১.
আন্তর্জাতিক ধ্বনিলিপি : = e
ইউনিকোড: u+09CF


বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| বর্ণ | বর্ণচিহ্ন | লিখিত প্রতীক | প্রতীক | সঙ্কেতচিহ্ন | যোগাযোগ | বিমূর্তন | বিমূর্ত সত্ত | সত্তা |}

লিপি পরিচিতি
অন্যান্য বাংলা লিপির মতই
ব্রাহ্মীলিপি থেকে ঐ-বর্ণটি উদ্ভূত হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে এর আকার ছিল ত্রিভুজের মতো খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে ব্রাহ্মীলিপিতে এই বর্ণটি ক্রমে ক্রমে ইংরেজি ‘ও’ এবং ‘ডি’ অক্ষরের মতো হয়ে গিয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে এর কিরূপ পরিবর্তন ঘটেছিল, তার নির্দশন পাওয়া যায় না নিচের ছকে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় ও দ্বিতীয় শতাব্দীর বর্ণের নমুনা দেওয়া হলো


 

পরবর্তী কুষাণলিপিতে ব্রাহ্মীলিপির ত্রিভূজরূপটি একেবারে বিলোপ হয় নি। গুপ্তলিপিতে এই ত্রিভুজরূপটির নানা পরিবর্তন ঘটেছে লিপিকারদের হাতে। নিচে এই লিপির ক্রমবিবর্তনের চিত্র দেখানো হলো।

 

খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দী থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত কুটিললিপি'র বিবিধ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় আমাদের আজকের এ-এর চেহারা পাওয়া গেছে পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে নিচের ছকে খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দী থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত এ-এর ক্রমবিবর্তনের রূপটি দেখানো হলো

 

 


উচ্চারণ পরিচিতি []
স্বরধ্বনি, মৌলিক, সংবৃত-মধ্য, সম্মুখ, অবর্তুলাকার।
এই ধ্বনিটির ক্ষেত্রে জিহ্বা অগ্রতালু বরাবর উঠে অর্ধ-সংবৃত অঞ্চলে প্রবেশ করবে এবং তালু ও জিহ্বার মধ্যবর্তী অঞ্চলের স্থানকে অর্ধ-সঙ্কুচিত করবে এবং ঠোঁট প্রসারিত হবে এর বিকৃতরূপ হলো- এ্যা []

 

বাংলা ধ্বনির বিচারে এ্যা ধ্বনিটি মৌলিক স্বরধ্বনি হলেও, বাংলা বর্ণমালায় এর জন্য কোন পৃথক চিহ্ন নেইএই কারণে এই ধ্বনিটি লিখিত আকারে প্রকাশের জন্য বিভিন্ন লেখক ধ্বনিলিপি তৈরি করে নিয়েছেনএর ভিতর দুটি রূপ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকেএই রূপ দুটি হলো- অ্যা এবং এ্যা বাংলা ভাষায় এ বা একার কোথায় অর্ধ-সংবৃত বা অর্ধ-বিবৃত হবে, তার নিয়ম নির্ণয় করাটা বেশ দুরূহ তারপরেও যেটুকু নিয়মের ভিতর ফেলা যায়, তা নিচে তুলে ধরা হলো

১. তৎসম শব্দের আদ্য এ বা এ বা এ-কার সাধারণত অর্ধ-সংবৃত হবে। যেমন
কেয়ূর, চেতনা, তেজস্বী, বেণী, মেদিনী, হেমন্ত ইত্যাদি।

. শব্দের আদিতে যদি এ বা এ-কার থাকে এবং পরের বর্ণগুলোতে ই, ই-কার, , ঈ-কার, , উ-কার, , ঊ-কার, , এ-কার, , ও-কার থাকে, তা হলে আদ্য এ বা এ-কার অর্ধ-সংবৃত হবে
 যেমন

 ই=এই, একি,  দেখি,
ঈ=একীকৃত, দেশী
উ=একুশ, বেগুন
 
ঊ=
এরূপ, কেয়ূর
এ=এলে, কেটেছে
[ব্যতিক্রম : একের (এ্যাকের্)]
ও=খেও, এসো, যেয়ো
[ব্যতিক্রম : দেওর দ্যাওর, কেনো]

যেন শব্দের শেষ ধ্বনি ওকারান্ত। এই উচ্চারণটি যেনো বা য্যানো হতে পারে।

৩. শব্দের আদিতে যদি এ বা এ-কার থাকে এবং উক্ত শব্দটি যদি একাক্ষরধর্মী সর্বনাম হয়, তবে তার আদ্য এ বা এ-কার অর্ধ-সংবৃত হবে। যেমন- এ, কে, যে, সে ইত্যাদি

. পরের বর্ণটি য় থাকলে এ বা এ্যা হয়। দেখা শেষের য়-এর উচ্চারণ যদি ওকারান্ত হয়, তাহলে এ ধ্বনি অর্ধ-সংবৃত হয়ে থাকে। যেমন-
শ্রেয় (স্রেয়ো), প্রদেয়।

কিন্তু য় রুদ্ধ হলে, এ ধ্বনি এ্যা হয়। যেমন-
নেয় (ন্যায়), দেয় (দ্যায়)।

৫. পরের বর্ণটি র, শ, স, হ থাকলে এ হয়।
 যেমন-
র=এর (এর), ঘের (ঘের্)
শ=কেশ, বেশ, শেষ, এস (এসো),
হ= কেহ (কেহো), মেহ (মেহো). দেহ (দেহো)

৬. পরের বর্ণটি ল থাকলে এ হয়। অবশ্য আঞ্চলিক উচ্চারণে এ্যা হতে দেখা যায়। যেমন-
তেল, বেল, খেল। ফেল (পরীক্ষায় ফেল)। কিন্তু ত্যাগ বা বিসর্জন অর্থে ফেল উচ্চারিত হয় ফ্যাল। হাতের লাঠি ফেল। কিন্তু এই ফেল শব্দের শেষের ল, এ-কারান্ত হলে আদ্য বর্ণে এ-কার থাকে। যেমন- হাতের লাঠি ফেলে দে।

৭. ই-কার ধাতু কিম্বা প্রাতিপদিকের সাথে আ-কার থাকলে, আদ্য এ বা এ-কার অর্ধ-সংবৃত হবে। যেমন-
কেনা =কিন্ (ক্রয় করা)+আ=কিনা>কেনা।
এরূপ: চেনা, দেনা।

৯. শব্দের আদিতে যদি এ বা এ-কার থাকে এবং এর পরে ই-কার বিহীন ং, ঙ, ক্ থাকলে, আদ্য এ বা এ-কার অর্ধ-বিবৃত হয়। কিন্তু ই-কার থাকলে আদ্য এ বা এ-কার অর্ধ-সংবৃত হবে। যেমন-
বেঙ (ব্যাঙ), বেঙি (বেঙি)
বেঙ্গমা (ব্যাঙ্গোমা) বেঙ্গমি (বেঙ্গোমি)

৮.  একাক্ষর শব্দের আদিতে যদি এ বা এ-কার থাকে এবং এর পরে যদি আ-কার থাকে, তবে, আদ্য এ বা এ-কার অর্ধ-বিবৃত হবে। যেমন-
খেলা (খেল্ +আ)=খ্যালা
তেলা (তেল্ + আ) =ত্যালা
এরূপ: একা, দেখা, ঠেকা, ফেনা, নেড়া।