'...শরীফ সন্তানেরা এবং তাহাদের খিদমাৎগারগণ উর্দু বলেন, বাঙ্গলা ভাষা ঘৃণা করেন, কিন্তু সেই উর্দু জবানে মনের ভাব প্রকাশ করা তো দূরে থাকুক, পশ্চিমা লোকের গিলিত চর্বিত লিখিত শব্দগুলিও অনেকে যথাস্থানে শুদ্ধ আকারে যথার্থ অর্থে প্রয়োগ করিতেও অপারগ। অথচ বাঙ্গলায় মনের ভাব প্রকাশ করিবার সুবিধা হইলেও ঘৃণা করিয়া তাহা হইতে বিরত হন।... সতেজ স্বাভাবিক বাঙ্গলা ভাষা স্বাধীনতা পাইলে তৎসঙ্গে পল্লীবাসি মোসলমান সমাজের উন্নতির যুগান্তর উপস্থিত হইবে। ...বঙ্গের মোসলমান ভ্রাতাভগ্নিগণ!.... বাঙ্গলা ভাষাকে হিন্দুর ভাষা বলিয়া ঘৃণা না করিয়া আপনাদের অবস্থা ও সময়ের উপযোগী করিয়া লউন।১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে আবদুর রসুল ও আবদুল হালিম গজনবীর উদ্যোগে প্রকাশিত ‘দি মুসলমান’ পত্রিকা। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মজিবর রহমান। বাঙালি হয়েও যারা উর্দুকে আদর্শ ভাষা মনে করতেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল এই পত্রিকা।
বাংলাদেশের শতকরা নিরানব্বইয়েরও অধিকসংখ্যক মুসলমানের ভাষা বাংলা। সেই ভাষাটাকে কোণঠাসা করিয়া তাহাদের উপর যদি উর্দু চাপানো হয় তাহা হইলে তাহাদের আধখানা কাটিয়া দেওয়ার মতো হইবে না কী? চীন দেশের মুসলমানের সংখ্যা অল্প নহে, সেখানে কেহ বলে না যে চীনা ভাষা ত্যাগ করিলে তাহাদের মুসলমানির খর্বতা ঘটিবে।’১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে খেলাফত আন্দোলনের সূত্রে ভারতের নেতৃস্থানীয় চার ভাগের তিন ভাগ মুসলমানগণ ভারতের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার পক্ষে ছিলেন। এই সময় সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী লিখিতভাবে বৃটিশ সরকারকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে বলেন―
‘ভারতের রাষ্ট্রভাষা যা-ই হোক না কেন বাংলার রাষ্ট্রভাষা করতে হবে বাংলাকে।'১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে। বাংলা ভাষী শিক্ষার্থীদেরকে উর্দুর মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাদানের প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে ‘সওগাত’ প্রতিবাদ জানায়।
যাহারা প্রকৃতই উর্দ্দুভাষী তাহারা বাংলা দেশে উর্দ্দু চালাইতে চান কোন্ সাহসে? কলিকাতার খিছুড়ি মোসলমানগুলিকে দেখিয়াই তাহারা মনে করেন যে, বাংলা দেশের মোসলেমগণের মাতৃভাষার কোনো ঠিকানা নাই? এটাই তাঁহাদের বিষম ভুল। কলিকাতা বাংলাদেশ বটে, কিন্তু বাংলা দেশটা কলিকাতা নহে। ..যখন উর্দ্দু ভাষা জন্ম গ্রহণ পর্যন্ত করে নাই তখনো বাঙ্গালী মোসলমানগণের মাতৃভাষা বাংলা ছিল। বাঙ্গালী মোসলমান কবি যখন ‘পদ্মাবতী’ কাব্য রচনা করিয়াছিলেন, তখন উর্দ্দুভাষা যে ভারতের কোনো দেশের বাজারে আবদ্ধ ছিল তাহা নির্ণয় করা সুকঠিন।... কোনো গুণে উর্দ্দু আমাদের বরেণ্য? ভারতের অর্ধেকের বেশি মোসলমান কথা বলেন বাংলায়, আর অবশিষ্ট বলেন বিভিন্ন ভাষায়। তথাপি বাঙ্গালী মোসলমানকে উর্দ্দু ধরিতে হইবে, আচ্ছা জবরদস্তি বটে। বাজারে-শিবিরের ভাষা উদ্দুর্, বাজারে-শিবিরে চলুক। একটা জাতিকে জোর করিয়া উর্দ্দু শিখাইবার কী প্রয়োজন? আর উর্দ্দুর দেশের কোনো জায়গায় এত এসলামী ভাবের দান ডাকিয়াছে যে বাঙ্গালী মোসলমানদিগকেও উর্দ্দু গ্রহণ করিতে হইবে?...ফল কথা, বাংলাদেশে আমরা উর্দ্দুকে কখনো প্রশ্রয় দিতে পারি না। সখ করিয়া যিনি শিখতে চান শিখুন, কিন্তু উর্দ্দু এদেশের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষা নহে। (মোজাফ্ফর আহমদ, আল-এসলাম, ৩য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, শ্রাবণ ১৩২৪ সংখ্যা)মোয়াজ্জিন পত্রিকার ২য় বর্ষ, ৯ম-১০ম সংখ্যা; আষাঢ় ১৩৩৭ সংখ্যায় ‘বাংলা ভাষা ও মুসলমান’ প্রবন্ধে আবুদল মজিদ বিএ লিখেন―
‘বহু শতাব্দী যাবৎ বাংলার ক্রোড়ে লালিত পালিত হইয়া এবং যুগ-যুগান্তর যাবৎ মাতার মুখে বাংলা শুনিয়াও বঙ্গীয় মুসলমান বাংলা ভাষাকে আদর করিতে শিখে নাই। দেশটির ন্যায় ভাষাটার প্রতিও তাহাদের যেন পরদেশী ভাব। এই বিংশ শতাব্দীতে এমন অনেক অভিজাত্যাভিমানী মহাত্মা আছেন যাহাদের মতে বাংলাকে মাতৃভাষা বলিলে শরাফতের হানি হয়। আমাদের ভাবের আদান প্রদান ও চিন্তাশক্তি আরবী, পারসি ও উর্দুতে প্রকাশ করিবার বৃথা চেষ্টাই মাতৃভাষা ও সাহিত্যে আমাদের দাবি ও মর্যাদা রক্ষার সুযোগকে প্রথম হইতেই আমরা উপেক্ষা করিয়া আসিয়াছি।’বাসনা পত্রিকার ২য় ভাগ, ১ম সংখ্যা; বৈশাখ ১৩১৬ সংখ্যায় 'উত্তর বঙ্গের মুসলমান সাহিত্য’ প্রবন্ধে হামেদ আলী লেখেন-
‘আমাদের পূর্ব্বপুরুষগণ আরব, পারস্য, আফগানিস্তান অথবা তাতারের অধিবাসীই হউন, আর এতদ্দেশবাসী হিন্দুই হউন, আমরা এক্ষণে বাঙ্গালী; আমাদের মাতৃভাষা বাঙ্গালা। বাস্তবিক পক্ষে যাহারা ঐ সকল দেশ হইতে এতদ্দেশে আগমন করিয়াছিলেন, তাহারাও এক্ষণে আরব, পারসি অথবা আফগান জাতি বলিয়া আত্মপরিচয় দিতে পারেন না, ...মাতৃগর্ভ হইতে ভূমিষ্ট হইয়া প্রথম যে ভাষা আমাদের কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হইয়াছে, যে ভাষা আমরা আজীবন ব্যবহার করি, যে ভাষায় আমরা সুখ দুঃখ, হর্ষ বিষাদ প্রকাশ করি, যে ভাষায় হাটে বাজারে, ব্যবসায় বাণিজ্যে এবং বৈষয়িক কার্য্যে কথোপকথন করি; যে ভাষায় নিদ্রাকালে স্বপ্ন দেখি; সেই ভাষা বাঙ্গালা। সুতরাং বাঙ্গালা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা; ....আমাদের অনেকেরে মোহ ছুটে নাই। তাহারা বাঙ্গালার বাঁশবন ও আম্র কাননের মধ্যস্থিত পর্ণ কুটিরে নিদ্রা যাইয়া এখনো বোগদাদ, বোখরা, কাবুল, কান্দাহারের স্বপ্ন দেখিয়া থাকেন। কেহ কেহ আবার বাঙ্গালার পরিবর্ত্তে উর্দুকে মাতৃভাষা করিবার মোহে বিভোর। দুর্বল ব্যক্তিরা যেমন অলৌকিক স্বপ্ন দর্শন করে, অধঃপতিত জাতিও তেমনি অস্বাভাবিক খেয়াল আঁটিয়া থাকে।‘কোহিনুর’ এর মাঘ ১৩২২ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বাঙ্গালী মুসলমানের ভাষা ও সাহিত্য’ প্রবন্ধে মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী বলেন―
‘বাঙ্গালী মুসলমানের মাতৃভাষা বাঙ্গালা, ইহা দিনের আলোর মতো সত্য। ভারতব্যাপী জাতীয় সৃষ্টির অনুরোধে বঙ্গদেশে উর্দ্দু চালাইবার প্রয়োজন যতই অভিপ্রেত হউক না কেন, সে চেষ্টা আকাশে ঘর বাঁধিবার ন্যায় নিষ্ফল। বাঙ্গালা ভাষায় জ্ঞানহীন মৌলভী সাহেবগণের বিদ্যা ও বঙ্গদেশে উর্দ্দু শিক্ষার বিফলতা তাহার জলন্ত প্রমাণ। সুতরাং জনসমাজেহ উর্দ্দু শিক্ষা হইতে নিষ্কৃতি দিলে নিশ্চয়ই জাতীয়তা বৃদ্ধির অনিষ্ট হইবে না। ...ভাষাকে মুসলমানি করিবার চেষ্টায় শক্তিক্ষয় না করিয়া বঙ্গভাষার ভাবের ঘরে মুসলমানীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা লক্ষ গুণে প্রয়োজন।’‘বঙ্গীয়-মসুলমান-সাহিত্য পত্রিকা’ ৪র্থ বর্ষ, ১ম সংখ্যা; বৈশাখ ১৩২৮ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘উর্দু ও বাঙ্গলা সাহিত্য’ প্রবন্ধে মোহাম্মদ লুৎফর রহমান
‘আমি ভিখারী হইতে পারি, দুঃখ অশ্রুর কঠিনভারে চূর্ণ হইতে আপত্তি নাই। আমি মাতৃহারা অনাথ বালক হইতে পারি―কিন্তু আমার শেষ সম্বল-ভাষাকে ত্যাগ করিতে পারি না। আমার ভাষা চুরি করিয়া আমার সর্বস্ব হরণ করিও না। মাতৃভাষাকে কেমন করিয়া ভুলিব? এমন অসম্ভব প্রস্তাব করিয়া আমার জীবনকে অসাড় ও শক্তিহীন করিয়া দিতে চায়- কে? বিদেশী ভাষায় কাঁদিবার জন্য―কে আমাকে উপদেশ দেয়?..‘সাহিত্যিক, ১ম বর্ষ, ১১শ সংখ্যা; আশ্বিন ১৩৩৪ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বাঙ্গলা সাহিত্য ও মুসলমান’ প্রবন্ধে মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন―
গৃহের পার্শ্বে উর্দুর কলহাসি আমরা নিত্যই শুনি, কিন্তু তাহাতে বাঙ্গালী মোসলমানের হৃদতন্ত্রীতে জাগে না। সে তাহাতে যথার্থ আনন্দ ও শান্তি লাভ করে না।’
বাঙ্গলার পরিবর্ত্তে আরবী ও উর্দ্দু শব্দ ব্যবহার করার সঙ্গে যেন জাতীয়তা বা ধার্মিকতার একটা অন্ধ মনোভাব সংশ্লিষ্ট রহিয়াছে। ...বাঙ্গলা ভাষার প্রতি একটা হৃদয় নিহিত স্বাভাবিক মমতা যেন আমাদের নেই, আরবী, ফার্সি বা উর্দ্দুই যেন তদপেক্ষা আমাদের চেয়ে বেশি আপন। নিজের মাতৃভাষার প্রতি এই যে একটা অজ্ঞাত অশ্রদ্ধা ও তাচ্ছিল্যের ভাব এবং অন্যভাষার প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন দরদ ইহাকে আমি বড় অশ্রদ্ধা করি। ...আরবী আমাদের ধর্মভাষা, আল্লাহর বাণী উহাতে নাজিল হইয়াছে, রসুলের সুন্নত ও হাদিস উহাতে, তাই উহা আমাদের প্রিয়, ফার্সি ও উর্দুতে ইসলামের আলেমগণ অসাধ্য সাধন করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন, তাই উহাদিগকে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু উহাদিগকে ভালবাসিব বলিয়া নিজের মাতৃভাষাকে অপমান করিব...ইহা কোন ন্যায়ের অন্তর্গত! ...ধর্মের গোঁড়ামি একবার আমাদিগকে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্ধ শতাব্দী পিছাইয়া ফেলিয়া দিয়াছে, আবার যেন মুসলমানী বাঙ্গলার মোহ আমাদিগকে পথ না ভুলায়।’১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ
[বাংলা ভাষার পক্ষে প্রকাশিত তমদ্দুন মজলিশের পুস্তিকা অংশ]
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের যুদ্ধ দলিলপত্র: প্রথম খণ্ড। পৃষ্ঠা: ৪৯।
[গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলা ভাষাকে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রশ্নে বিতর্ক]তমিজুদ্দিন খানের নেতৃত্বে পরিষদের সকল মুসলমান সদস্য (সবাই মুসলিম লীগের) একযোগে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। পূর্বপাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন যে, "পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ চায় রাষ্ট্রভাষা উর্দু হোক"। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান এ প্রস্তাবটিকে পাকিস্তানে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেন। উর্দুকে লক্ষ কোটি মুসলমানের ভাষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কেবলমাত্র উর্দুই হতে পারে"। অনেক বিতর্কের পর সংশোধনীটি ভোটে বাতিল হয়ে যায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের যুদ্ধ দলিলপত্র: প্রথম খণ্ড। পৃষ্ঠা: ৫৪-৫৮।
১২-১৫ই মার্চ: ১১ তারিখের এ ঘটনার সূত্রে ১২ থেকে ১৫ মার্চ ঢাকাতে ধর্মঘট পালন করা হয়। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে ১৫ মার্চ খাজা নাজিমুদ্দিন সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে আবুল কাশেম, কামরুদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ অংশগ্রহণ করেছিলেন। আলোচনা সাপেক্ষে দুই পক্ষের মধ্যে ৮টি বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিগুলো ছিল ('বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র ' গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ৭৮ পৃষ্ঠা থেকে)
ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকারের এ নমনীয় আচরণের প্রধান কারণ ছিল ১৯ মার্চ জিন্নাহ্'র ঢাকা আগমন। তাঁর আসার পূর্বে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত করার জন্য নাজিমুদ্দিন চুক্তিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিটি তখন পর্যন্ত মেনে নেয়া হয় নি। চুক্তিতে আন্দোলনের সময় গ্রেফতারকৃত বন্দিদের মুক্তি, পুলিশের অত্যাচারের নিরপেক্ষ তদন্ত, বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম ও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া, সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইত্যাদি বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত ছিল। চুক্তির শর্ত অনুসারে ১৫ মার্চেই বন্দীদের মুক্তি দেয়া হয়। ফলে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
রমনা রেসকোর্স ময়দান কায়েদে আজমের ভাষণ |
[জিন্নাহর কাছে দেওয়া রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের স্মারকলিপি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯০]
কিন্তু
মুহম্মদ আলী জিন্নাহ
খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে একপেশে এবং চাপের মুখে সম্পাদিত বলে
প্রত্যাখান করেন। অনেক তর্ক-বিতর্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য
মুহম্মদ আলী জিন্নাহ্'র কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করে।
ওই দিন মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা ত্যাগ করেন এবং সেদিন সন্ধ্যায় রেডিওতে দেয়া ভাষণে তাঁর
পূর্বেকার অবস্থানের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন।
মুহম্মদ আলী জিন্নাহ'র ঢাকা ত্যাগের পর ছাত্রলীগ
এবং তমুদ্দন মজলিসের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তমুদ্দন মজলিসের আহ্বায়ক শামসুল
আলম তার দায়িত্ব মোহাম্মদ তোয়াহা'র কাছে হস্তান্তর করেন। শুরু দিকে ভাষা আন্দোলনের
পক্ষে তমুদ্দন মজলিস অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তী সময়ে এই সংগঠনটিই
সাংগঠনিকভাবে আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসে।
ঢাকার নবাবপুর রোডে
স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের শোভাযাত্রা সূত্র: দৈনিক সংবাদ। ঢাকা , শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ |
১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রথম শহিদ দিবস শহিদানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত |
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের
২১ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রভাত ফেরি। |
ভাষা আন্দোলনের গান : আমার
ভাইয়ের রক্তে রাঙানো আবদুল গাফফার চৌধুরী ভাষা আন্দোলন এই গানটি রচনা করেছিলেন। এ গানটিতে প্রথমে সুরারোপ করে ছিলেন আব্দুল লতিফ। পরে করাচী থেকে ঢাকা ফিরে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে আলতাফ মাহমুদ আবার নতুন করে সুরারোপ করেন। এরপর থেকে এই সুরের গানটি ভাষা-আন্দোলন ও একুশের প্রভাতফেরির গান-এ পরিণত হয়েছে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে প্রকাশিত হয় গানটি। পরে এই সংকলনটি তৎকালীন সরকার সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করেছিল। জহির রায়হান তাঁর 'জীবন থেকে নেয়া' ছবিতে এ গানটি ব্যবহার করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই গানটির সুনাম আরো বাড়তে শুরু করে। ইতোমধ্যে গানটি সুইডিশ ও জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এটি তৃতীয় স্থান লাভ করেছে। |
[দেখুন: ভাষাদিবস,(আন্তর্জাতিক)]
তথ্যসূত্র :