্ন কৌস্তভমণি
বিষ্ণুর বক্ষস্থলে স্থাপিত হয়।
লক্ষ্মী, সুরাদেবী,
চন্দ্র ও
উচ্চৈঃশ্রবা
আকাশমার্গ অবলম্বন করে দেবতাদের পক্ষে চলে গেলেন। এরপর
ধন্বন্তরি
অমৃতপাত্র হাতে
নিয়ে আবির্ভূত হন। এই সময় দানবরা 'এই অমৃত আমার' বলে হট্টগোল শুরু করে।
এরপর উদ্ভব হয়
ঐরাবত
নামক হাতি।
ইন্দ্র এই হাতির অধিকার গ্রহণ
করেন। এরপরেও দেব-দানববৃন্দ সমুদ্র মন্থন করতেই থাকলেন। এর ফলে তীব্র কালকূট
নামক বিষ উৎপন্ন হয়। এই বিষের প্রভাবে ত্রিলোকের সকল অধিবাসী মূর্চ্ছিত হয়ে
পড়ে। এই সময় জগৎ রক্ষার জন্য
মহাদেব সমস্ত কালকূট পান করে জগৎকে রক্ষা করেন।
এর ফলে
মহাদেবের
কণ্ঠদেশ নীলবর্ণ ধারণ করেছিল। এই কারণে
মহাদেবের
অপর নাম 'নীলকণ্ঠ'। এর ফলে
মহাদেবের
কণ্ঠদেশ নীলবর্ণ ধারণ করেছিল। এই কারণে
মহাদেবের
অপর নাম 'নীলকণ্ঠ'।
[সূত্র: মহাভারত। আদি পর্ব।
অষ্টাদশ-ঊনবিংশ অধ্যায়]