অংশুমান
বানান বিশ্লেষণ:
অ+ং+শ্+উ+ম্+আ+ন্+অ
উচ্চারণ :
oŋ.ʃu.man
(ওঙ্.শু.মান্)।
শব্দ-উৎস:
সংস্কৃত
অংশুমান >বাংলা
অংশুমান।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:
অংশু
{√অশ্
(ব্যাপ্ত হওয়া)
+উ
(কু),
কর্তৃবাচ্য}
+মৎ
(মতুপ)।
পদ:
১. বিশেষণ ।
অর্থ: ১.১. অংশু (কিরণ) ধারণ করে বা যুক্ত আছে এমন।
সমার্থক শব্দাবলি: অংশুধর, অংশুময়, কিরণময়। [সমার্থক শব্দাবলি দেখুন : কিরণময়]
বিপরীতার্থক শব্দ: অংশুমতী (স্ত্রীলিঙ্গার্থে)
ইংরেজি: lumininous, radiant।
অর্থ: ১.১. অংশু (আঁশ) ধারণ করে বা যুক্ত আছে এমন।
সমার্থক শব্দাবলি: অংশুধর, অংশুময়, কিরণময়। [সমার্থক শব্দাবলি দেখুন : কিরণময়]বিপরীতার্থক শব্দ: অংশুমতী (স্ত্রীলিঙ্গার্থে)
ইংরেজি: fibrous।
২. বিশেষ্য
২.১. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| নক্ষত্র | মহাকাশীয় বস্তু | প্রাকৃতিক লক্ষ্যবস্তু | এককঅংশ | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}অর্থ: যা অংশুময় এই অর্থে সূর্যের অপর নাম– অংশুমান।
[দেখুন : সূর্য [জ্যোতির্বিজ্ঞান]
সমার্থক শব্দাবলি: বিভিন্ন রূপকার্থে এবং হিন্দু পৌরাণিক কাহিনির সূত্রে সূর্যদেবতা এবং তার সমার্থক শব্দাবলিও অনেক সময় সূর্য নামক নক্ষত্রকেই বুঝানো হয়। এই বিচারে সূর্যের সমার্থক শব্দের তালিকা দীর্ঘ। সূর্যের যে সকল অর্থ বাংলাভাষায় অল্প-বিস্তর ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো।
অংশু, অংশুধর, অংশুপতি, অংশুবাণ, অংশুভর্তা, অংশুমৎ, অংশুমান, অংশুমালী, অংশুহস্ত, অঞ্জিষ্ঠ, অম্বরীষ, অরুণ, অর্ক, অর্চিষ্মান, অর্যমা, অশীতকর, অশীতমরীচি, অহঃপতি, অহকান্ত, অহপতি, অহর্পতি, অহর্মণি, অহস্কর, অহিমকর, অহিমকিরণ, অহিমতেজা, অহিমদীধিতি, অহিমময়ূখ, অহিমরশ্মি, অহিমাংশু, আদিত্য, আফতাব, ইতু, উষ্ণকর, উষ্ণকিরণ, উষ্ণদীধিত, উষ্ণরশ্মি, উষ্ণাংশু, ঊষাপতি, কমলিনীকান্ত, কমলিনীনায়ক, কাশ্যপেয়, কিরণমালী, খমণি, খরকর, খরাংশু, গভস্তিপাণি, গভস্তিমান, গভস্তিহস্ত, গ্রহপতি, গ্রহরাজ, গ্রহাধীশ, চিত্রভানু, চিত্ররথ, জগচ্চক্ষু, জ্যোতিষ্মান, তপন, তমোঘ্ন, তমোহর, তমোরি, তমোহা, তাপন, তিমিরনাশক, তিমিররিপু, তিমিরারি, ত্বিষাম্পতি, দিনকর, দিননাথ, দিনপতি, দিনমণি, দিনেশ, দিবাকর, দিবানাথ, দিবাবসু, দিবামণি, দ্বাদশাত্মা, দ্যুমণি, ধামকেশী, ধামনিধি, ধ্বান্তারাতি, ধ্বান্তারি, নভশ্চক্ষু, পদ্মপাণি, পূষা, প্রদ্যোতন, প্রভাকর, বসু, বিকর্তন, বিবস্বান, বিভাকর, বিভাবসু, বিরোচন, বীতিহোত্র, ভানু, ভানুমান, ভাস্কর, ভাস্বান, ময়ূখমালী, মরীচিমালী, মার্তণ্ড, মিত্র, মিহির, রবি, রসাধার, লোলার্ক, শূর, সপ্তসপ্তি, সপ্তাশ্ব, সপ্তাশ্ববাহন, সবিতা, সহস্রকর, সহস্রকিরণ, সহস্ররশ্মি, সহস্রাংশু, সুতপা, সুযাত্র, সুর, সুরজ, সুরয, সুরুজ, সুরোত্তম, সূর্য, হরিতাশ্ব, হরিদশ্ব, হিরণ্যরেতাঃ।
ইংরেজি: sun।
২.২. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে– ইনি ছিলেন সূর্যবংশীয় রাজা অসমঞ্জ-এর পুত্র ও সগর রাজার পৌত্র। সগর-এর অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া দেবরাজ ইন্দ্র অপহরণ করে- পাতালে ধ্যানমগ্ন কপিল মুনির আশ্রমে রেখে যান। সগরের ৬০ হাজার পুত্র ওই অপহৃত ঘোড়ার সন্ধান করতে করতে― কপিল মুনির আশ্রমে আসেন। সেখানে ওই ঘোড়াকে দেখতে পেয়ে সগরের পুত্ররা ধ্যানমগ্ন কপিল মুনিকে ঘোড়াচোর মনে করে তাঁকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করেন। ফলে ক্ষুব্ধ কপিল মুনি যোগবলে সগর-পুত্রদের ভস্মীভূত করেন। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ার পরও সগর-পুত্ররা ফিরে না এলে, সগর তাঁর পৌত্র অংশুমানকে অনুসন্ধানে পাঠান। অংশুমান কপিল মুনির আশ্রমে এসে, স্তব করে মুনিকে সন্তুষ্ট করেন এবং যজ্ঞের ঘোড়াকে নিয়ে আসেন। এই সময় ইনি সগর-এর ভস্মীভূত পুত্রদের উদ্ধারের উপায় মুনির কাছ থেকে জেনে নেন। উপায়টি হলো― স্বর্গের গঙ্গা নদীকে এনে তার জল ওই পুত্রদের ভস্ম স্পর্শ করালে, পুত্ররা উদ্ধার পাবে। সগর-এর মৃত্যুর পর ইনি গঙ্গাকে আনার জন্য তপস্যা করেন। কিন্তু সাফল্য লাভ করতে পারেন নি। এরপর তিনি কিছুদিন রাজত্ব করার পর, তাঁর পুত্র দিলীপের রাজ্যভার অর্পণ করে তপস্যার জন্য যান। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য দিলীপের পুত্র ভগীরথ এই কাজ সম্পন্ন করেছিলেন।
সূত্র :