পর্যায়
প্রকৃতি
সূচি
মুখবন্ধ
বাংলা সাহিত্যের সহস্রাধিক বৎসরের গৌরবান্বিত মহাসভায়,
যে কয়েকজন তাঁদের স্বনামকে অতিক্রম করে মহিমান্বিত হয়েছেন, নজরুল তাঁদেরই একজন।
বিশ্বকবি বলতে রবীন্দ্রনাথ, রায়গুণাকর বলতে ভারতচন্দ্র, সাহিত্যসম্রাট বলতে
বঙ্কিমচন্দ্র, পল্লীকবি বলতে জসিমুদ্দীন- এমনি আরও অনেকের নাম যেমন আমাদের মানসলোকে
উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। তেমনি 'বিদ্রোহী কবি' বলতে সগৌরবে মনে পড়ে যায়- একমাত্র নাম 'কাজী
নজরুল ইসলাম'। অথচ পরম কুণ্ঠার সাথেই বলতে হয়, নজরুলের সৃষ্টিকর্ম এবং জীবনাচারের
বিচারে 'বিদ্রোহী কবি' অভিধাটি যথেষ্ঠ নয়। আমাদের এই সাড়ম্বরে উচ্চারিত 'বিদ্রোহী
কবি' সম্ভাষণের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়- তাঁর অসাধারণ সঙ্গীত প্রতিভা, পরম
অসাম্প্রদায়িক মানবহিতৈষী সত্তা, কিম্বা সর্বাঙ্গসুন্দর প্রেমের কবি-পরিচয়, এমনি
আরও আরও অনেক কিছু।
বর্ধমানের ক্ষুদ্র লোক-নাট্যগীতি লেটো গানের মধ্য দিয়ে তাঁর সৃষ্টি-সত্তার
আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল শৈশব-কৈশোরের সন্ধিক্ষণে। তারপর আমরা পাই গ্রামছাড়া সহায়সম্বলহীন
এক বালকের ছন্নছাড়া জীবনের পরিভ্রমণের গল্পকথা। সে এক 'সৃষ্টি সুখের উল্লাস'-হীন
অধ্যায়। তারপর তাঁর সৃষ্টির দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো- বাংলা থেকে বহুদূরে সৈনিকবেশে
করাচির সেনানিবাসে। সেখানেই জন্ম নিলো তাঁর নতুন সৃষ্টি সত্তা, সূচনা হলো এক নূতন
বিস্ময়কর অধ্যায়ের। সে অধ্যায়ে দেখি তাঁর এক হাতে বাঁশের বাঁশী, আর হাতে রণতূর্য।
প্রবাসী-সৈনিক জীবনের এই সূচনা ছিল তাঁর সৃষ্টির দ্বিতীয় অধ্যায়ের কুঁড়ি-দশা।
প্রবাস থেকে পত্রযোগে তিনি হানা দিলেন বঙ্গের বাংলা পত্রিকা জগতে। সে সব রচনার
বেশিরভাগই অপাংক্তেয় বলে আশ্রয় নিয়েছিল আবর্জনার ঝুড়িতে। সে সবের মধ্যে কিছু টিকে
গিয়েছিল সেকালের পত্রিকাসমূহের সম্পাদকদের বদান্যতায়।
অবশেষে সৈনিকজীবনের অবসান হলো, আর শুরু হলো- সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাব্য ও সঙ্গীত।
প্রথম পর্বের সৃষ্টি-অন্তে যেন কুম্ভকর্ণ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পল্টন-ফেরত নজরুল
যেনো কোনো এক অজানিত যাদুস্পর্শে জেগে উঠেছিলেন এবং জাগিয়ে দিয়েছিলেন। দ্রোহের
দাবানল জ্বলে উঠেছিল 'বিদ্রোহী'-কাব্য বিস্ফোরণে। সেই তাঁর শুরু। নানা বৈচিত্র্যে
ভরিয়ে দিয়েছিলেন বাংলা কাব্য-সঙ্গীত-জগত। তারপর আকস্মিকভাবে এলো বিদায় নেবার পালা।
দেহ টিকে রইলো বটে, কিন্তু সৃষ্টির সুখের উল্লাস ধীরে ধীরে নিষ্প্রভ হতে হতে
অন্ধকারে ডুবে গেল। পড়ে রইল তাঁর ফেলে যাওয়া আলোক-দীপিকার জ্যোতি-ঐশ্বরয। যা চিরায়ত
সৃষ্টি হয়ে আজও আমদের বিমুগ্ধ-বিস্ময়ে অভিভূত করে চলেছে।
যদি নজরুল আর কিছু না লিখে শুধুই গানই রচনা করতেন, তাহলেও তিনি চিরায়ত সঙ্গীত
স্রষ্টা হিসেবে বাঙালির মনে স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল থাকতেন।
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ডিসেম্বর মাসের শেষে রচিত
বিদ্রোহী কবিতার মাধ্যমে নজরুল খ্যাতির শীর্ষে উঠে গিয়েছিলেন এবং এই সূত্রে তিনি হয়ে
উঠেছিলেন 'বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম'। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে
প্রকাশিত হয়েছিল নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অগ্নি-বীণা'। তখন তিনি 'বিদ্রোহী কবি'
অভিধায় প্রতিষ্ঠিত। পরে এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত দুটি কবিতায় তিনি সুরারোপ করে গানে
রূপান্তরিত করেছিলেন। এরপর কবিতা ও গানের সংকলন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল 'দোলন চাঁপা'
(অক্টোবর ১৯২৩), 'বিষের বাঁশী' (আগষ্ট ১৯২৪), 'ভাঙার গান' (আগষ্ট ১৯২৪), 'চিত্তনামা'
(আগষ্ট ১৯২৫), 'ছায়ানট' (সেপ্টেম্বর ১৯২৫), 'সাম্যবাদী' (ডিসেম্বর ১৯২৫), 'পূবের
হাওয়া' (অক্টোবর ১৯২৫), 'সর্বহারা' (অক্টোবর ১৯২৫), 'ঝিঙেফুল' (এপ্রিল ১৯২৬), 'সর্বাহারা'
(অক্টোবর ১৯২৬), 'ফণীমনসা' (জুলাই ১৯২৭)ও 'সিন্ধু-হিন্দোল' (জুলাই ১৯২৭) ইত্যাদি।
নজরুলের প্রথম সঙ্গীত সংকলন হিসেবে 'বুলবুল' প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের
নভেম্বর মাসে। এরপর থেকে বিভিন্ন সঙ্গীত সঙ্কলনে, স্বরলিপি গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে
নজরুলের বহু গান। এছাড়াও পাওয়া গেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অগ্রন্থিত গান। সকল গানের
সংকলন হিসেবে প্রামণিক গ্রন্থ হিসেবে নজরুল ইনস্টিটিউট প্রকাশ করেছিল 'নজরুল সঙ্গীত
সংগ্রহ'। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে। এর তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮
খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। অল্পবিস্তর ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে এই
গ্রন্থটিকে নজরুলের গানের একটি আদর্শ সঙ্গীত-সংকলন হিসেবে মান্য করা হয়ে থাকে।
নজরুল সঙ্গীতের পর্যায়: প্রকৃতি
যে কোন বাণী-প্রধান গানের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়, গানের
ভাবগত বিষয় এবং সুরের প্রকৃতি অনুসারে। সাধারণভাবে এই দুটি ভাগকে বলা হয় বিষয়াঙ্গ ও
সুরাঙ্গ।এই গ্রন্থের মূল আলোচ্য বিষয়।
মানুষ প্রকৃতির সন্তান। এই প্রকৃতি মানুষের কাছে নমস্য দেবতা নয়। মানুষের সাথে
প্রকৃতির সম্পর্ক কোমল-কঠোরে মেশানো মাতা-সন্তানের মতো। প্রকৃতি মাতার কোলে বসেই,
মানুষ তাকে শাসন করে, কখনো বা সে নিজেই শাসিত হয়। ধর্মতত্ত্ব বলে মানুষ স্রষ্টার
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। ধর্মতত্ত্ব ও প্রকৃতিবাদী-তত্ত্বের বিচারে ততটা সাংঘর্ষিক নয়।
ধর্মতত্ত্বের বিচারে প্রকৃতি স্রষ্টার সৃষ্টি। আর স্রষ্টার অমোঘ বিধিতে বাঁধা
প্রকৃতির ক্রমবির্তনের ধারায় জীবের সৃষ্টির। জীবজগতে মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি-
সৃজনশীল ক্ষমতার বিচারে। বিজ্ঞান এই প্রকৃতিতে বিচার করে তথ্য-উপাত্তের বিচারে। এই
বিচারের মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানী প্রাকৃতিক বিধিকে প্রকাশ করেন মাত্র। কবি প্রপঞ্চময় এই
জগতের রূপান্তরকে কল্পবাস্তবের চোখে দেখেন। এই দেখার ভিতরে রয়েছে তার বাস্তব-সচেতনতা
এবং তার কল্পজগতের অনুভব। এই দুয়ের মিশ্রণে সৃজনশীল কবির জগৎ হয়ে ওঠে নান্দনিক ও
শৈল্পিক। কবির এই শিল্পকর্ম যখন সুর, ছন্দ ও বাণীর মেলবন্ধনে সুসমন্বিত হয়ে
উপস্থাপিত হয়, তখন তা গীত হয়ে ওঠে। পৃথিবীর তাবৎ গীত সৃষ্টির এই হলো মূল রহস্য।
কাজী নজরুলে ইসলামে তিনসহস্রাধিক গানের সংকলনের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে প্রকৃতির গান।
এ সকল গানের বিষয়াঙ্গের দিকে একটু সৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, ভাবের বিচারে প্রকৃতি
পর্যায়ের সব গান একই রকম নয়। তাঁর গানে রয়েছে প্রকৃতির বস্তুজগতের নানা উপকরণ। এর
ভিতরে রয়েছে- মহাজগতিক নক্ষত্র, পার্থিব উপকরণ, ঋতুবৈচিত্র্য,ফুল, নদী, ইত্যাদি।
কোনো কোনো গানে পাওয়া যায়- বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য এবং স্বদেশে প্রেমের যুগপৎ অনুভব।
কখনো ঋতুবৈচিত্র্যের ধারায় প্রকৃতির সাথে মিশে গেছে নরনারীর শৃঙ্গারধর্মী
মিলন-বিরহের বিমূর্ত অনুভব। সব মিলিয়ে নজরুলের প্রকৃতি পর্যায়ের গানের ক্ষেত্রটি হয়ে
উঠেছে বিচিত্র বৈভবে সমৃদ্ধ।
প্রেক্ষাপটের বিচারে, গানগুলোকে সাজাতে গেলে- অনিবার্যভাবে চলে আসে নাটক,
গীতিআলেখ্য, চলচ্চিত্র, অনুষ্ঠান ইত্যাদি। প্রেক্ষপটের বিচারে এসকল গানকে নাটকের
গান, চলচ্চিত্রের গান, আনুষ্ঠানিক গান ইত্যাদি বলা যায়। কিন্তু এর দ্বারা গানের
বিষয় নির্ধারণ করা যায় না। কারণ নাটক বা চলচ্চিত্রের গান হতে পারে- প্রেমের, ভক্তির,
প্রকৃতির ইত্যাদি। তাই প্রকৃতি পর্যায়ের গানগুলোর সাথে বিশেষ নির্দেশনা হিসেবে নাটক,
চলচ্চিত্র ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে প্রেক্ষাপটের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে-
রচনার সময়।
মানুষ প্রকৃতির সন্তান। এই
প্রকৃতি মানুষের কাছে নমস্য দেবতা নয়। মানুষের সাথে
প্রকৃতির সম্পর্ক কোমল-কঠোরে মেশানো মাতা-সন্তানের মতো। প্রকৃতি মাতার কোলে বসেই,
মানুষ তাকে শাসন করে, কখনো বা সে নিজেই শাসিত হয়। ধর্মতত্ত্ব বলে মানুষ স্রষ্টার
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। ধর্মতত্ত্ব ও প্রকৃতিবাদী-তত্ত্বের বিচারে ততটা সাংঘর্ষিক নয়।
ধর্মতত্ত্বের বিচারে প্রকৃতি স্রষ্টার সৃষ্টি। আর স্রষ্টার অমোঘ বিধিতে বাঁধা
প্রকৃতির ক্রমবির্তনের ধারায় জীবের সৃষ্টির। জীবজগতে মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি-
সৃজনশীল ক্ষমতার বিচারে। বিজ্ঞান এই প্রকৃতিতে বিচার করে তথ্য-উপাত্তের বিচারে। এই
বিচারের মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানী প্রাকৃতিক বিধিকে প্রকাশ করে মাত্র। কবি কাছে
প্রপঞ্চময় এই জগতে রূপান্তরকে কল্পবাস্তবের চোখে দেখে। এই দেখার ভিতরে রয়েছে তার
বাস্তব-সচেতনতা এবং তার কল্পজগতের অনুভব। এই দুয়ের মিশ্রণে সৃজনশীল কবির জগৎ হয়ে ওঠে
নান্দনিক ও শৈল্পিক। কবির এই শিল্পকর্ম যখন সুর, ছন্দ ও বাণীর মেলবন্ধনে সুসমন্বিত
হয়ে উপস্থাপিত হয়, তাকে গীত হয়ে ওঠে। পৃথিবীর তাবৎ গীত সৃষ্টির এই হলো মূল রহস্য।
কাজী নজরুলে ইসলামে তিনসহস্রাধিক গানের সংকলনের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে প্রকৃতির গান।
এ সকল গানের বিষয়াঙ্গের দিকে একটু সৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, ভাবের বিচারে
প্রকৃতি পর্যায়ের সব গান একই রকম নয়। তাঁর গানে রয়েছে প্রকৃতির বস্তুজগতের নানা
উপকরণ। এর ভিতরে রয়েছে- মহাজগতিক নক্ষত্র, পার্থিব উপকরণ, ঋতুবৈচিত্র্য হিসেবে রয়েছে
বাংলার ফুল, নদী, ষড়ঋতু ইত্যাদি। কোনো কোনো গানে পাওয়া যায়- বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য
এবং স্বদেশে প্রেমের যুগপৎ অনুভব। কখনো ঋতুবৈচিত্র্যের ধারায় প্রকৃতির সাথে মিশে গেছে
নরনারীর শৃঙ্গারধর্মী মিলন-বিরহের বিমূর্ত অনুভব। সব মিলিয়ে নজরুলের প্রকৃতি
পর্যায়ের গানের ক্ষেত্রটি হয়ে উঠেছে বিচিত্র বৈভবে সমৃদ্ধ। সার্বিক ভাবে তাঁর
গানগুলোকে বিচার করতে হলে- উপবিভাগ করাটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
প্রেক্ষপটের বিচারে, গানগুলোকে সাজাতে গেলে- অনিবার্যভাবে চলে আসে নাটক, গীতিআলেখ্য,
চলচ্চিত্র ইত্যাদি। প্রেক্ষপটের বিচারে এসকল গানকে বলা যায়- নাটকের গাম,
চলচ্চিত্রের গান। কিন্তু এর দ্বারা গানের বিষয় নির্ধরণ করা যায় না। কারণ নাটক বা
চলচ্চিত্রের গান হতে পারে- প্রেমের, ভক্তির, প্রকৃতির ইত্যাদি। এই সকল গানের সাথে
বিশেষ নির্দেশনা হিসেবে নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদিকে প্রেক্ষাপট হিসেবে রেখে,
প্রকৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
নজরুল ইসলাম তাঁর রচিত বা অন্যের রচিত নাটকে, বেশ কিছু গানে প্রকৃতি পর্যায়ের গান
যুক্ত করেছিলেন। প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত এ সকল নাটকের গানগুলোর বিষয়াঙ্গ হিসেবে
প্রকৃতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই সকল গানে প্রকৃতির সাথে পাওয়া যায়,
মানব-প্রেম, ভক্তি ইত্যাদি
প্রকৃতি: জাগতিক, সাধারণ,
স্বদেশ
এই জাতীয় গানে বাংলার
অপরূপ সৌন্দর্য এবং দেশমাতার ভক্তি একাকার হয়ে গেছে। জীবনানন্দের 'রূপসী বাংলা'র সাথে নজরুলের গানের প্রধান পার্থক্য হলো- নজরুল শুধু বাংলার রূপ-রস-গন্ধের সৌন্দর্যের বিচারে ‘একি অপরূপ বাংলা’ বলেন নি। তাঁর গানে পাওয়া যায়- গ্রামীণ বাংলার জনজীবনের আনন্দ-বেদনা, উৎসব, সঙ্গীত ইত্যাদির অপূর্ব বাণীচিত্র। সব মিলেয়ে নজরুলের বাংলা অপরূপা মাতৃরূপিণী। ফলে এই জাতীয় গান হয়ে উঠেছে- স্বদেশ তথা জন্মভূমি হয়ে উঠেছে স্বর্গাদপী গরীয়সী।
প্রকৃতি ও স্বদেশ
এই জাতীয় গানে বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যকে দেশমাতার সাথে গভীরভাবে মিশে আছে।
জীবনানন্দের 'রূপসী বাংলা'র সাথে নজরুলের গানের প্রধান পার্থক্য হলো- নজরুল
শুধু বাংলার রূপ-রস-গন্ধে সৌন্দর্যের বিচারে একি অপরূপ বাংলা বলেন নি। তাঁর
গানে পাওয়া যায়- গ্রামীণ বাংলার জনজীবনের আনন্দ-বেদনা, উৎসব, সঙ্গীত
ইত্যাদির সাথে প্রকৃতির মিলন-সৌন্দর্য। সব মিলেয়ে নজরুলের বাংলা অপরূপা
মাতৃরূপিণী। ফলে এই জাতীয় গান হয়ে উঠেছে- স্বদেশ তথা জন্মভূমি হয়ে উঠেছে
স্বর্গাদপী গরীয়সী।
- এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় [তথ্য]
- ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে ( আমার দেশের মাটি) [তথ্য]
- নমঃ নমঃ নমো বাংলাদেশ মম [তথ্য]
- শ্যামলা-বরণ বাংলা মায়ের [তথ্য]
এর ভিতরে 'এই আমাদের বাংলাদেশ' গানটি নাট্যকার যোগেশ চৌধুরীর 'প্রতাপাদিত্য' নাটকের জন্য রচিত হয়েছিল। তাই গানটি- প্রৃকৃতি পর্যায়ের নাট্যগীতি অংশে আলোচনা করা হয়েছে।
সাধারণ:
এই শ্রেণির গানে প্রকৃতি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে উপস্থাপন করে না। প্রকৃতির একটি
সার্বিক রূপ পাওয়া যায়। সাধারণ শ্রেণির এই গানের দুটি রূপ রয়েছে। এর এক ধরনের গানে
শুধুই পাওয়া যায় শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা। অপর ধরনের গানে রয়েছে- রূপসী বাংলার
সাধারণ রূপ এবং একই সাথে স্বদেশ প্রেম।
-
সাধারণ সৌন্দর্য
প্রকৃতিক সৌন্দর্য-সন্দর্শনে মুগ্ধ কবি নানা রূপকতার মধ্য দিয়ে প্রকৃতির
রূপবৈচিত্র্যকে উপস্থাপন করেছেন এই জাতীয় গানকে। এ সকল গানের সৌন্দর্যেকে তিনি
সৌন্দর্য-দেবীর আসনে বসিয়েছেন তিনি। নেপথ্যে সৌন্দর্যের অধিকারিণী হয়ে এ সকল
গানের রূপবৈচিত্র্যকে নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। এই দেবী ভক্তি বা পূজার নয়- যেন
মুগ্ধতার একটি রূপকল্প মাত্র।
প্রকৃতি
-
মহাজাগতিক: পৃথিবীরে
বাইরের মহাকাশীয় উপকরণভিত্তিক গানকে এই উপবিভাগে স্থান দেওয়া হয়েছে। যেমন-
- আমি গগন গহনে সন্ধ্যা তারা
[তথ্য]
- আমি প্রভাতী তারা পূর্বাচলে [তথ্য]
- আসে রজনী সন্ধ্যামণির প্রদীপ জ্বলে [তথ্য]
- এলো ঐ পূর্ণ শশী ফুল-জাগানো [তথ্য]
- ওগো চৈতী রাতে চাঁদ, যেয়ো না [তথ্য]
- নিশুতি রাতের শশী গো [তথ্য]
- জাগতিক: নজরুলের প্রকৃতি পর্যায়ের জাগতিক উপপর্যয়ের রয়েছে- মূলত
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। এর ভিতরে রয়েছে বিমূর্ত প্রেক্ষাপট হিসেবে রয়েছে
প্রভাত, সন্ধ্যা। মূর্ত সত্তা হিসেবে পাওয়া যায়, নদী, সাগর, ঝরনা, পতঙ্গ,
ঘূর্ণিবায়ু। কিছু গান রয়েছে যেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে কোনো পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত
করা যায়। কিন্তু অন্যান্য সকল রূপ এতে মিশে থাকে। এগানগুলোকে অনির্দেশিত
শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে। নিচে উপপর্যায় ভিত্তিতে গানগুলোকে উল্লেখ করা হলো।
- অনির্দেশিত: এই শ্রেণির গানে পাওয়া যায়, সার্বিক প্রকৃতির রূপ। মূলত
প্রকৃতি সাধারণ রূপ এই সকল গানে পাওয়া যায়। যেমন-
- আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ
[তথ্য]
- মৃদুল বায়ে বকুল ছায়ে [তথ্য]
- বিমূর্ত: যার ত্রিমাত্রিক জগতে বস্তুবাচকরূপে উপস্থাপন করা যায় না।
- প্রভাত:
- ঊষা এলো চুপি চুপি্ [তথ্য]
- জাগো জাগো পোহালো রাতি [তথ্য]
- মৃদুল মন্দে মঞ্জুল ছন্দে [তথ্য]
- সন্ধ্যা
- আঁধারের এলোকেশ ছড়িয়ে এলে [তথ্য]
- বেলা পড়ে এলো জল্কে সই চল্ চল্
[তথ্য]
- জ্যোৎস্না
- চাঁদের পিয়ালাতে আজি জোছনা সিরাজি ঝর
[তথ্য]
- চাঁদের নেশা লেগে ঢুলে [তথ্য]
- মূর্ত সত্তা: ত্রিমাত্রিক জগতে যে সকল সত্তার বস্তুগত রূপ আছে
- ঘূর্ণি বাতাস
- শুকনো পাতার নূপুর পায়ে [তথ্য]
- বনভূমি
- প্রণমি তোমায় বনদেবতা [তথ্য]
- পতঙ্গ:
- প্রজাপতি! প্রজাপতি! কোথায় পেলে ভাই [তথ্য]
- প্রাণী
- কোন্ বন হতে করেছ চুরি হরিণ-আঁখি [তথ্য]
- বন-হরিণীরে তব বাঁকা আঁখির [তথ্য]
- বন-বিহারিণী চঞ্চল হরিণী
[তথ্য]
- বনের হরিণ আয় রে বনের হরিণ আয় [তথ্য]
- পুষ্প: কোনো বিশেষ ফুলের বন্দনা এই গানের মুখ্য বিষয়।
- আমি পথ-মঞ্জরি ফুটেছি আঁধার রাতে [তথ্য]
- আমি সন্ধ্যামালতী বনছায়া অঞ্চলে [তথ্য]
- আয় বনফুল ডাকিছে মলয় [তথ্য]
- ওরে শুভ্রবসনা রজনীগন্ধা [তথ্য]
- গুণ্ঠন খোলো পারুল মঞ্জরি [তথ্য]
- ঘুমায়েছে ফুল পথের ধূলায় [তথ্য]
- দোপাটী লো, লো করবী [তথ্য]
- চন্দ্রমল্লিকা,চন্দ্রমল্লিকা (চাঁদের দেশের) [তথ্য]
- বনফুলে তুমি মঞ্জরী গো [তথ্য]
- বিকাল বেলার ভূঁইচাঁপা গো সকাল বেলার যুঁই [তথ্য]
- ম্লান আলোকে ফুটলি কেন [তথ্য]
- পুষ্প ও ভ্রমর:
- এলো ফুলের মহলে ভ্রমরা গুন্গুনিয়ে [তথ্য]
- সাগর/নদী/ঝর্না: কোনো বিশেষ নদীর উদ্দেশ্যে রচিত গান। যেমন-
- উপল নুড়ির কাঁকন চুড়ি বাজ [তথ্য]
- এসো এসো পাহাড়ি ঝর্না [তথ্য]
- এসো এসো বন ঝরনা [তথ্য]
- ও কূল-ভাঙা নদী রে [তথ্য]
- খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগর জলে [তথ্য]
- চলে ঐ আনন্দে ঝর্না রানী [তথ্য]
- ছন্দের বন্যা হরিণী অরণ্যা [তথ্য]
- পদ্মা-মেঘনা-বুড়িগঙ্গা [তথ্য]
- সুদূর সিন্ধুর ছন্দ উতল [তথ্য]
- ঋতুবৈচিত্র্য: নজরুলের ঋতু ভিত্তিক গানগুলোতে ঋতুর বর্ণনা পাওয়া যায় নানাভাবে।
বিষয়-বৈশিষ্ট্যের বিচারে এ গানগুলোকে সাধারণভাবে ভাগ করা যায়- ঋতুর নামে।
যেমন- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। ঋতুভিত্তিক গানের বিচার
করা হয়, প্রাকৃতিক ঘটনার উপর নির্ভর করে। যেমন- মেঘ, বজ্র, কদম, কেয়া
ইত্যাদি বর্ষার প্রতীক। যদিও অন্য ঋতুতেও বৃষ্টি হয়। কিন্তু বৃষ্টি যেন
বর্ষার নিজস্ব সম্পদ। কিন্তু মেঘ শুধুই বর্ষার নয়। বৈশাখি মেঘ, শরতের মেঘ
আর বর্ষার মেঘ এক নয়। ঋতুভিত্তিক গানের ক্ষেত্রের প্রাকৃতিক উপকরণগুলোকে
একটি বিশেষ বিবেচনায় বিচার করতেই হয়। কোনো কোনো গানে একাধিক ঋতুর সাধারণ
বর্ণনা পাওয়া যায়।
কোনো কোনো ঋতুভাবনার গানের ঋতুটা হয়ে ওঠে প্রেক্ষাপট। কখনো অন্য বিষয়ের
পরিপূরক। এই
প্রেক্ষাপটে বর্ষার গানের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে- শৃঙ্গার-রসাশ্রিত মিলনবিরহের গান। এককথায়
প্রেমের গান। এদের সাধারণ নাম হতে পারে- প্রকৃতি ও প্রেম।
কোনো কোনো গান সুরাঙ্গ প্রকাশ করার জন্য রচিত হয়েছিল। এ সকল গানের বাণীতে উপস্থাপিত
ঋতুকে হাজির করা হয়েছে সুর প্রকাশের অবলম্বন হিসেবে। প্রাথমিকভাবে নজরুলের এই
জাতীয় গানের সাধারণ পরিচয় হলো- রাগাশ্রয়ী। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের
রাগাশ্রয়ী গানের প্রধান ধারার গানগুলোর বাণীকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে 'বন্দিশ'
বলা হয়। নজরুলের এই
জাতীয় গানে ঋতু থাকে, রাগ প্রকাশের অবলম্বন হিসেবে। অনেকটা খেয়াল গানের
বন্দিশের মতো। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রধান ধারার গান হিসেবে বিবেচনা করা হয়-
ধ্রুপদ এবং খেয়াল। অন্যদিকে আধা-শাস্ত্রীয় গান হিসেবে বিবেচনা করা হয়- টপ্পা,
ঠুমরি, গজল ইত্যাদিকে। সেই বিবেচনায় কিছু গানকে বিষয়াঙ্গের বিচারে
প্রকৃতি পর্যায়ের ঋতুভিত্তিক গান হিসেবে উল্লেখ করা হলেও সুরের বিচারে খেয়ালাঙ্গ,
ধ্রুপদাঙ্গ, টপ্পাঙ্গ ইত্যাদি বলা হয়। কিন্তু শুধুই বিষয়াঙ্গের বিচারে
গানগুলো প্রকৃতির (ঋতু) গান।
একই ভাবে কাজরি, হোরি ইত্যাদি গানের সুরের একটি নিজস্ব ঢং রয়েছে। এই জাতীয়
গানের মুখ্য বিষয় থাকে রাধা-কৃষ্ণের লীলা-কেন্দ্রিক উৎসবের গান। বিষয়াঙ্গের
বিচারে এই জাতীয় গানে পাওয়া যায় ভক্তিরস। কিন্তু এতে মিশে থাকে বর্ষা ও
বসন্তের রূপ। এই জাতীয় গানের সাধারণ রূপ হিসেবে বলা যেতে পারে- ভক্তি ও
প্রকৃতি।
এ সকল গানের বাইরে ঋতুভিত্তিক কিছু সাধারণ গান পাওয়া যায়। ষড়ঋতুর মধ্য
দিয়ে বাংলার ঋতু-বৈচিত্র্যকে প্রকাশ করা হয় এই জাতীয় গানে। এ গানগুলোকে
ঋতু-পর্যায়ের সাধারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
বিষয় বৈচিত্র্যের বিচারে নজরুলে ঋতু ভাবনার গানগুলোকে দুটি ভাগ করা যায়।
ভাগ দুটি হলো- সাধারণ ঋতুভাবনার গান ও মিশ্র ঋতুভাবনার গান।
সাধারণ ঋতু ভাবনার গান
সাধারণ ঋতুভাবনার গানগুলোতে পাওয়া যায়, প্রতিটি ঋতুর নিটল চিত্র। কোনো
কোনো সাধারণ ঋতু ভাবনার গানে সরাসরি ঋতুর নামের পরিবর্তে ওই ঋতুর মাসের নাম
ও ঋতুবৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। ষড়ঋতুর বিচারে এই গানগুলো ৬টি ঋতুর নামে চিহ্নিত
করা যায়। যেমন- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত।
গ্রীষ্ম:
- অম্বরে মেঘ-মৃদঙ্ বাজে [তথ্য]
- মেঘ-বিহীন খর বৈশাখে [তথ্য]
বর্ষা:
- অধীর অম্বরে গুরু গরজন [তথ্য]
- আসিবে তুমি, জানি প্রিয় [তথ্য]
- আসিলে এ ভাঙা ঘরে [তথ্য]
- এলো এলো রে বৈশাখী ঝড় [তথ্য]
- এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা [তথ্য]
-
ঐ নীল গগনের নয়ন-পাতায় [তথ্য]
ও মেঘের দেশের মেয়ে [তথ্য]
ওগো এলে কি শ্যামল পিয়া [তথ্য]
ঝর ঝর ঝরে শাওন ধারা [তথ্য]
কদম কেশর পড়ল ঝরি [তথ্য]
কৃষ্ণা নিশীথ নাচে [তথ্য]
গগনে খেলায় সাপ বরষা বেদিনী [তথ্য]
গরজে গম্ভীর গগনে কম্বু [তথ্য]
ঘোর ঘনঘটা ছাইল গগন [তথ্য]
খেলে চঞ্চলা বরষা বালিকা [তথ্য]
চঞ্চল শ্যামল এলো গগনে [তথ্য]
চমকে চপলা মেঘে মগন গগন [তথ্য]
চম্পা বনে বেণু বাজে [তথ্য]
ছড়ায়ে বৃষ্টির বেলফুল [তথ্য]
জাগো মালবিকা ! জাগো মালবিকা [তথ্য]
ঝিলের জলে কে ভাসালো [তথ্য]
নীপ-শাখে বাঁধো ঝুলনিয়া [তথ্য]
বরষা ঋতু এল এল বিজয়ীর সাজে
[তথ্য]
বরষা ঐ এলো বরষা [তথ্য]
বাঁশীতে সুর শুনিয়ে
[তথ্য]
বাজে মৃদঙ্গ বরষার ঐ [তথ্য]
মেঘলামতীর ধারা জলে করো স্নান [তথ্য]
যায় ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে [তথ্য]
রিম্ ঝিম্ রিম ঝিম্ বরষা এলো [তথ্য]
রিমি ঝিম্ রিমি ঝিম্ ঐ নামিল দেয়া [তথ্য]
রিমিঝিমি রিমিঝিমি বারিধারা বরষে (শাওন ঘোর) [তথ্য]
রুম্ ঝুম্ ঝুম্ বাদল নূপুর বোলে
[তথ্য]
রুম্ ঝুম্ বাদল আজি বরষে [নজরুল
ইসলাম] [তথ্য]
রুম্ ঝুম্ রুম্ ঝুম্ কে এলে নূপুর পায় [তথ্য]
রুমু রুমু ঝুমু রুমু ঝুমু বাজে নূপুর [তথ্য]
শরৎ:
- আজ শরতে আনন্দ ধরে না ধরণীতে[তথ্য]
- এলো ঐ শারদ রাতি [তথ্য]
- এসো শারদ প্রাতের পথিক [তথ্য]
- ভোরে ঝিলের জলে [তথ্য]
- রুম্ ঝুম্ ঝুম্ঝুম্ নূপুর বোলে [তথ্য]
হেমন্ত:
- উত্তরীয় লুটায় আমার [তথ্য]
- সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায় [তথ্য]
- হেমন্তিকা এসো এসো [তথ্য]
শীত:
- নতুন খেজুর রস এনেছি [তথ্য]
- পউষ এলো গো! [তথ্য]
বসন্ত:
মিশ্রভাবাশ্রিত
ঋতুবর্ণন:: এই জাতীয় ঋতুভাবনার গানের ঋতুটা হয়ে ওঠে প্রেক্ষাপট। এই
প্রেক্ষাপটে রচিত গানগুলোকে কয়েকটি ভাগ করা যায়। যেমন- প্রকৃতি ও প্রেম,
প্রকৃতি ও ভক্তি, প্রকৃতি ও স্বদেশ ইত্যাদি।
প্রকৃতি ও
প্রেম
জীবজগতের সবাই প্রকৃতির সন্তান। তাই প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে,
জীবজগতে তার প্রভাব পড়ে নানা ভাবে। প্রকৃতি তার প্রজাতিসমূহের বিলুপ্তি
থেকে রক্ষা করে চলছে প্রজনন প্রক্রিয়ায়। জীবের জীবনচক্রে প্রজনন রক্ষার অধ্যায়
হলো যৌবন। বিপরীত লিঙ্গের আসঙ্গ লীপ্সায় এই অধ্যায় হয়ে জীবজগতের অন্যতম আনন্দময়।
বনে বনে বিকশিত পুষ্পরাশি, পক্ষীকুলের যৌবনের আহ্বান; ময়ূর-ময়ূরী, ব্যাঙের
ডাক, ঝিঁঝি পোকার ডাক ইত্যাদি সবই যৌবনের আহ্বান। নরনারী সহজাত সঙ্গলাভের
আকাঙ্ক্ষাকে উসকে দেয় প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তন এবং অন্যান্য জীবের আসঙ্গ লীপ্সার
উপকরণ। তাই বসন্তের ফুল ফোটানো খেলা, বর্ষার মেঘ-বৃষ্টির আনাগোণা, ময়ূরের
নৃত্যের ছন্দ, কোকিলের মধুস্রাবী আহবান ইত্যাদিতে নরনারী অনুভবে জেগে ওঠে তার
যৌবনের কামনা। সৃজনশীলতার বিচারে মানুষ জীবজগতের শ্রেষ্ট জীব। তাই জীবজগতের
অন্যান্য প্রজাতির তুলায় অনন্য। তার যৌন-চেতনায় সৃষ্টি হয় মিলন-বিরহ,
মান-অভিমান, ঈর্ষা, পরকীয়া, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি। নন্দন তত্ত্বের ভাষা এই সবের
সূত্রে মানব মনে যে রসের সঞ্চার হয়, তাই হলো শৃঙ্গার রস।
সৃজনশীল মানুষ যখন, তার কল্প-বাস্তবতায় যখন নান্দিক বোধের দ্বারা কোনো কিছু
সৃষ্টি করে, তখন তা হয়ে ওঠে শিল্পকর্ম। মানুষের এই সৃজনশীলতার তাড়ানায় রচিত হয়,
কাব্য, সঙ্গীত, চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য ইত্যাদি।
যদিও বসন্ত যৌবনের ঋতু হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলা কাব্য ও
সঙ্গীতে শৃঙ্গার রসের আধিক্য লক্ষা করা যায় উভয় ঋতুতেই। বৈষ্ণব-সঙ্গীতে
রাধাকৃষ্ণের লীলায় রয়েছে এই দুই ঋতুর বব্যাপক প্রভাব। এই ঋতুকে অবলম্বন
করে বসন্তে হয় হোরি উৎসব, বর্ষায় হয় কাজরি। উভয় উৎসবেও রয়েছে
রাধাকৃষ্ণের ঝুলনোৎসব।
নজরুলের গানে বৈষ্ণবসঙ্গীতের বাইরেও রয়েছে বসন্ত ও বর্ষার আবহে এমন বহু শৃঙ্গার রসের গান রয়েছে, যাতে
গভীরভাবে মিশে আছে প্রকৃতি ও প্রেম। কোনো কোনো গানে প্রকৃতি অনুষঙ্গ হিসেবে
পাওয়া যায় প্রেম, কখনো পাওয়া প্রেমের অনুষঙ্গ হিসেবে প্রকৃতি। আবার কোনো কোনো
গানে প্রকৃতি ও প্রেম পরস্পরের অনুষঙ্গ হিসেবে এতাটা গভীরভাবে মিশে থাকে যে,
সেগুলোকে পৃথকভাবে শনাক্ত করাটা অসম্ভব হয়ে ওঠে।
এ সকল বিচারে যে সকল গানকে
বিষয়াঙ্গের বিচারে 'প্রকৃতি ও প্রেম' পর্যায়ের বিবেচনা করা যায়, নিচে তার তালিকা
তুলে ধরা হলো।
প্রকৃতি (ঋতু) ও প্রেম
- জাগতিক
- ওরে সাদা মেঘ ! তোর পাখা নাই
[তথ্য]
- চঞ্চল মলয় হাওয়া শোন শোন [তথ্য]
- চাঁদিনী রাতে মল্লিকা লতা [তথ্য]
-
ঘোমটা-পরা কাদের ঘরের বৌ [তথ্য]
- সাধারণ
- অরুণ-রাঙা গোলাপ কলি [তথ্য]
- বহে বনে সমীরণ ফুল জাগানো [তথ্য]
- শুক্লা জোছনা তিথি [তথ্য]
- গ্রীষ্ম:
- হংস-মিথুন ওগো যাও ক'য়ে যাও [তথ্য]
- বর্ষা
- অঝোর ধারায় বর্ষা ঝরে [তথ্য]
- আজ শ্রাবণের লঘু মেঘের সাথে [তথ্য]
- এসো হে সজল শ্যাম-ঘন দেয়া [তথ্য]
- কার ঝর ঝর বর্ষণ বাণী ( ঝর ঝর বর্ষণ বাণী) [তথ্য]
- কেন করুণ সুরে হৃদয়পুরে বাজিছে বাঁশরি [তথ্য]
- গগনে সঘন চমকিছে দামিনী [তথ্য]
- ঘন গগন ঘিরিল ঘন ঘোর [তথ্য]
- ঘন দেয়া গরজায় গো [তথ্য]
- ঝর ঝর ঝরে শাওন ধারা [তথ্য]
- ঝর ঝর বারি ঝরে অম্বর ব্যাপিয়া [তথ্য]
- ঝরে ঝর ঝর কোন্ গভীর গোপন [তথ্য]
- নিশি ভোরে অশান্ত ধারায় [তথ্য]
- নিশি-রাতে রিম্ ঝিম্ ঝিম্ বাদল-নূপুর [তথ্য]
- বরষা ঐ এলো বরষা [তথ্য]
- মেঘ-মেদুর বরষায় কোথা তুমি [তথ্য]
- রিম্ ঝিম্ রিম ঝিম্ বরষা এলো [তথ্য]
- শ্রাবণ রাতের আঁধারে নিরালা [তথ্য]
- হংস-মিথুন ওগো যাও ক'য়ে যাও
[তথ্য]
শরৎ
- আজ শেফালির গায়ে হলুদ [তথ্য]
বসন্ত
- আসে বসন্ত ফুলবনে [তথ্য]
- কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া [তথ্য]
- চৈতালি চাঁদিনী রাতে [তথ্য]
- দিল দোলা ওগো দিল দোলা [তথ্য]
- পিউ পিউ পিউ বোলে পাপিয়া [তথ্য]
- পিউ পিউ বোলে পাপিয়া [তথ্য]
- বনে বনে জাগে কি আকুল হরষণ [তথ্য]
- বনে বনে দোলা লাগে [তথ্য]
প্রকৃতি (মহাজাগতিক) ও প্রেম
এই জাতীয় গানে ঋতুভাবনা নেই। কিন্তু মহাজাগতিক উপকরণ হিসেবে চাঁদকে পাওয়া যায়।
চাঁদ, জ্যোৎস্না ইত্যাদির সাথে মানবের রোমাঞ্চকর অনুভব জড়িয়ে আছে। এই অনুভবের
প্রকাশ দেখা যায়- নজরুলের কিছু গানে।
- একাদশীর চাঁদ রে ওই [তথ্য]
- কলঙ্ক আর জোছনায় মেশা [তথ্য]
প্রকৃতি ও প্রেম জাগতিক
- আজি অলি ব্যাকুল ওই বকুলের ফুলে [তথ্য]
- নতুন খেজুর রস এনেছি [তথ্য]
- ক্ষ্যাপা হাওয়াতে মোর আঁচল উড়ে যায় [তথ্য]
প্রকৃতি ও উদ্দীপনা
- ঝড় এসেছে ঝড় এসেছে [তথ্য]
- পদ্মা-মেঘনা-বুড়িগঙ্গা [তথ্য]
প্রকৃতি ও ভক্তি
- আমারে চোখ ইশারায় [তথ্য]
- আসে বসন্ত ফুলবনে [তথ্য]
- মেঘ-মেদুর গগনে কাঁদে হুতাশ পবন [তথ্য]
প্রকৃতি ও সঙ্গীত
বেতারে সম্প্রচারিত নজরিল-সৃষ্ট রাগ 'নবরাগ মালিকা', নজরুলের সময়ে প্রায়
বিলুপ্ত রাগভিত্তিক 'হারমাণি', প্রহরান্তরে রাগে প্রবেশের সেঁতুবন্ধ হিসেবে
কড়িমধ্যম ব্যবহারে সূত্রে রচিত 'যামযোজনায় কড়িম মধ্যম' রাগাঙ্গভিত্তিক গীতিআলেখ্য 'ষটভৈরব
ও সারঙ্গরঙ্গ' মেল বা ঠাট ভিত্তিক গীতিআলেখ্য 'হরপ্রিয়া' খেয়ালাঙ্গের গানের
বন্দিশসমূহ- সুরাঙ্গের বিচারে এ সবই রাগাশ্রী। এসকল গানের বাণীতে পাওয়া যায়, প্রকৃতি,
প্রেম, ভক্তির অভিব্যক্তি। প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত এই ধারার গানে পাওয়া যায়
সুরও বাণী অপূর্ব মেলবন্ধন। যেন রাগের ঋতুকালীন
সুর-চিত্রের সাথে বাণী-চিত্রের মিলন।
- উদার প্রাতে কে উদাসী এলে [তথ্য]
- চপল আঁখির ভাষায়, হে মীণাক্ষী [তথ্য]
- দোলন চাঁপা বনে দোলে [তথ্য]
- ধূলি-পিঙ্গল জটাজুট মেলে [তথ্য]
- পিউ পিউ বিরহী পাপিয়া বোলে [তথ্য]
- ভবনে আসিল অতিথি সুদূর [তথ্য]
- রুম্ ঝুম্ রুমু ঝুম্ কে বাজায় জল ঝুমঝুমি [তথ্য]
- শোন্ ও সন্ধ্যামালতী [তথ্য]
- হাসে আকাশে শুকতারা হাসে [তথ্য]
প্রকৃতি প্রেম ও সঙ্গীত
- কেন করুণ সুরে হৃদয়পুরে বাজিছে বাঁশরি [তথ্য]
- চৈতালি চাঁদিনী রাতে [তথ্য]
প্রকৃতি ও মরমী
- অগ্নিগিরি ঘুমন্ত উঠিল জাগিয়া [ [তথ্য]
-
কঠিন ধরায় ফোটাতে ফসল-ফুল [তথ্য]
প্রকৃতি: নাট্যগীতি
- এই আমাদের বাংলাদেশ [তথ্য]
আজকে দোলের হিন্দোলায় [নজরুল
ইসলাম] [তথ্য]
আজি দোল-পূর্ণিমাতে দুল্বি তোরা [নজরুল
ইসলাম] [তথ্য]