এলিফ্যান্টিফর্মস
Elephantiformes

স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি অধবর্গ বিশেষ। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে এর নামকরণ করেছিলেন টাসি।

ট্রায়াসিক অধিযুগেরর ২২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে স্তন্যপায়ী শ্রেণির থেরিফর্ম্‌স্  উপশ্রেণির প্রাণিকুল থেকে হোলোথেরিয়া থাকের উদ্ভব হয়েছিল। এরপর এই থাক থেকে ২১.৬৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উৎপন্ন হয়েছিল ট্রেকনোথেরিয়া থাক। আট্‌লান্টোজেনাটা

১৬.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই থাক থেকে উৎপন্ন হয়েছিল
ক্ল্যাডোথেরিয়া থাকের প্রাণিকুল। ক্ল্যাডোথেরিয়া থাকের আদি প্রাণিকুল থেকে উদ্ভব হয়েছিল জাথেরিয়া থাক ও ড্রাইয়োলেসটোইডিয়া ঊর্ধবর্গের প্রাণিকুল। এই জাথেরিয়া থাক থেকে ১৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে (জুরাসিক অধিযুগ) উৎপন্ন হয়েছিল থেরিয়া থাকের প্রাণিকুল। প্রায় একই সময়ে থেরিয়া থাক থেকে উদ্ভব হয়েছিল ইউথেরিয়া থাকের প্রাণিকুল। এই থাকের সর্ব প্রাচীন নমুনা স্তন্যপায়ী পাওয়া গেছে চীনে। এই প্রাণীটি এই থাকের জুরামিয়া গণের একটি প্রজাতি। এর বৈজ্ঞানিক নাম- Juramaia sinensis ইউথেরিয়া থাক থেকে প্যালেয়োসিন যুগে (৬.৬-৫.৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) শুরুর দিকে অমরাযুক্ত (Placentalia) স্তন্যপায়ী প্রাণির আবির্ভাব ঘটে। জীববিজ্ঞানীরা এই জাতীয় স্তন্যপায়ীদের প্লাসেন্টালিয়া ক্ষুদ্রশ্রেণি হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই ক্ষুদ্রশ্রেণি ৬.৬-৬.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে দুটি বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো- আট্‌লান্টোজেনাটা ও বোরেয়োইউথেরিয়া।

৬.৫ কোটি খ্রিষ্টাব্দের দিকে আট্‌লান্টোজেনাটা থাকের মূল ধারা থেকে আফ্রোথেরিয়া ঊর্ধবর্গের প্রজাতিসমূহের উদ্ভব হয়। অবশিষ্ট প্রজাতিগুলোকে জীববিজ্ঞানীরা এক্সাফ্রোপ্লাসেন্টালিয়া নামে অভিহিত করে থাকেন।

আফ্রোথেরিয়া ঊর্ধবর্গের অধিকাংশের প্রজাতির প্রধান আবাস ছিল আফ্রিকার মাদাগস্কার অঞ্চল।
এদের অধিকাংশই আকারে ছোট ছিল। বেশিরভাগ প্রজাতি স্থলচর ছিল, তবে কিছু প্রজাতি জলচরও ছিল। এদের দাঁত ছিল ক্ষুদ্রাকার, নাকের সম্মুখভাগ বর্ধিত ছিল। তবে কানের আকার অপেক্ষাকৃত বড় ছিল। অন্যদিকে শরীরের তুলনায় চোখের আকার ছিল বেশ ছোট। এদের হাতে পায়ে ছিল পাঁচটি আঙুল। এদের অধিকাংশ প্রজাতি পোকমাকড় খেতো। আবার কিছু প্রজাতি পোকামাকড়ের পাশাপাশি লতাপাতাও খেতো।
প্রায় ৬ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের দিকে এই ঊর্ধবর্গ দুটি থাকে ভাগ হয়ে যায়। এই থাক দুটি হলো- আফ্রোইনসেক্টিফিলা ও পিনুঙ্গুলাটা

৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে পিনুঙ্গুলাট থাকের মূল ধারা থেকে উদ্ভব হয় টেথিথেরিয়া থাক। ৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ বিভাজিত হয়ে যায়। আর ৫.৫৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উদ্ভব হয়েছিল হাইরাকোডিয়া বর্গের প্রাণিকুল।

আবার ৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে টেথিথেরিয়া থাক থেকে প্রোবোস্‌সিডিয়া বর্গের প্রজাতিসমূহের উদ্ভব হয়েছিল। ক্রমবিবর্তনের ধারায় এই বর্গের প্রাণিকুলের নিচের দাঁত বর্ধিত হয়ে গজদন্তে পরিণত হয়েছিল। এদের পা স্তম্ভের আকার ধারণ করেছিল। পায়ের পাতায় পাঁচটি আঙুল থাকলেও পুরু গোলাকার পেশির দ্বারা প্যাডের সৃষ্টি করেছিল। এছাড়া নাসিকার ক্রমবর্ধমান দশায় শুঁড় তৈরি হয়েছিল। খাদ্যের বিচারেও এরা পুরোপুরি তৃণভোজী হয়ে উঠেছিল। এরাই ছিল বর্তমান কালের হাতির আদিম-পুরুষ।

আদিকালের প্রোবোস্‌সিডিয়া বর্গের সকল প্রজাতিই আফ্রিকায় বাস করতো। ধারণা করা হয় মিয়োসিন অন্তঃযুগ (২.৩০৩-৫.৩৩৩ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)-এর শেষের দিকে এরা এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ছড়িয়ে পড়েছিল। কালের বিবর্তনে এই বর্গ থেকে উদ্ভব হয়েছিল অন্যান্য প্রজাতি। এখন পর্যন্ত এদের যেসকল জ্ঞাতিগোষ্ঠীর পরিচয় পাওয়া গেছে, সেগুলো হলো-

এই বর্গের একমাত্র এলিফ্যান্টিফর্মস অধবর্গের দুটি প্রজাতি বর্তমানে আফ্রিকা ও এশিয়াতে পাওয়া যায়। বাকি সকল সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই অধিবর্গ যে সকল প্রাণিকুলের বিকাশ ঘটেছিল, সেগুলো হলো-

মিয়োসিন অন্তঃযুগ (২.৩০৩ কোটি-৫৩.৩৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)-এর শেষের দিকে এলিফ্যান্টিফর্মস অধবর্গের এই তিনটি ধারাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর বাইরে মূলধারায় থেকে গিয়েছিল এলিফ্যান্টিমোর্ফা থাকের প্রাণীকুল। এদের মিয়োসিন অন্তঃযুগর শেষের দিকে এদের উদ্ভব হয়েছিল। এরাই ছিল আধুনিক হাতির উত্তরপুরুষ।


সূত্র: