মহাকর্ষ
বানান বিশ্লেষণ: ম্+অ+হ্+আ+ক্+অ+র্+ষ্+অ
উচ্চারণ:
[ম.হা.কর্শ্.শো] [.ɦa.kɔrʃ.ʃo]
শব্দ-উৎস:

পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা  { | আকর্ষণ বল | বল | প্রাকৃতিক প্রপঞ্চ  |প্রপঞ্চ |  দৈহিক প্রক্রিয়া | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}
অর্থ: মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু যে বলের দ্বারা পরস্পরকে আকর্ষণ করে, তাকে মহাকর্ষীয় বল বা মহাকর্ষ বলা হয়।
ইংরেজি:
gravity, gravitation, gravitational attraction, gravitational force

ব্যাখ্যা: প্রকৃতিতে বিরাজমান চারটি মৌলিক বলের ভিতরে মহাকর্ষয়ী বল একটি। অতিপারমণবিক স্তরে এই বল অত্যন্ত দুর্বল থাকে। কারণ, অতিপারমাণবিক স্তরে কণাগুলোর ভর অত্যন্ত অল্প থাকায়, এই বল তীব্রতা উপলব্ধি করা যায় না। কিন্তু গ্রহ ও নক্ষত্রের ক্ষেত্রে এই অত্যন্ত শক্তিশালী বল হিসেবে অনুভব করা যায়। এই আকর্ষণের ঘটনা ঘটে বস্তুরে ভরের কারণে। মহাকাশের সকল গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি এমন কি আলোর মতো শক্তিও এই আকর্ষণ এড়িয়ে যেতে পারে না। পৃথিবীর উপরিভাগের অধিকাংশ বস্তু পৃথিবীর মহাকর্ষীয় বলের দ্বারা পৃথিবীতে আটকে থাকে। পৃথিবীর এই আকর্ষণ ক্ষমতাকে মাধ্যাকর্ষণ (gravity) বলা হয়। যে শক্তির দ্বারা পৃথিবী বস্তুকে পৃথিবীর সাথে আটকে রাখে, সেই বলের সাথে বস্তুর ভরের গুণফল হলো বস্তুর ওজন। বস্তুর ভরের পরিবর্তন না হলেও গ্রহে গ্রহে ওজনের পরিবর্তন ঘটে। কারণ সকল গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ একই মানের হয় না।

১৭শ শতাব্দীতে গ্যালিলিও গ্যালিলাইই পিসার হেলান মন্দির থেকে পালক ও স্বর্ণমূদ্রা নিক্ষেপের দ্বারা প্রমাণ করেন যে, বাধার সৃষ্টি না হলে, ভারি ও হাল্কা বস্তু একই সময়ে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। গ্যালিলিওর পরে, ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন তাঁর  "Philosophia Naturalis Principia Mathmatica "মহাকর্ষীয় বলের সূত্র প্রকাশ করেন। এই সূত্রে বলা হয়-  

মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে এবং এ আকর্ষণ বলের মান বস্তুকণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক ও এদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক এবং এ আকর্ষণ তাদের কেন্দ্র সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে ৷"

এ সূত্রানুসারে যদি দুটি বস্তুর ভর যথাক্রমে m1m2 এবং মধ্যবর্তী দূরত্ব d হয় তবে, বলের মান হবে
               
         এখানে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক হলো
G

স্তুর ভরের মৌলিক মিথস্ক্রিয়ায় এই বলের সৃষ্টি হয়। আকর্ষণ ক্ষমতার বিচারে চারটি বলের ভিতরে এটি সবচেয়ে দুর্বল। বিগব্যাং-এর ১০-৪৩ সেকেন্ড সময়ের ভিতরে চারটি প্রাকৃতিক বলের সমন্বয় ঘটেছিল এই বলগুলো হলো সবল নিউক্লিয়ার বল, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল  বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বল ও মহাকর্ষীয় বল সবগুলো মিলে একটি অতি বৃহৎ বলের সৃষ্টি করেছিল। ১০-৪৩ থেকে ১০- সেকেণ্ডের ভিতরে সবল নিউক্লিয়ার বল, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল এবং বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বল মিলিত হয়ে ইলেক্ট্রো-নিউক্লিয়ার বল সৃষ্টি করে। এই সময় মহাকর্ষীয় বল পৃথক হয়ে গিয়েছিল।

প্রকৃতিতে মৌলিক কণাগুলো বস্তুকণা এবং বলবাহী কণাতে ভাগ করা যায়। এই বিচারে মহাকর্ষ বহন করার জন্য একটি থাকা কণা থাকা আবশ্যক। যেমন
বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বলের বাহক ফোটন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই জাতীয় কোনো কণার সন্ধান পান নি। বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষের বাহক হিসেবে গ্রাভিটন নামক কণা কল্পনা করেছেন।