বিড়াল
প্রাণীজগতের বিড়াল পরিবারের ছোটো আকারে প্রাণী বিশেষ। সাধারণত বিড়াল পরিবারের এই বিশেষ প্রজাতিকে সত্যিকারের বিড়াল বলা হয়।

সমার্থক শব্দ:
বিড়াল, বিলাই, বিল্লি, বেড়াল, বাঘের মাসি, মার্জার।
বৈজ্ঞানিক নাম:
Felis catus, Linnaeus, 1758

বিড়াল পরিবারের একমাত্র গৃহপালিত প্রজাতি। প্রায় ৯,৫০০ বৎসর পূর্বে বন্য বিড়াল থেকে এই প্রজাতি মানুষের গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের গৃহপালিত বিড়াল পাওয়া যায়। শারীরীক গঠন এবং দেহের রঙ দেখে ধারণা করা হয় যে, গৃহপালিত বিড়ালগুলো সঙ্করজাতীয়।

এদের শরীর বেশ নমনীয়। শরীর নরম এবং খাটো লোমে আবৃত। মাথার গড়ন গোলাকার।  প্রজাতিভেদে এদের ওজন ও আকারের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত পুরুষ বিড়ালের চেয়ে স্ত্রী-বিড়াল ছোট হয়ে থাকে। সাধারণত এদের ওজন ৪-৫ কিলোগ্রাম হয়ে থাকে। মেইনে কুন (Maine Coon) বিড়ালের ওজন ১১ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশ ওজনের বিড়ালের নাম ছিল হিমি (Himmy)। এর ওজন ছিল ২১.৩ কেজি। শ্বাসপ্রশ্বাসজনীত সমস্যায় ১০ বৎসর বয়সে এই বিড়ালটি মারা যায়। সবচেয়ে কম ওজনের বিড়াল গিনিস বুক রেকর্ডে স্থান পেয়েছে মি. পীবলেস (Mr Peebles)। এর ওজন ছিল ৩ পাউন্ড, আর উচ্চতা ছিল ৬.১ ইঞ্চি।

গৃহপালিত বিড়ালের গড় উচ্চতা ২৩-২৫ সেন্টিমিটার (৯-১০ ইঞ্চি) এবং মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৪৬ সেন্টিমিটিার (১৮.১ ইঞ্চি। আর লেজসহ ৩০ সেন্টিমিটার (১১.৮ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে।  এদের লেজ লম্বা এবং সরু। তবে ঘন লোমে ঢাকা লেজ একটু মোটা দেখায়। এদের দাঁতের সংখ্যা ৩০টি, উভয় চোয়ালে দুটি করে শিকারের উপযোগী শ্বাদন্ত আছে।

এরা মূলত শিকারী এবং নিশাচর। এদের চোখ ঘোলাটে এবং অন্ধকারে জ্বল্‌জ্বল্ করে। অত্যন্ত মৃদু আলোতেও এরা দেখতে পারে। তব সব ধরনের আলো এদের দর্শনেন্দ্রিয়ে ধরা পড়ে না। নীল এবং হলুদাভ সবুজ রঙ এরা ভালোভাবে দেখতে পারে। লাল এবং সবুজের রঙের পার্থক্য খুব বেশি বুঝতে পারে না। বিড়ালের শ্রবণেন্দ্রিয় অত্যন্ত চমৎকার। মানুষ বা কুকুরের চেয়ে এর উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ ভালো শুনতে পারে। এরা ৫৫ হার্টজ থেকে ৭৯ কিলোহার্টজ-এর ভিতরে শব্দ শনাক্ত করতে পারে। শ্রবণের জন্য মাথার উভয় পার্শ্বে রয়েছে দুটো কান। প্রয়োজনে বিড়াল তাদের কান ঘুরাতে পারে। এছাড়া ঘ্রাণ-ক্ষমতাও মানুষের চেয়ে অনেকে বেশি। এদের দেহের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। হৃৎপিণ্ডের গতি ১২০-১৪০/প্রতি মিনিট, শ্বাসের হার ১৬-৪০/প্রতিমিনিট।

এরা পায়ের তালুর উপর ভর করে চলাচল করে। পায়ের তলায় রয়েছে নমনীয় মাংস এবং পায়ের থাবায় রয়েছে সঙ্কোচনশীল নখর। হাটার সময় নখ থাবার ভিতরে লুকিয়ে রাখে। ফলে এরা প্রায় নিঃশব্দে চলাফেরা করতে পারে।
প্রধানত ইঁদুর জাতীয় প্রাণী শিকার করে। তবে ছোট ছোট পাখি, পাখির ডিম খেয়ে থাকে। গৃহপালিত বিড়াল মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি খায়।

বিড়ালের গর্ভকাল প্রায় ৬৬-৬৭ দিন। স্ত্রী বিড়াল একবারে ৩- ৫টি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চাগুলো জন্মের সময় চোখ বন্ধ থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে এদের চোখের পাতা খুলে যায়। স্ত্রী বিড়াল ৫-১০ মাসের মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে, পক্ষান্তরে পুরুষ বিড়াল ৫-৭ মাসের ভিতর প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। স্ত্রীবিড়াল বৎসরে দুই থেকে তিন বার গর্ভধারণ করে। জীবদ্দশায় একটি স্ত্রী বিড়াল প্রায় ১৫০টি বাচ্চার জন্ম দিতে পারে। বিড়ালের গড় আয়ু ১২-১৪ বৎসর। স্ত্রী বিড়াল পুরুষ বিড়ালের চেয়ে দুই এক বৎসর বেশি বাঁচে।