প্রাণিজগতের একটি আদিম মেরুদণ্ডী প্রাণীর অন্তর্গত একটি থাকের নাম। ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে এই থাকের নামকরণ করেছিলেন
বিজ্ঞানী ইংরেজ বিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়েন।
ক্রমবিবর্তনের ধারা
জীবজগতের ক্রমবিবর্তনের ধারায় ৩৫ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
টেট্রাপোডা থাকের প্রজাতিসমূহের আবির্ভাব ঘটেছিল।
উল্লেখ্য. প্রায়
৪০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে মহা-মহাদেশীয় উপকুলের কোনো কোনো অঞ্চলে পানি
কমে গিয়ে অগভীর জলভূমিতে পরিণত হয়েছিল। একই সাথে তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে
ভার্টিব্রাটা
উপপর্বের কিছু প্রাণী এই সব অগভীর জলভূমিতে বসবাসে অভ্যস্থ হয়ে
উঠেছিল। কালক্রমে এরা বড় বড় জলাশয়
ছেড়ে ছোট ছোট হ্রদ জাতীয় জলাশয়ে বসবাস শুরু করে।
৩৯ কোটি ৭০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
অগভীর জলের
ভার্টিব্রাটা
উপপর্বের
প্রজাতিগুলো তাদের পাখনা প্যাডেলের
মতো ব্যবহার করে পানিতে সাঁতার কাটতো। এর ফলে পাখনাগুলো
শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এরা
দ্রুত চলাচলের জন্য অগভীর জলাভূমির তলদেশের মাটিতে এই মজবুত পাখনা দিয়ে আঘাত
করতো। এর ফলে এদের চলাচলের জন্য পাখনা পায়ের মতো অঙ্গে পরিণত হয়েছিল।
৩৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে ফলে এই
প্রজাতিগুলো চতুষ্পদী প্রাণীতে পরিণত হয়েছিল। এই জাতীয় প্রাণিকুলের সাধারণ নাম
হলো-
টেট্রাপোডা।
কালক্রমে এরা বড় বড় জলাশয়
ছেড়ে ছোট ছোট হ্রদ জাতীয় জলাশয়ে বসবাস শুরু করে। এদের কিছু কিছু প্রজাতি এই
সময় ক্রমাগত ডাঙায় উঠে আসার চেষ্টা করতে থাকে। এর ফলে
পানিতে বসবাসকারী প্রাণীর পাখনা ক্রমে ক্রমে পা-এ রূপান্তরিত হয়। এর ফলে এদের
দেহের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এই সূত্রে এরা হয়ে উঠেছিল চার পেয়ে
প্রাণী। বিজ্ঞানীরা এদের নামকরণ করেছে । প্রথম দিকে
এরা জলস্থলে বিচরণ করতো। কিন্তু এদের অনেক প্রজাতি পানিতে থাকার অভ্যাস
অনেকাংশে ত্যাগ করেছিল। এই সময় তাদের আর্দ্র ত্বক দিয়ে শ্বাসকার্য চালাতো।
ডাঙায় বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল,এদের দেহে ফুসফুস নামক
অঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল।
৩৭ থেকে ৩৪ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে টেট্রাপোডা থাকের প্রাণিকুল
দুটি প্রধান ধারায় বিভাজিত হয়ে যায়। এই ধারা দুটি হলো-
-
বাট্রাকোমোর্ফা
থাক:
আবির্ভাব কাল ৩৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই উপদল থেকে উদ্ভব হয়েছিল উভচর
প্রাণীকুল এবং নানা ধরনের আধা উভচর প্রজাতি। মূলধারার উভচর প্রাণীকুলের
প্রজাতিকুল ক্রমবিবর্তনের ধারায় নতুন প্রজাতি হিসেবে রূপন্তারিত হয়েছে।
-
রেপ্টিলিওমোর্ফা:
আবির্ভাব কাল ৩৫
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই উপদল থেকে উভচর, স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, পক্ষী
শ্রেণি প্রাণিকুলের উদ্ভব হয়েছিল। এই থাকটি থেকে
৩১.২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে উদ্ভব হয়েছিল এ্যাম্নিয়োটা
থাকের (এ্যাম্নিয়োট
ডিম প্রসবকারী)
প্রাণীকুল বিকাশ শুরু হয়।
৩৪ কোটি ৩১.২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
এ্যাম্নিয়োটা
থাক বিভাজিত হয়ে যায়।
এই ভাগগুলো হলো-
- ক্যাসিনেরিয়া গণ: আবির্ভাব কাল ৩৪ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
-
সিন্যাপ্সিডা
থাক: আবির্ভাব কাল ৩১.৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
-
সোরোপ্সিডা থাক: আবির্ভাব কাল ৩১.২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই থাক থেকে
সরীসৃপ শ্রেণির
প্রাণিকুলের উদ্ভব হয়েছিল।
৩১.৮-৩০.৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
সিন্যাপ্সিডা
থাক বিভাজিত হয়ে যায়।
এই ভাগগুলো হলো-
-
প্রোটোসেলেপ্সিড্রোপ্স গণ: আবির্ভাব কাল ৩১.৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ৩১.৫ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই থাকের সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল
-
ইউপেলিয়োসোরাস থাক: আবির্ভাব
কাল ৩০.৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
- এচিনের্প্টেওন গণ: আবির্ভাব
কাল ৩০.৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
- ক্যাসিয়াসোরাস থাক: আবির্ভাব কাল
৩০.৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ২৭.২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই থাকের সকল
প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
৩০.৬-৩০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
ইউপেলিয়োসোরাস
থাক বিভাজিত হয়ে যায়।
এই ভাগগুলো হলো-
- ফিয়াকোডোনোডি গোত্র: আবির্ভাব কাল ৩০.৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ২৮ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই থাকের সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
- স্ফেনাকোডোন্টিয়া থাক: আবির্ভাব কাল
৩০.৫৯ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
- এডাফোসোরাস গোত্র: আবির্ভাব কাল
৩০.২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ২৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই থাকের সকল
প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
- ভারানোপিডি গোত্র: আবির্ভাব কাল
৩০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ২৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই থাকের সকল
প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
৩০.৫৯-২৯.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
স্ফেনাকোডোন্টিয়া
থাক বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগগুলো হলো-
- ইয়ান্থোডোন গণ: আবির্ভাব কাল ৩০.৫৯ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ৩০.৩৪ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই থাকের সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
- স্ফেনাকোডোন্টোইডিয়া:
আবির্ভাব কাল ৩০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
- হ্যাপ্টোডাস গণ: আবির্ভাব কাল ২৯.৯ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ২৯.৬৪ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই থাকের সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
- প্যালিয়োহাট্টেরিয়া গণ: আবির্ভাব কাল ২৯.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
৩০-২৭.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
স্ফেনাকোডোন্টোইডিয়া
থাক বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগগুলো হলো-
- স্ফেনাকোডোন্টিডি গোত্র: আবির্ভাব কাল ৩০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ২৭.২ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
-
থেরাপ্সিডা বর্গ: আবির্ভাব কাল ২৭.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
২৭.২৫-২৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
থেরাপ্সিডা বর্গ বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগগুলো হলো-
- বিয়ামোসিচিয়া উপবর্গ: আবির্ভাব কাল ২৭.২৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ২৫.২ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
-
ইউথেরাপ্সিডা থাক: আবির্ভাব কাল ২৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
২৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
ইউথেরাপ্সিডা থাক বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগগুলো হলো-
- ডিনোসেফালিয়া উপবর্গ: আবির্ভাব কাল ২৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ২৬ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
- নিয়োথেরাপ্সিডা: আবির্ভাব কাল ২৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
২৭-২৬.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
নিয়োথেরাপ্সিডা থাক দুটি ভাগে বিভাজিত
হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো-
- এ্যানোমোডোন্টিয়া উপর্গ: আবির্ভাব কাল ২৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ২০.১ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
-
থেরিয়োডোন্টিয়া থাক: আবির্ভাব কাল ২৬.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
২৭.০৬-২৬.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে থেরিয়োডোন্টিয়া থাক দুটি ভাগে বিভাজিত
হয়ে যায়।
- গোর্গোনোপ্সিয়া উপবর্গ: আবির্ভাব কাল ২৭.০৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ২৫.২
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
-
ইউথেরিয়োডোন্টিয়া থাক: আবির্ভাব কাল ২৬.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
সূত্র
: