হিমালয়
বানান বিশ্লেষণ:হ্ +ই+ ম্+আ+ল্+অ+য়্
উচ্চারণ:
ɦi.ma.lɔĕ (হি.মা.লয়্)
শব্দ-উৎস: সংস্কৃত হিমালয়>বাংলা হিমালয়।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:
হিম { হন্ (হত্যা করা) + ম (মক্)} + আলয় {আ-লয় { লী (লীনভাব) + অ (অচ্), অধিকরণবাচ্য}}।
হিম + আলয় =হিমালয় [সংস্কৃত স্বরসন্ধি]
হিমের আলয়/ ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
পদ : বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {পর্বতমালা| প্রাকৃতিক উত্থান | ভূ-স্তরসমষ্টি | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}
সমার্থক শব্দাবলি: অচলপতি, অচলরাজ, অচলাধিপ, অদ্রিরাজ, অদ্রিরাট, অদ্রীশ, উত্তরাচল, উদগদ্রি, গিরিরাজ, গিরীন্দ্র, গিরীশ, নগরাজ, নগাধিরাজ, পর্বতরাজ, পর্বতরাট, শৈলরাজ, শৈলেন্দ্র, হিমশীর্ষ, হিমালয়।

হিমালয়ের উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গসমূহ
  • অন্নপূর্ণা
  • এভারেষ্ট
  • কাঞ্চনজঙ্ঘা
  • কে২
  • কৈলাস
  • খোম লনজো
  • গাশারব্রুম ১
  • গাশারব্রুম ২
  • চো ওয়ি
  • ধবলগিরি
  • নাঙ্গা পর্বত
  • নীলকণ্ঠ পর্বত
  • মাকালু
  • মানাসলু
  • লসি
  • শিশাপাংমা

এশিয়া মহাদেশ-এর ভারতবর্ষএবং তিব্বত মালভূমির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ভঙ্গিল পর্বতমালা। হিম বা বরফের আবাসস্থল হিসেবে ভারতের বৈদিকযুগে এর নামকরণ করা হয়েছিল হিমালয়। এর স্থানাঙ্ক ২৭°৫৯১৭ উত্তর ৮৬°৫৫ ৩১পূর্ব। এর উত্তর পশ্চিমে রয়েছে কারাকোরাম এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালা। উত্তরে রয়েছে তিব্বত উপত্যাকা এবং দক্ষিণে রয়েছে ইন্দো-গাঙ্গেয় উপত্যাকা। এই পর্বতমালায় পাঁচটি দেশের অংশে রয়েছে।এই দেশগুলো হলো চীন, নেপাল, পাকিস্তান, ভারতভুটান। এই পর্বতমালা থেকে প্রবাহিত হয়েছে তিনটি বিশাল নদী। এই নদীগুলো হলো গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র

এর দৈর্ঘ্য ২৪০০ কিলোমিটার (১৫০০ মাইল) এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার (২৯০২৯ ফুট।)। আয়তন ১০,৮৯,১৩৩ বর্গকিলোমিটার। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম এভারেষ্ট। এর প্রথম উচ্চতা নির্ধারণ করেছিলেন রাধানাথ শিকদার। উচ্চতার বিচারে এই শৃঙ্গটি পৃথিবীর সকল পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে অন্যতম। এর ভিতরে শতাধিক শৃঙ্গ রয়েছে, যাদের উচ্চতা ৭,২০০ মিটার (২৩,৬০০ ফুট)-এর কাছাকাছি। এছাড়া রয়েছে বিশালাকারের বেশ কিছু সুমিষ্ট পানির হ্রদ।

এই পর্বতমালার অংশে রয়েছে প্রবল বৃষ্টিপাতের অঞ্চল, রয়েছে তীব্র তুষারপাত অঞ্চল। রুক্ষ পাথুরে এলাকা যেমন রয়েছে, তেমনি অরণ্যে ঘেরা অঞ্চল। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বিচারে হিমালয় এক কথায় অসাধারণ। উত্তর মেরু থেকে আগত শীতল ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহ থেকে ভারত উপমহাদেশকে রক্ষ করে চলেছে এই পর্বতমালা। হিমালয়কে কেন্দ্র করে হিন্দু ধর্মের বহু পৌরাণিক কাহিনী রচিত হয়েছে। শিবের বাসস্থান, কুবের রাজ্য হিমালয়ে। হিমালয়েরই রয়েছে হিন্দু ধর্মের একাধিক তীর্থস্থান। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বহু মন্দির হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

প্রায় ৫৭ কোটি পূর্বাব্দের দিকে কিছু ক্ষুদ্র মহাদেশ যুক্ত হয়ে গোণ্ড্‌ওয়ানা মহা-মহাদেশটির তৈরি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ক্রমে ক্রমে এই মহাদেশ দুটি বড় খণ্ডে পরিণত হয়। এই ভাগ দুটিকে চিহ্নিত করা হয় পূর্ব গোণ্ড্‌ওয়ানা এবং পশ্চিম গোণ্ড্‌ওয়ানা নামে। ৫১-৫০ কোটি পূর্বাব্দে এই দুই অংশ একত্রিত হয়ে তৈরি হয় বিশাল গোণ্ড্‌ওয়ানা মহা-মহাদেশ। ওর্ডোভিসিয়ান অধিযুগের ৪৫ কোটি ৮০ লক্ষ বৎসরের দিকে এই মহাদেশের ভিতরে ছিল- চীনের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ, এ্যান্টার্ক্টিকা, ভারতবর্ষ, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা

১৮ কোটি ৪০ লক্ষ পূর্বাব্দে,  গোণ্ড্‌ওয়ানার মধ্যাঞ্চলের আফ্রিকা অংশ থেকে এ্যান্টার্ক্টিকা, মাদাগাস্কার, ভারতবর্ষ এবং  অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ পৃথক হয়ে গিয়েছিল। মেসোজোয়িক যুগ-এর অন্তর্গত ট্রায়াসিক অধিযুগের শুরুতে (২৫ কোটি বৎসর আগে) এই বৃহৎ মহা-মহাদেশটি অখণ্ড ছিল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া ছিল। মূলত ২০ কোটি বৎসর আগে উভয় মহা-মহাদেশটি স্পষ্টভাবে পৃথক ভূখণ্ড হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। মেসোজোয়িক যুগ-এর অন্তর্গত জুরাসিক অধিযুগে (২০ কোটি বৎসর আগে) গোণ্ড্‌ওয়ানার উত্তর আফ্রিকা অংশের সাথে যুক্ত ছিল এ্যান্টাক্টিকা। পাত সঞ্চালন মতে, ভারতীয় পাতটি এই সময় আদি গোণ্ড্‌ওয়ানা মহাদেশের সাথে যুক্ত ছিল।

প্রায় ১৪ কোটি বৎসর আগে ভারতীয় পাত যুক্ত হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া, এ্যান্টার্ক্টিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা। সাথে। ৯ কোটি বৎসর আগে আবার ভারত উপমহাদেশ গোণ্ডোয়ানা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই সময় এই পাতের সাথে মাদাগাস্কার যুক্ত ছিল। পরে মাদাগাস্কার থেকে ভারতীয় পাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রায় ৭ কোটি বৎসর আগে ক্রেটাসিয়াস অধিযুগে  ইন্দো-অস্ট্রেলীয় প্লেট প্রতি বৎসর ১৫ সেন্টিমিটার বেগে ইউরেশীয় প্লেটের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। অন্যদিকে ভারতীয় পাত বাৎসরিক ২০ সেন্টিমিটার গতিতে উত্তর দিকে অগ্রসর হয় এবং সেনোজোয়িক যুগে ইউরেশিয়ার পাতের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় চলে আসে। সেনোজোয়িক যুগের নিওজেন অন্তঃযুগের শুরুর দিকে, ২ কোটি ৩০ লক্ষ ৩০ হাজার বৎসর আগে উভয় পাতের প্রবল সংঘর্ষ হয় এবং দ্রুত হিমালয় পর্বতমালার উত্থান ঘটতে থাকে। নেপাল ও তিব্বতের পার্বত্য উপত্যাকা, মায়ানমারের আরাকান উচ্চভূমি, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপূঞ্জ এবং বঙ্গোপসাগরের আদিরূপ তৈরি হয়ে যায়। এই সংঘর্ষের সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল পামির মালভূমি, কারকোরাম পরবতমালা এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালা।