শিকার এবং আহার : এরা সাধারণত একাকী ঘুরে বেড়ায়। শিকারও করে একা। আকার এবং ওজন কমের কারণে এরা দ্রুত জঙ্গলের ভিতর চলাচল করতে পারে। এরা পানিতে অত্যন্ত দ্রুত সাঁতার কাটতে পারে। এরা সাধারণত মধ্যমাকারের গরু জাতীয় প্রাণী, সকল ধরণের হরিণ, বন্য শুকর, হাতির বাচ্চা শিকার করে। এ ছাড়া ছোট প্রাণীর ভিতর খরগোশ, বনবিড়াল, শিয়াল, বানর, ওরাংওটাং, মাছ ইত্যাদিও শিকার করে।
প্রজনন : রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো।
সাইবেরিয়ার বাঘ
বিভিন্ন
উপ-প্রজাতির বাঘের ভিতর সাইবেরিয়ার বাঘ
(Siberian tiger)
সবচেয়ে
বড়। এর বৈজ্ঞানিক নাম-
Panthera tigris altaica।
১৮৮৪ সালে
এর নামকরণ করেছিলেন-Temminck। এর
অন্যান্য নাম—
আমুর বাঘ, মাঞ্চুরিয়ার বাঘ, আল্টাইক বাঘ,
কোরিয়ান বাঘ, উত্তর-চীনের বাঘ। এদের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র
রাশিয়ার সিখোতে-আলিন (Sikhote-Alin)
পার্বত্য এলাকায়। রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়া অঞ্চলে এক সময়
প্রচুর এই বাঘ ছিল, এই কারণে এই বাঘ সাধারণ মানুষের কাছে
সাইবেরিয়ার বাঘ নামে প্রচলিত। প্রায় ১০,০০০ বৎসর আগে পূর্ব
চীন থেকে সিল্ক রোডের মাধ্যমে এই বাঘের পূর্ব-পুরুষ মধ্য
এশিয়ায় প্রবেশ করেছিল। এরই কিছু অংশ পূর্ব-সাইবেরিয়া অঞ্চলে
ছড়িয়ে পড়েছিল।
দৈহিক গড়ন : এরা চতুস্পদী, পায়ের গড়ন বিড়াল পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো। এদের দেহের সামনের দিকের উর্ধ্বভাগের রঙ লালচে কমলা আর পিছনের দিকের উপরের ভাগের রঙ হলদেটে এবং নিচের দিকে সাদা। এর উপর রয়েছে কালো বর্ণের রেখা। লেজে এই দাগ বলয়ের মতো। পুরুষ বাঘের মাথা ও শরীরের দৈর্ঘ্য ১৯৫ সেন্টিমিটার। বাঘিনীর দৈর্ঘ্য ১৬০ সেন্টিমিটার। পুরুষ বাঘের লেজের দৈর্ঘ্য ৯৯ সেন্টিমিটার। বাঘিনীর লেজের দৈর্ঘ্য ৯১ সেন্টিমিটার। ওজন পুরুষ বাঘ ২২৭ কিলোগ্রাম, বাঘিনী ২০০ কিলোগ্রাম।
শিকার এবং আহার : এরা সাধারণত একাকী ঘুরে বেড়ায়। শিকারও করে একা। এরা সাধারণত সকল ধরনের গরু জাতীয় প্রাণী, সকল ধরনের হরিণ, বন্য শুকর, শিকার করে। এ ছাড়া ছোট প্রাণীর ভিতর খরগোশ, বনবিড়াল, শিয়াল, বানর, মাছ ইত্যাদিও শিকার করে।
প্রজনন
: পুরুষ বাঘ ৪-৫ বৎসরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে। বাঘিনীর
ক্ষেত্রে সময় লাগে ৩-৪ বৎসর। বৎসরের যে কোনো সময় যৌনমিলন হতে পারে।
এই সময় বাঘ ও বাঘিনী ৫-৬ দিন একত্রে বসবাস করে। গর্ভধারণের
পর বাঘিনী একাকী জীবনযাপন শুরু করে। তিন থেকে সাড়ে তিন মাস
গর্ভধারণের পর দুই থেকে ৬টি বাচ্চা প্রসব করে। বাঘিনী ঘন ঘাসের বনে, ঝোপে বা গুহায় লুকিয়ে রাখে। এই সময় বাঘিনী
পরম যত্নে শাবকদের লালন পালন করে।
জন্মের সময় শাবকগুলোর চোখ এবং কান
বন্ধ থাকে। জন্মের ২-৩ সপ্তাহ পর শাবকদের দুধদাঁত পড়ে,
এরপর স্থায়ী দাঁত গজাতে থাকে। ৩-৬ সপ্তাহ পর এরা অল্প অল্প করে মাংস
খেতে শুরু করে। ৫-৬ মাস পর এর মায়ের শিকারের সময় অনুসরণ করে এবং মায়ের
তত্ত্বাবধানে শাবকরা শিকার করা শিখতে থাকে। ২-৩ বৎসর পর্যন্ত শাবকগুলো
মায়ের সাথে বিচরণ করে। এরপর এরা মাতৃ-আশ্রয় ত্যাগ করে নিজেদের স্বাধীন
জীবন শুরু করে। এই সময়ের ভিতর বাঘিনী কোনো বাঘের সাথে মিলিত হয় না।
কাস্পিয়ান
বাঘ
এর সাধারণ নাম কাস্পিয়ান বাঘ (Caspian
tiger)।
এর অন্যান্য নাম— তুরান বাঘ (Turan
tiger)
, হাইসেনিয়ান বাঘ (Hyrcanian tiger)।
এর বৈজ্ঞানিক নাম—
Panthera tigris virgata।
১৮১৫ সালে এর নামকরণ করেন
Illiger।
বর্তমানে এটি একটি বিলুপ্ত উপ-প্রজাতিটি। এই বাঘের
বিচরণক্ষেত্র ছিল— কাস্পিয়ান সাগের পশ্চিম ও দক্ষিণ উপকূল
থেকে তুরস্ক ও ইরান পর্যন্ত। অপর দিকে মধ্য এশিয়া থেকে
চীনের টাকলা মাকান মরুঅঞ্চল পর্যন্ত এরা বসবাস করতো। ধারণা
করা হয়,
প্রায়
১০,০০০ বৎসর আগে পূর্ব চীন থেকে সিল্ক রোডের মাধ্যমে এই
বাঘের পূর্ব-পুরুষ মধ্য এশিয়ায় প্রবেশ করেছিল।
দৈহিক গড়ন :
এদের
দেহের উর্ধ্বভাগের রঙ লালচে ছিল কমলা এবং নিচের দিকে সাদা। এর উপর ছিল
কালো বর্ণের রেখা। লেজে এই দাগ বলয়ের মতো। আকারের বিচারে ছিল
সাইবেরিয়ার বাঘের চেয় সামান্য ছোটো।
অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের বিচারে কাস্পিয়ান বাঘ সাইবেরিয়া
বাঘের অনুরূপ ছিল।
দক্ষিণ
চীনের বাঘ
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে এই বাঘ পাওয়া যায়। এই কারণের এর সাধারণ
নাম—
দক্ষিণ চীনের বাঘ (South China tiger)।
এর বৈজ্ঞানিক নাম—
Panthera tigris amoyensis।
১৯০৫ সালে এর নামকরণ করেছিলেন
Hilzheime।
এর অন্যান্য নাম আময় বাঘ (Amoy)
বা জিয়ামেন বাঘ (Xiamen
tiger)।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্থ পর্যন্ত হংকংসহ সমগ্র দক্ষিণ চীন।
বর্তমানে দক্ষিণ পার্বত্য এলাকায় কিছু বাঘ দেখা যায়।
পৃথিবীর ১০টি বিপন্ন প্রাণীর ভিতর এই বাঘকে বিবেচনা করা হয়।
দৈহিক গড়ন : এরা চতুস্পদী, পায়ের গড়ন বিড়াল পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো। এদের দেহের সামনের দিকের উর্ধ্বভাগের রঙ লালচে কমলা আর পিছনের দিকের উপরের ভাগের রঙ হলদেটে এবং নিচের দিকে সাদা। এর উপর রয়েছে কালো বর্ণের রেখা। তবে বাংলা বাঘের চেয়ে এই দাগ বেশ ছোটো। লেজে এই দাগ বলয়ের মতো। দৈহিক গড়নের বিচারে বাংলা বাঘ বা সাইবেরিয়ার বাঘের চেয়ে বেশ ছোট। পুরুষ বাঘের লেজসহ দৈর্ঘ্য ২২০ সেন্টিমিটার। ওজন পুরুষ বাঘ ১২৫-১৭৫ কিলোগ্রাম, বাঘিনী ১০০-১২০ কিলোগ্রাম।
শিকার এবং আহার : এরা সাধারণত একাকী ঘুরে বেড়ায়। শিকারও করে একা। এরা সাধারণত মাঝারি আকারের গরু জাতীয় প্রাণী, সকল ধরনের হরিণ ও ছাগল জাতীয় প্রাণী এবং বন্য শুকর শিকার করে। এ ছাড়া ছোট প্রাণীর ভিতর খরগোশ, বনবিড়াল, শিয়াল, বানর, মাছ, পতঙ্গ ইত্যাদিও শিকার করে। এরা ঘন্টার পর ঘন্টা শিকারকে অনুসরণ করে। হাল্কা শরীর এবং আকারে ছোটো হওয়ার জন্য বেশ দ্রুত দৌড়াতে পারে। এদের গড় দৌড়ের গতি ৩৫ মাইল/ঘণ্টা। কিন্তু এই গতিতে এরা দীর্ঘ সময় দৌড়াতে পারে না। সে কারণে দ্রুত গতির হরিণ অনেক ক্ষেত্রে রক্ষা পায়। অন্যান্য বাঘের চেয়ে মানুষ খেকো হিসাবে এই বাঘের দুর্নাম বেশি।