|
প্রাণিজগতের একটি আদিম মেরুদণ্ডী প্রাণী। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রোলি (Broil), গ্রিক τετραπόδηs (চতুষ্পদী) শব্দ থেকে এর নামকরণ করেছিলেন। ভার্টিব্রেটা উপপর্বের একটি ভাগ। আধুনিক কালে একে থাক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
যদিও প্রাণিজগতের বহু প্রাণীর চারটি পা আছে। শব্দের বিচারে এদেরকেও টেট্রাপোড বলা যায়। কিন্তু জীববিজ্ঞানে টেট্রাপোডকে একটি বিশেষ সময়ে বিকশিত প্রাণিকুলের থাক বুঝানো হয়ে থাকে।
ক্রমবিবর্তনের ধারা
হৃয়াসিয়ান অধিযুগে (২৩০-২০০.৫
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
হুরোনিয়ান বরফযুগের
শেষ হয়। ২১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
আদি জীবকণিকাগুলোর একটি অংশ বিবর্তিত
হয়ে
সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষ -যুক্ত
জীবে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, বিজ্ঞানীরা এই আদি জীবকুলকে
ইউক্যারিয়েটা
জীবস্বক্ষেত্র হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন ২৫০-১৬০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
প্যালেপ্রোটারোজোয়িক যুগে
এই জীবকোষভিত্তিক জীবের বিকশিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে আবির্ভূত
গ্রাইপেনিয়া
(Grypania)
নামক শৈবালের জীবাশ্মে এই জাতীয় কোষের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ভূতত্ত্ববিদরা
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২৭০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কিছু পাথরের
গায়ে কিছু তৈলাক্ত পদার্থ পেয়েছিলেন। এই তেলের ভিতর ছিল
স্টেরোয়েড এ্যালকোহল। যেহেতু এই এ্যালেকোহল-যুক্ত
ফ্যাটি এ্যাসিড একমাত্র
নিউক্লিয়াস-যুক্ত
কোষে
পাওয়া যায়। তাই ধারণা করা যায়— নিউক্লিয়াসযুক্ত
জীবকোষের উদ্ভব এই যুগেই হয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে,
নিউক্লিয়াস-যুক্ত
কোষের
সূত্রে একক জীব কণিকার সমন্বয়ে একটি নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল। এই ধরনের জীব-কণিকাগুলোর
কিছু কিছু প্রজাতি পারস্পরিক স্বার্থে একটি সাথে সহাবস্থানে থাকতো। এদের একটি
অক্সিজেন থেকে
চিনি
জাতীয় জৈবিক খাদ্য প্রস্তুত করতে পারতো এবং এই
চিনি অপর জীবকণিকাকে প্রদান করতো। অপর জীবকণিকা এই চিনি গ্রহণ করে, তা থেকে শক্তি উৎপাদন করতো এবং তা উভয় জীবকণিকা ভাগাভাগি করে নিত।
মেসোপ্রোটারোজোয়িক যুগে
(১৬০-১০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
সাগরজলে ভাসমান
ইউক্যারিয়েটা
জীবস্বক্ষেত্রের জীবকুলের দেহে ক্ষণপদের সৃষ্টি হয়েছিল। জীবনধারণের জন্য জীবকণিকাগুলোর চলাচল, পরিবেশগত সঙ্কেত গ্রহণ, খাদ্যকে
আকর্ষণ করাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এই সূত্রে এদের দেহে ক্ষণপদ তৈরির ক্ষমতা
সৃষ্টি হয়েছিল। বিবর্তনের এই ধারায় প্রাণিকুলে উদ্ভব হয়েছিল
বাইকোন্টা এবং
পোডিয়াটা থাকের প্রাণিকুল। বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে ক্ষণপদের সংখ্যার
উপর ভিত্তি করে প্রাণিকুলকে ভাগ করেছিলেন।
পোডিয়াটা জীবকুল থেকে উদ্ভব হয়েছিল একটি ক্ষণপদধারী ইউনিকোন্টা এবং ভারিসুকালা। ইউনিকোন্টা জীবকুল থেকে উদ্ভব হয়েছিল ছত্রাক ও প্রাণিকুল। প্রায় ১০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ইউনিকোন্টা জীবকুল দুই ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো- এ্যামিবোজোয়া এবং ওবাজোয়া। পরে ওবাজোয়া ৩টি থাকে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই থাক তিনটি হলো- ব্রেভিয়াটিয়া, আপুসোমোনাডিডা এবং ওপিস্থোকোণ্টা।
৯৭.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ওপিস্থোকোণ্টা থাকটি দুটি থাকে বিভাজিত হয়ে যায়। এই থাক দুটি হলো- হোলোমাইকোটা এবং হোলোজোয়া। এই থাকের জীবকুল বিভাজিত হয়ে তৈরি সৃষ্টি হয়েছিল ইখ্থিয়োস্পোরিয়া, প্লুরিফোর্মিয়া এবং ফিলোজোয়া থাকের জীবকুল।
৯৫ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
ফিলোজোয়া থাকের জীবকুল দুটি ভাগে বিভাজিত হয়ে
সৃষ্টি হয়েছিল ফিলাস্টেরিয়া এবং
এ্যাপোইকোজোয়া থাকের জীবকুল।
৮৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
ক্রায়োজেনিয়ান
বরফযুগের শুরু হয়েছিল। এরই ভিতরে
এ্যাপোইকোজোয়া
থাকের প্রাণিকুল বিভাজিত হয়ে উৎপন্ন হয়েছিল চোয়ানোফ্লাগেল্লাটিয়া
শ্রেণির অন্তর্গত প্রজাতিসমূহ এবং ৬৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
জীবরাজ্যে আবির্ভূত হয়
এ্যানিমেলিয়া।
ক্রায়োজেনিয়ান
বরফযুগটি স্থায়ী
হয়েছিল ৬৩
কোটি ৫০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
এডিয়াকারান অধিযুগ অবধি বিদ্যমান ছিল। সেই তুষারাবৃত শীতল পৃথিবীর
সমুদ্রে জীবজগতে পরিবর্তনের নতুন ধারার সূচনা হয়। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এক কোষী
জীবজগতে বহুকোষী জীবের আবির্ভাব ঘটলো। এদের ভিতরে একটি শ্রেণি বহুকোষের সমন্বয়ে
আবির্ভূত হলেও এদের দেহে কলাতন্ত্রের বিকাশ ঘটেনি। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল দুটি
উপরাজ্য হলো-
কলাতন্ত্রবিহীন
প্যারাজোয়া
এবং কলাতন্ত্র যুক্ত
ইউমেটাজোয়া উপরাজ্যের প্রাণিকুল।
৫৮ কোটি থেকে ৫৫.৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই
উপরাজ্য ৩টি ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই ভাগ দুটি হলো- ট্রাইলোবোজা পর্ব,
টিনোফোর
পর্ব ও
প্যারাহোক্সোজোয়া
থাক।
৫৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
ইউমেটাজোয়া
উপরাজ্যের প্রাণিকুল থেকে
প্যারাহোক্সোজোয়া
থাকের প্রাণিকুলের উদ্ভব হয়। এই থাক থেকে পরবর্তী সময়ে উদ্ভব
হয়েছিল কয়েকটি থাক ও পর্বের প্রাণিকুল। এগুলো হলো-
ক্রমবিবর্তনের ধারায় ৫৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৫৫.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে বিলাটেরিয়া থাক থেকে দুটি পর্ব এবং একটি থাকভুক্ত প্রাণিকুলের উদ্ভব হয়েছিল। এগুলো হলো-
৫৩.৫.থেকে ৫২.১ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
কর্ডাটা পর্ব
বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই বিভাজানের সূত্রে আবির্ভাব ঘটেছিল কয়েকটি উপপর্বের
প্রাণিকুল। এগুলো হলো-ভেটুলোকোলিয়া
উপপর্ব,
সেফালোকর্ডাটা
উপপর্ব এবং
ওল্ফ্যাক্টোরেস থাক।
৫৩.৫ থেকে ৪১.৯ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
ওল্ফ্যাক্টোরেস
উপপর্ব থেকে উদ্ভব হয়েছিল
ইউরোকর্ডাটা (টুনিকেট) এবং
ভার্টিব্রাটা উপপর্বের
প্রাণিকুল। এরপর
ভার্টিব্রাটা
প্রাণিকুল বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগগুলো হলো-
অগ্নাথাস ঊর্ধশ্রেণি। আবির্ভাব কাল ৫৩.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
ন্যাথোস্টোমাটা অবপর্ব। আবির্ভাব কাল ৪৬.২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
প্যালিওস্পোন্ডিলাস গণ: আবির্ভাব কাল ৪১.৯২-৩৫.৮৯ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
সাইক্লোস্টোমাটা। আবির্ভাব কাল ৪১.৯ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
প্লাকোডার্মি শ্রেণি: আবির্ভাব কাল ৪২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
ইউন্যাথোস্টোমাটা থাক: আবির্ভাব কাল ৪২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
টেলোস্টোমি শ্রেণি: আবির্ভাব কাল ৪৪.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
৪৪.৫-৪২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে টেলোস্টোমি থাক ২টি ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো এ্যাকান্থোডি এবং ইউটেলেস্টোমি থাক।
৪৪- ৪২.৩ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে দিকে ইউটেলেস্টোমি থাক দুটি ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগগুলো হলো- ওস্টেইক্থিস ঊর্ধ্ব শ্রেণি ও কন্ড্রিক্থিস শ্রেণি। এই সময়ের ভিতরে ওস্টেইক্থিস ঊর্ধ্ব শ্রেণি ২টি ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো-
৪২.৩ থেকে ৪১ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে সারকোপ্টেরিজি থাক চারটি ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই ভাগগুলো হলো-
৩৮.৫ থেকে ৩৭.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এল্পিস্টোস্টেগালিয়া দুটি ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো-
৩৭.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে স্টেগোসেফালিয়া একাধিক ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগগুলো হলো-
প্রায়
৪০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে মহা-মহাদেশীয়
উপকুলের
কোনো কোনো অঞ্চলে পানি
কমে গিয়ে অগভীর জলভূমিতে পরিণত হয়েছিল। একই সাথে তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে
ভার্টিব্রাটা
উপপর্বের কিছু প্রাণী এই সব অগভীর জলভূমিতে বসবাসে অভ্যস্থ হয়ে
উঠেছিল।
কালক্রমে এরা বড় বড় জলাশয়
ছেড়ে ছোট ছোট হ্রদ জাতীয় জলাশয়ে বসবাস শুরু করে।
৩৯ কোটি ৭০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
অগভীর জলের
ভার্টিব্রাটা উপপর্বের
প্রজাতিগুলো তাদের পাখনা
প্যাডেলের
মতো ব্যবহার করে পানিতে সাঁতার কাটতো। এর ফলে পাখনাগুলো
শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এরা
দ্রুত চলাচলের জন্য অগভীর জলাভূমির তলদেশের মাটিতে এই মজবুত পাখনা দিয়ে আঘাত
করতো। এর ফলে এদের চলাচলের জন্য পাখনা পায়ের মতো অঙ্গে পরিণত হয়েছিল।
৩৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে ফলে এই
প্রজাতিগুলো চতুষ্পদী প্রাণীতে পরিণত হয়েছিল। এই জাতীয় প্রাণিকুলের সাধারণ নাম
হলো-
টেট্রাপোডা।
কালক্রমে এরা বড় বড় জলাশয়
ছেড়ে ছোট ছোট হ্রদ জাতীয় জলাশয়ে বসবাস শুরু করে। এদের কিছু কিছু প্রজাতি এই
সময় ক্রমাগত ডাঙায় উঠে আসার চেষ্টা করতে থাকে।
এর ফলে
পানিতে বসবাসকারী প্রাণীর পাখনা ক্রমে ক্রমে পা-এ রূপান্তরিত হয়। এর ফলে এদের
দেহের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এই সূত্রে এরা হয়ে উঠেছিল চার পেয়ে
প্রাণী। বিজ্ঞানীরা এদের নামকরণ করেছে ।
প্রথম দিকে
এরা জলস্থলে বিচরণ করতো। কিন্তু এদের অনেক প্রজাতি পানিতে থাকার অভ্যাস
অনেকাংশে ত্যাগ করেছিল। এই সময় তাদের আর্দ্র ত্বক দিয়ে শ্বাসকার্য চালাতো।
ডাঙায় বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল,
এদের দেহে ফুসফুস নামক
অঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল।
৩৭ থেকে ৩৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
টেট্রাপোডা থাকের প্রাণিকুল
দুটি প্রধান ধারায় বিভাজিত হয়ে যায়। এই ধারা দুটি হলো-
বাট্রাকোমোর্ফা থাক: আবির্ভাব কাল ৩৭ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই উপদল থেকে উদ্ভব হয়েছিল উভচর প্রাণীকুল এবং নানা ধরনের আধা উভচর প্রজাতি। মূলধারার উভচর প্রাণীকুলের প্রজাতিকুল ক্রমবিবর্তনের ধারায় নতুন প্রজাতি হিসেবে রূপন্তারিত হয়েছে।
৩৭-৩৩ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে বাট্রাকোমোর্ফা থাক থেকে বহু প্রাণীর উদ্ভব হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৭ কোটি অব্দের দিকে উদ্ভব হয়েছিল এ্যাম্ফিবিয়া (উভচর) শ্রেণির প্রাণিকুল। ৩৩ -২৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই শ্রেণি দুটি ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়।
টেম্নোস্পোডিলি বর্গ: ৩৩ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই বর্গের প্রাণিকুলের আবির্ভাব হয়েছিল। ১২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এর সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
লিসাম্ফিবিয়ান অধশ্রেণি: ২৫ কোটি খ্রিষ্টাব্দে উদ্ভব হয়েছিল আধুনিক উভচর প্রাণিকুলের পূর্ব-প্রজাতিসমূহ।
সূত্র
:
ডাইনোপেডিয়া। কামরুল হায়দার। বলাকা বুকস ইন্টারন্যাশনাল। শ্রাবণ ১৪১২, জুলাই
২০০৫।