উত্তর
ভারতীয়
সঙ্গীত পদ্ধতিতে
এই রাগটি বিলাবল ও কাফি ঠাটে পাওয়া যায়। এর ভিতরে বিলাবল ঠাটের
পটমঞ্জরী সকাল বেলার রাগ।
এই মতে সকল স্বর
শুদ্ধ হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে কাফি ঠাটের পটমঞ্জরী বিকালে গাওয়া হয়।
কাফি
ঠাটের এই রাগটিকে সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ জাতি হিসেবে উল্লেখ করা
হলেও- আরোহণে অনেক সময় গান্ধার ও ধৈবত দেখানো হয় না। কারণ এই দুটি স্বর স্পর্শ
স্বরের মতো করে ব্যবহৃত হয় বলে, অনেকে আরোহণে এই দুটি স্বরের উল্লেখ করার
প্রয়োজন বোধ করেন না।
রাজা নওয়াব আলী খানের রচিত 'মারিফুন্নাগমাত' গ্রন্থে
(পৃষ্ঠা: ২৫৯-২৬০) এই রাগের পরিচয়
হিসেবে উল্লেখ আছে রাগটি কাফি ঠাটের সম্পূর্ণ রাগ। এই গ্রন্থে- গান্ধার ও ধৈবতের
ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়েছে-
'...এর আরোহীতে গান্ধার ও ধৈবত দুর্বল হওয়ার কারণে কিছুটা সারং এর রূপ পাওয়া যায়; কিন্তু দুটি রাগের মধ্যে পার্থক্য এই যে সারং-এ ধৈবত এবং গান্ধার একেবারেই বর্জিত- এই রাগে তা নয়'... এই রাগটি সারং এর পর গাওয়া উচিথ।
এই রাগে রমপ প্রয়োগের কারণে সারং-এর ছায়া পড়ে। আবার রজ্ঞর, ণস প্রয়োগে দেশী রাগের ছায়া পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে 'মারিফুন্নাগমাত'-এ বলা হয়েছে-
পটমঞ্জরীর সাথে দেশী'র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু দেশীতে কোমল ধৈবত তথা দুই ধৈবতই ব্যবহৃত হয়- আর পটমঞ্জরীতে কেবল তীব্র ধৈবত ব্যবহৃত হয় এবং তাও দুর্বল। এই রাগের বৈশিষ্ট্য এই যে ধৈবত দুর্বল হওয়ায় সারং এর রূপ পাওয়া যায় ও দেশী রূপ লোপ পায়।'এই রাগের একটি চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যায়- নজরুল ইসলামের -একটি পাণ্ডুলিপিতে। [নজরুলের পাণ্ডুলিপি] বর্তমানে প্রচলিত পটমঞ্জরীর যে রূপ পাওয়া যায়, তা হলো-
পঠ-মঞ্জরীএই রাগের প্রচলিত কাঠামো
'কাফি ঠাটের সম্পূর্ণ রাগিণী। তবে, আরোহণে ধৈবত গান্ধার লাগিলেও অত্যন্ত দুর্বল অর্থাৎ ঈষৎ ছোঁওয়া মাত্র লাগিয়া থাকে। এই রাগিণী অত্যন্ত মধুর হইলেও ইহা এক প্রকার অপ্রচলিত রাগিণী । ইহার নামের মতই এই রাগিণী সুখ-শ্রাব্য ৷ পঠ -মঞ্জরী মানে প্রথম মঞ্জরী। প্রথম মঞ্জরীর মতই ইহার রূপ গুণ ও আকর্ষণী শক্তি। বাঙলাদেশে একমাত্র কীর্ত্তনে পঠ -মঞ্জরী শোনা যায়। তবে, উচ্চাঙ্গের কীর্ত্তনেই (গরাণহাটী ও মনোহর সাই -এ) ইহার সমধিক প্রচলন দেখা যায়। রেনেটী ঢং -এর কীর্ত্তনে ইহার মিশ্রণ আভাস মাত্র শুনিয়াছি। গান্ধার ধৈবত দুর্বল হওয়ায় আরোহণে ইহা কিঞ্চিৎ সারং - এর আভাস আনে। কিন্তু সারং - রাগে গান্ধার ধৈবত একেবারেই বিবাদী । ষড়জ বাদী ও পঞ্চম ইহার সম্বাদী সুর। সারং -এর পর এই রাগিণী গাওয়া উচিত, ইহাই গুণীগণের মত। এক মতে ইহাতে দুই গান্ধার লাগে, আর অন্য মতে এই রাগিণী কেবল শুদ্ধ সুর দিয়া গীত হইয়া থাকে। কিন্তু অবিকৃত সুর দিয়া যে পঠ-মঞ্জরী গাওয়া হয়- তাহা বেলাবল ঠাটের এবং তাহার প্রকৃতি ও কাফি ঠাটের পঠ-মঞ্জরী হইতে অনেকটা বিভিন্ন। কাফি ঠাটের পঠ-মঞ্জরী গাহিবার সময় দিবা তৃতীয় প্রহর।
এই রাগিণীর যড়জ হইতে পঞ্চম পর্যন্ত বিস্তারের কাজ অনেকটা দেশী টোড়ীর মত এবং পঞ্চম হইতে তারা গ্রামের গান্ধার পর্যন্ত প্রায় পঠ-দীপের মত। এইটুকু স্মরণ রাখিলে এই রাগিণী বিশুদ্ধভাবে গাওয়া যাইতে পারে। তবে কোমল নিখাদও ইহাতে লাগে, পঠ-দীপে কোমল নিখাদ লাগে না। কোমল নিখাদ লাগাইবার ঢং ধানশ্রীর মত। দেশী হইতে ইহার পার্থক্য এই যে, দেশীতে কোমল ধৈবত বা কাহারও মতে দুই ধৈবত লাগে কিন্তু পঠ-মঞ্জরীতে কেবল তীব্র ধৈবত লাগে এবং এ ধৈবতও দূর্বল। এই রাগিণীতে বাড়তের কাজের সময় ধৈবত খুব কম ব্যবহার করিয়৷ কতকটা সারং - এর আভাস আনিয়া দেশী হইতে বাঁ!চাইতে হয়। ইহাতে দুই নিখাদই ব্যবহৃত হয়।
আরোহী - সা রা মা পানা সা ।
অবরোহী -সা না ধা পা মা ণা ধা পা রা মা পা রা মা রা জ্ঞা সা রা না সা।'
রাজা নওয়াব আলী খানের রচিত 'মারিফুন্নাগমাত' গ্রন্থে বর্ণিত চলনআরোহণ: স, র, জ্ঞ*, ম, প, ধ* ন র্স [*=দুর্বল]
অবরোহণণ: র্স ণ, ধ, প, জ্ঞ র, স
ঠাট কাফি
জাতি : সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ।
বাদীস্বর : পঞ্চম
সমবাদী স্বর : ষড়্জ
অঙ্গ: উত্তরাঙ্গ।
সময়: দিবা তৃতীয় প্রহর।
পকড় : স, ধ্প্স, মপ, রমপ, ধজ্ঞ, মজ্ঞর, স।
বিলাবল ঠাটের পটমঞ্জরী
আরোহণ: স র গ ম গ র, গ প ধ ন র্স
অবরোহণ: র্স ন ধপ ম গ, ম গ, স রস
ঠাট: বিলাবল
জাতি : সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ।
বাদীস্বর : ষড়্জ
সমবাদী স্বর : পঞ্চম
অঙ্গ: পূর্বাঙ্গ।
সময়: রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর।
বাংলা গানে এর সর্বপ্রাচীন ব্যবহার পাওয়া যায়- খ্রিষ্টীয় ৬৫০-১২০০ অব্দের ভিতরে রচিত চর্যাগীতিতে। চর্যাগীতির ৫০টি পদের ভিতরে এই রাগে নিবদ্ধ গানের সংখ্যা ১২টি। এই পদগুলো হলো -
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে এই রাগটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। লুপ্তরাগ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুরেশ চক্রবর্তী উদ্যোগে কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে 'হারামণি' নামক একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতো। এই অনুষ্ঠানের ১০ম আসরে পটমঞ্জরী রাগে নিবদ্ধ নজরুল ইসলামের রচিত একটি গান প্রচারিত হয়েছিল। গানটি হলো-
আমি পথ-মঞ্জরি ফুটেছি আঁধার রাতে [তথ্য]